ল্যানসেটের গবেষণা:
গাজায় ৫৫ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:৪৯

গাজায় ইসরায়েলের সাহায্য প্রবেশে কঠোর নিষেধাজ্ঞা শিশুদের তীব্র অপুষ্টির প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করেছে আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেট। গবেষণায় দেখা গেছে, ছয় বছরের কম বয়সী প্রায় ৫৫ হাজার শিশু বর্তমানে প্রাণঘাতী পর্যায়ের অপুষ্টিতে ভুগছে—যা এখন পর্যন্ত ধারণার চেয়েও ভয়াবহ।
বুধবার প্রকাশিত এই গবেষণাটি জাতিসংঘের ফিলিস্তিন শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ ও কর্ম সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। এতে দুই বছরের সংঘাতকালীন মাসিক বিশ্লেষণ তুলে ধরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের খাদ্য ও সহায়তা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে শিশুদের অপুষ্টির সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
গবেষণায় দেখা যায়, দক্ষিণ গাজার রাফায় ইসরায়েলের ব্যাপক সামরিক হামলার পর শিশুদের অপুষ্টির হার চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে, ২০২৫ সালের মার্চ থেকে আগস্টের মধ্যে গাজা সিটিতে এই হার পাঁচগুণেরও বেশি বেড়ে প্রায় ৩০ শতাংশে পৌঁছায়।
ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার বলেন,
“গাজা সিটিতে প্রচুর আতঙ্ক ও ক্ষুধার্ত মানুষ রয়েছে। সেখানে হতাশার মাত্রা বর্ণনা করা কঠিন। গর্ভবতী নারীরা প্রতিদিন না খেয়ে আছেন।”
কলাম্বিয়া ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদ্বয় পল ওয়াইজ ও জুলফিকার ভুট্ট ল্যানসেটে মন্তব্যে বলেন,
“গাজায় শিশুদের মধ্যে দেখা দেওয়া অপুষ্টি শুধু তাৎক্ষণিক নয়, এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য ও বিকাশে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।”
গবেষণায় আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত ২ লাখ ২০ হাজার শিশুর বাহুর পরিধি পরিমাপ করে দেখা গেছে—২০২৪ সালের শুরুতে ক্ষয়ক্ষতির হার ছিল ৫ শতাংশ, যা বছরের শেষে দ্বিগুণ হয়ে যায়।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তারা পর্যাপ্ত খাবার প্রবেশ করতে দিয়েছে এবং মানবিক সংস্থাগুলো যথাযথভাবে কাজ করছে না। তবে গবেষকরা বলছেন,
“ইসরায়েলের আরোপিত অবরোধই গাজা উপত্যকার মানবিক বিপর্যয়ের মূল কারণ।”
এদিকে, গাজায় সাহায্য বিতরণ নিয়ন্ত্রণকারী ইসরায়েলি সংস্থা কোগাট হামাসকে অভিযুক্ত করেছে সাহায্য চুরি ও রকেট হামলার জন্য। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো স্বাধীন প্রমাণ উপস্থাপন করা যায়নি।
গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে এমন এক সময়, যখন মিশরের শার্ম আল-শেখে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে ২১ দফা শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত এ পরিকল্পনায় যুদ্ধবিরতি, জিম্মি ফেরত এবং জাতিসংঘ ও রেড ক্রিসেন্টের মাধ্যমে মানবিক সাহায্য বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হয়েছে।
গবেষণার প্রধান লেখক ও ইউএনআরডব্লিউএ স্বাস্থ্য পরিচালক ড. আকিহিরো সেইতা বলেন,
“যদি যুদ্ধবিরতির অবসান না ঘটে এবং আন্তর্জাতিক মানবিক পুষ্টি ও চিকিৎসা সেবা অব্যাহত না থাকে, তাহলে আরও বহু শিশু অপুষ্টিতে মারা যাবে।”
সহ-গবেষক ড. মাসাকো হোরিনো যোগ করেন,
“দুই বছরের যুদ্ধ এবং সাহায্যে কঠোর বিধিনিষেধের কারণে হাজার হাজার শিশু এখন প্রতিরোধযোগ্য তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে।”
গবেষণার সারসংক্ষেপ
বিষয় | পরিসংখ্যান |
---|---|
গবেষণার সময়কাল | জানুয়ারি ২০২৪ - আগস্ট ২০২৫ |
শিশুদের বয়স | ৬ মাস - ৫ বছর |
পরিমাপ করা শিশু | ২,২০,০০০ |
তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত | প্রায় ৫৫,০০০ |
গুরুতরভাবে অসুস্থ | ১২,৮০০ |
ক্ষয়ক্ষতির হার বৃদ্ধি | ৫% → ১৬% (২০২৪–২০২৫) |
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।