কে হচ্ছেন ভারতের বিরোধীদলীয় নেতা?

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৮ জুন ২০২৪, ১৮:৫৯

ছবি: সংগৃহীত

রাহুলই কী লোকসভায় বিরোধীদলীয় নেতা হচ্ছেন, এ প্রশ্ন বিশ্বজুড়ে। ২০১৯ সালের কথা, লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়েছিল। তখন ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে দলটির সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান রাহুল গান্ধী। কিন্তু সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ঘুরে দাঁড়ানোর বড় কৃতিত্ব রাহুলের বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাই কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধীকে বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে চান দলটির অনেক নেতা।  

ভারতের লোকসভায় রাহুল গান্ধীকেই বিরোধীদলীয় নেতা করার প্রস্তাব করেছে তার দল সর্বভারতী কংগ্রেস। আজ শনিবার কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটিতে এ প্রস্তাব পাস হয়েছে।

 
হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়, সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে দলের ৯৯টি আসন জয়ের জন্য রাহুল গান্ধীকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন কংগ্রেস নেতারা। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মাত্র ৫২টি আসন জিতেছিল কংগ্রেস। এবার সেটা একেবারে ৯৯টি পৌঁছানোয় রাহুলের নেতৃত্বের প্রশংসা করছেন দলীয় নেতারা। এ জন্য রাহুল গান্ধীকে বিরোধীদলীয় নেতা করার প্রস্তাব করেন কংগ্রেস নেতারা।

কংগ্রেস নেতা মানিকম ঠাকুর এর আগে বলেছিলেন, ‘কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে আমরা ২০২৪ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস দলের পারফরম্যান্স পর্যালোচনা করতে যাচ্ছি। কংগ্রেস পার্টি সিপিপির চেয়ারপারসন নির্বাচন করবে। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা হিসেবে আমরা সবাই মনে করি রাহুল গান্ধীকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত। এই দায়িত্ব গ্রহণ করলে তিনি ভারতের ২৩৪ জন সংসদ সদস্যের (এমপি) নেতৃত্ব দেবেন ‘

তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই জানি যে বিজেপি গত লোকসভায় একক বৃহত্তম দল হিসাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। চন্দ্রবাবু নাইডু এবং নীতীশ কুমারের ওপর তাদের নির্ভরতাই সরকার গঠনের একমাত্র উপায়।’

কংগ্রেস নেতা মানিকম ঠাকুর আগেই বলেছিলেন, ‘ভারত জোটের নেতারা অপেক্ষা করার এবং দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং আমরা সঠিক সময়ে একটি সিদ্ধান্ত নেব।’

এএনআই জানিয়েছে, কংগ্রেস সংসদীয় দলের চেয়ারপারসন পদে ফের নির্বাচিত হতে চলেছেন সোনিয়া গান্ধী। ওয়ানাড় ও রায়বরেলি থেকে লোকসভা ভোটে জয়ী রাহুল গান্ধী তার মাকে এই পদ গ্রহণ করার জন্য আওয়াজ তুলবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সকালের দিকে কংগ্রেসের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য মানিকম ঠাকুর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে রাহুলকে বিরোধীদলীয় নেতা করার বিষয়ে ব্যক্তিগত মত দিয়েছেন।

কংগ্রেসের রাজ্যসভার সদস্য বিবেক টাংখাও একই ধরনের মনোভাব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘রাহুল প্রচারণায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি ছিলেন আমাদের নির্বাচনী প্রচারের মুখ। লোকসভার সংসদীয় পার্টির নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য তিনিই দায়বদ্ধ। তবে হ্যাঁ, রাহুল গান্ধী নিজের বিষয়ে সব সিদ্ধান্ত একা নিতে পারেন না। সুতরাং সিদ্ধান্ত নিতে হবে দলীয় নেতা ও সংসদ সদস্যদের। আমার আশা, একটি সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হবে।’

শুধু কংগ্রেসের নেতারাই নন, বরং ইন্ডিয়া জোটের গুরুত্বপূর্ণ শরিক শিবসেনার সংসদ সদস্য সঞ্জয় রাউতও রাহুলকে লোকসভায় বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে চান। তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘রাহুল গান্ধী নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য প্রস্তুত থাকলে আমরা আপত্তি করব কেন? তিনি নিজেকে একজন জাতীয় নেতা হিসেবে একাধিকবার প্রমাণ করেছেন। তিনি অন্যতম জনপ্রিয় নেতা। আমরা সবাই তাঁকে চাই। আমরা তাঁকে ভালোবাসি। তাঁকে (পার্লামেন্টে বিরোধীদলীয় নেতা করা নিয়ে) জোটে কোনো আপত্তি ও মতানৈক্য নেই।’

৫৩ বছর বয়সী রাহুল গান্ধী ২০০৪ সালে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন। এর পর থেকে তিনি কখনো কোনো সাংবিধানিক পদ গ্রহণ করেননি। এমনকি তাঁর দল ক্ষমতায় থাকার সময়ও নয়। গত বছর রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পদবি নিয়ে ব্যঙ্গ করার অভিযোগ করে বিজেপি। এরপর এক মানহানির মামলায় তাঁর লোকসভার সদস্যপদ বাতিল করা হয়। তবে পরবর্তীকালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তিনি তাঁর সদস্যপদ ফিরে পান।

ভারতের ৫৪৩ আসনের এবারের লোকসভার নির্বাচনে কোনো দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ পেয়েছে ২৯৩ আসন। এর মধ্যে বিজেপির আসন ২৪০। সরকার গঠনের জন্য দরকার ২৭২ আসন।

কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট পেয়েছে ২৩৩ আসন। বিজেপিকে সরকার গঠন করতে হলে প্রধান দুই জোট শরিক বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জনতা দল-ইউনাইটেড (জেডি-ইউ) ও চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) সমর্থন প্রয়োজন।

 

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top