লাশের গন্ধ আর কান্নায় ভারি তুরস্ক-সিরিয়ার বাতাস
ভূমিকম্পে ভবন ধসের ঘটনায় ১১৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, ১০:২৬
বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ভবন ধসের পেছনে যাদের দায় আছে বলে সন্দেহ হবে তাদের সবাইকে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তুরস্ক। এরইমধ্যে ১১৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তুরস্কের পুলিশ এই ১১৩ জনের মধ্যে ঠিকাদারসহ অন্তত ১২ জনকে হেফাজতে নিয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতে বলেছেন, গত সোমবারের ভূমিকম্পে ধসে যাওয়া ১০ প্রদেশের কয়েক হাজার ভবনের মধ্যে কিছু ভবন ধসের জন্য এখন পর্যন্ত ১৩১ সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আঙ্কারায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কেন্দ্রে সাংবাদিকদের তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, 'সন্দেহভাজন ১৩১ জনের মধ্যে ১১৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা এ বিষয়টিকে সূক্ষ্মভাবে অনুসরণ করব। বিশেষ করে যে ভবনগুলো বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং যে ভবনগুলোতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর ক্ষেত্রে।' তিনি আরও বলেন, 'বিচার মন্ত্রণালয় মৃত্যু ও আহত হওয়ার ঘটনা তদন্তের জন্য ভূমিকম্প হওয়া অঞ্চলের প্রদেশগুলোতে ''ভূমিকম্প অপরাধ তদন্ত ব্যুরো'' গঠন করেছে।'
সিরিয়া এবং তুরস্কের কিছু অংশে ভূমিকম্প আঘাত হানার ৬ দিন পর উদ্ধারকারীরা এখনও ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জীবিতদের খুঁজছে। ইতোমধ্যে মৃতের সংখ্যা ২৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে এবং আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) তুরস্কে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ২৪ হাজার ৬১৭ এ পৌঁছেছে এবং সিরিয়ায় ৪ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছেন। খবর বিবিসির।
তবে তুরস্ক সরকারের এই উদ্যোগকে অনেকে ভূমিকম্পের ভয়াবহ বিপর্যয়ের সামগ্রিক দায় আড়ালের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখবে। কারণ কয়েক বছর ধরেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে আসছিলেন, তুরস্কের অনেক নতুন ভবন দুর্নীতি ও সরকারের নীতির কারণে নিরাপদ নয়।
এদিকে তুরস্কের কাছে বিশ্বের সবচেয়ে কার্যকর এবং দক্ষ তল্লাশি ও উদ্ধারকারী দল থাকা সত্ত্বেও সরকার যতো দ্রুত অভিযান পরিচালনা করতে চেয়েছিল, তা সম্ভব হয়নি বলে স্বীকার করেছেন রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির জন্য ভাগ্যকে দোষারোপ করে তিনি বলেন, ‘এটা নিয়তির পরিকল্পনার একটা অংশমাত্র। এ ধরনের ঘটনা সসময়ই ঘটছে।’
গত সোমবার তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপের (ইউএসজিএস) তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটি গাজিয়ানটেপ প্রদেশের নুরদাগি এলাকা থেকে ২৩ কিলোমিটার পূর্বে আঘাত হানে। এর গভীরতা ছিল ২৪ দশমিক ১ কিলোমিটার। তুরস্কের পরিবেশমন্ত্রী মুরাত কুরুম বলেছেন, ভূমিকম্পে এই অঞ্চলে ২৪ হাজার ৯২১টি ভবন ধসে পড়েছে বা ভূমিকম্পে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।