ভারতীয় নাকি পাকিস্তানি!
ঋষি আসলেই কোন দেশের বংশোদ্ভূত!
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০২২, ০৯:৩৭
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নিয়েছেন ঋষি সুনাক। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। ঋষি সুনাকের নির্বাচন ব্রিটেনের রাজনীতিতে একটি মোড় ঘোরানো ঘটনা।
৪২ বছর বয়সী ঋষি যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে ৫৭তম প্রধানমন্ত্রী। গত দুই শতকের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী প্রধানমন্ত্রীও তিনি। তাছাড়া প্রথম সাদা চামড়া বিহীন ও প্রথম এশিয়ান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার তথ্যমতে, প্রথম অশ্বেতাঙ্গ, প্রথম এশীয় বংশোদ্ভূত এবং প্রথম হিন্দু ধর্মাবলম্বী নেতা হিসেবে যুক্তরাজ্য শাসন করবেন ঋষি। এছাড়া, বিগত ২০০ বছরের মধ্যে দেশটির কনিষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রীও হয়েছেন ঋষি।
১৮১২ সালের পর থেকে যুক্তরাজ্যের কনিষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে দ্রুততম সময়ে প্রধানমন্ত্রীর পদে পৌঁছানোর রেকর্ডও গড়েছেন তিনি। এজন্য ঋষি সময় নিয়েছেন মাত্র সাত বছর।
এছাড়া, রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছ থেকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ পাওয়া প্রথম ব্যক্তিও তিনি। অর্থাৎ, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ পরবর্তী যুগে শপথ নেওয়া প্রথম ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হলেন ঋষি সুনাক। চলতি বছরে এ নিয়ে তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী পেলো যুক্তরাজ্য।
ঋষি সুনাকের জন্ম ১৯৮০ সালে দক্ষিণ-পূর্ব যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটনে। তার বাবা যশবীর সুনাক জন্মগ্রহণ করেন কেনিয়ায়। তার মা ঊষা সুনাক জন্মগ্রহণ করেন তৎকালীন তাঙ্গানিকায়, যা বর্তমানে তানজানিয়ার অংশ। তিন ভাই-বোনের মধ্যে ঋষি সুনাকই সবার বড়।
উইকিপিডিয়া বলছে, ঋষির দাদা-দাদি অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাবে জন্মগ্রহণ করেন ও ১৯৬০ এর দশকে সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে পূর্ব আফ্রিকা থেকে যুক্তরাজ্যে চলে আসেন। যশবীর সুনাক যুক্তরাজ্যে একজন জিপি (জেনারেল প্র্যাকটিশনার) হিসেবে ও ঊষা সুনাক ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ করতেন।
জানা গেছে, ঋষি সুনাকের পূর্বপুরুষরা যখন ভারত ছেড়ে এসেছিলেন, তখন তাদের বাড়ি ছিল অবিভক্ত ভারতের গুজরানওয়ালা এলাকায়। দেশভাগের সময় জায়গাটি পড়ে পাকিস্তানের অংশে, তাদের পাঞ্জাব প্রদেশের অধীনে। ফলে যদি কখনো তার পূর্বপুরুষের বাড়ি যেতে হয়, তাহলে তাকে যেতে হবে পাকিস্তানে, ভারতে নয়।
এদিকে সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ গবেষণা বিষয়ের এক অধ্যাপক টুইটারে দাবি করে লিখেছেন: ‘ঋষি সুনাকের দাদা-দাদি পাকিস্তানের গুজরানওয়ালা, ঋষির পিতামাতা নাইরোবি, কেনিয়ার। ঋষির জন্ম যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন শহরে।’ ফলে ঋষি আসলেই কোন দেশের বংশোদ্ভূত তা নিয়ে রয়ে গেছে কিছুটা ধোঁয়াশা।
ঋষি শিক্ষাজীবন শুরু করেন যুক্তরাজ্যের রমসি, হ্যাম্পশায়ারের স্ট্রউড স্কুলে। পরে উইনচেস্টার কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখা করেন। অক্সফোর্ডের লিঙ্কন কলেজে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন ঋষি। ২০০১ সালে তিনি প্রথম স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ফুলব্রাইট স্কলার হিসেবে এমবিএ করেন।
ঋষি সুনাক ভারতের বিখ্যাত শিল্পপতি ও ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা এন আর নারায়ণ মূর্তির জামাতা। নারায়ণ মূর্তির মেয়ে অক্ষতার সঙ্গে তার পরিচয় স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই প্রণয় ও পরে বিয়ে। তাদের দুই সন্তান রয়েছে।
২০১৫ সালে ইয়র্কশায়ারের রিচমন্ড আসন থেকে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন ঋষি সুনাক। থেরেসা মে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালে বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী হলে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান ঋষি।
তবে বাজেট বিতর্কের জেরে গত ৫ জুলাই পদত্যাগ করেন তিনি। তার পদত্যাগে বরিস জনসন সরকারের ওপর চাপ আরও বেড়ে যায়। যার জেরে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
এরপর বরিসের উত্তরসূরী হওয়ার প্রতিযোগিতায় নাম লেখান ঋষি। তবে শেষপর্যন্ত লিজ ট্রাসের কাছে হেরে যান তিনি। কিন্তু এবার আর ঋষির পথে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি। তার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বরিস জনসন ও পেনি মর্ডান্ট প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হলেন এশীয় বংশোদ্ভূত এ নেতা।
ঋষি সুনাক ২০১৯ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি সৌভাগ্যবান ছিলেন যে বড় হওয়ার সময় তাকে খুব একটা বর্ণবাদী আচরণের মুখোমুখি হতে হয়নি, কিন্তু একটি ঘটনার কথা তিনি উল্লেখ করেন যেটি তিনি কখনই ভুলতে পারেননি।
ছোট ভাই ও বোনেকে নিয়ে একদিন বেরিয়েছি। অল্প বয়স তখন, বছর ১৫ হবে। আমরা একটি ফাস্ট ফুড রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলাম। কাছেই কিছু লোক বসেছিল। সেই প্রথম আমাদের লক্ষ্য করে তারা 'পি' শব্দটি ছুড়ে দিয়েছিল।
ওই শব্দ সেদিন আমার গায়ে ভীষণ লেগেছিল। আমি এখনও তা ভুলিনি।" তিনি বলেন, "এখনকার ব্রিটেনে এমনটা ঘটবে আমি বিশ্বাস করিনা।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।