বিষাক্ত সিরাপে ইন্দোনেশিয়ায় শিশু মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১৩৩
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০২২, ০২:৫৮
ইন্দোনেশিয়ায় বিষাক্ত সিরাপ খেয়ে গুরুতর কিডনি জটিলতায় ভুগে (একেআই) শিশুমৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১৩৩ এ দাঁড়িয়েছে। এর আগে বুধবার (১৯ অক্টোবর) পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিল ৯৯। শুক্রবার (২১ অক্টোবর) দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী বুদি গুনাদি সাদিকিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। খবর রয়টার্সের।
সাদিকিন বলেন, ২২টি প্রদেশে শনাক্ত হওয়া ২৪১টি শিশুর মধ্যে মৃতের সংখ্যা ১৩৩, যাদের অধিকাংশের বয়স ছিল পাঁচ বছরের নিচে।
এরআগে, পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়াতে ভারতীয় একটি কোম্পানির সিরাপ খেয়ে ৭০ শিশুর মৃত্যু হয়। মূলত প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে ওই শিশুদের কিডনিতে জটিলতা দেখা দেয়। তবে এ ওষুধ আর ইন্দোনেশিয়ার সিরাপগুলো এক নয় বলে দাবি করেছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) জাকার্তায় এক সংবাদ সম্মেলনে সাদিকিন বলেছিলেন, তদন্তে কিছু কিছু সিরাপে অতিমাত্রায় ইথিলিন গ্লাইকল, ডাই-ইথিলিন গ্লাইকলের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বেশি মাত্রায় রাসায়নিক মেশোনো ওইসব সিরাপ খেয়েই শিশুদের কিডনিতে জটিলতা দেখা দেয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তদন্তে জানা গেছে, দেশ দুটিতে শিশুদের খাওয়ানো চারটি কাশির সিরাপে ইথিলিন গ্লাইকল, ডাই-ইথিলিন গ্লাইকল নামের দুটি রাসায়নিক উপাদানের বিপজ্জনক মাত্রার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
সাধারণত শিল্প কলকারখানায় বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনে এ দুটি রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়। দামে সস্তা হওয়ায় অনেক ওষুধ কোম্পানি সিরাপ তৈরিতে খাবার উপযোগী গ্লিসারিনের পরিবর্তে এ দুই উপাদান ব্যবহার করে।
কোনো তরলে স্বল্পমাত্রায় ইথিলিন গ্লাইকোল ও ডাই-ইথিলিন গ্লাইকোল ব্যবহার করা হলে মানবদেহে তেমন কোনো গুরুতর প্রভাব পড়ে না, কিন্তু সে মাত্রা অতিক্রম করলে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা থাকে।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শিশুদের কিডনি জটিলতা শুরু হয়, যা জটিল আকার ধারণ করে আগস্টে। গত সপ্তাহ থেকে এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (১৯ অক্টোবর) সব ধরনের সিরাপ ও তরল ওষুধ বিক্রি সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করে ইন্দোনেশিয়া সরকার।
সম্প্রতি পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়াতেও কিডনি বিকল হয়ে ৭০ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ভারতীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি মেইডেন ফার্মাসিটিক্যালসের তৈরি চারটি সর্দিকাশির সিরাপ দায়ী এসব মৃত্যুর জন্য।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ওই তদন্তে আরও জানা গেছে, ওই চারটি কফ সিরাপে এথিলিন গ্লাইকল ও ডায়াথিলিন গ্লাইকল নামের দুটি রাসায়নিক উপাদানের বিপজ্জনক মাত্রার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বুদি গুনাদি সাদিকিন জানান, গাম্বিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় শিশুদের কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুর কারণ একই; অর্থাৎ ঠাণ্ডাসর্দি ও কাশির সিরাপে এথিলিন গ্লাইকোল, ডায়াথিলিন গ্লাইকলসহ ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি।
তবে ইন্দোনেশিয়ায় যে সিরাপগুলোতে এসব উপাদান পাওয়া গেছে—সেগুলোর কোনোটিই বাইরে থেকে আমদানি করা হয়নি, স্থানীয় ও দেশীয় বিভিন্ন কোম্পানির প্রস্তুত করেছে এসব সিরাপ।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।