ইয়েমেনের যুদ্ধে ৩ লাখ ৭৭ হাজার মানুষকে হত্য করেছে সৌদি

আহসান সাকিব হাসান | প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:৪৯

ছবি: সংগৃহীত

ইয়েমেন যুদ্ধের সূচনা হয় ২০১১ সালের আরব বসন্তের পর। তখন দেশটির দীর্ঘদিনের শাসক প্রেসিডেন্ট আলি আব্দুল্লাহ সালেহ ক্ষমতা হারান। তাঁর প্রতিনিধি হন ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দ-রাব্বু মানসুর হাদি। তিনি একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন।

কিন্তু দুর্নীতি, বেকারত্ব এবং জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। এই সুযোগে শুরু হয় হুথি আন্দোলন — একটি শিয়া জাইদি গোষ্ঠীভিত্তিক রাজনৈতিক-সামরিক শক্তি — ২০১৪ সালে রাজধানী সানা দখল করে নেয়। সাবেক প্রেসিডেন্ট সালেহের সহায়তায় তারা হাদিকে গৃহবন্দী করে।

এরপর ২০১৫ সালে হাদিকে পুনঃস্থাপন করার অজুহাতে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতৃত্বে ৯টি আরব দেশের একটি সামরিক জোট গঠিত হয়। এই জোটকে সামরিক ও অস্ত্র সহায়তা দেয় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডা।

সৌদি আরব এই যুদ্ধে ইরানকে হুথিদের মদদদাতা হিসেবে তুলে ধরে ধর্মীয় বিভাজনের রূপ দেয়।

সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেনের আকাশ ও সমুদ্রপথে কঠোর অবরোধ আরোপ করে। এতে খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হয়। ২০২১ সালের জাতিসংঘের তথ্য মতে, এই যুদ্ধে ৩,৭৭,০০০ মানুষ নিহত হয় এবং ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখে পড়ে।

বিশেষজ্ঞ ব্রুস রিডেল একে বলেছেন “সৌদিদের আক্রমণাত্মক সামরিক অভিযান যা সাধারণ মানুষকে হত্যা করে।

২০১৬ সাল থেকে সানা বিমানবন্দর বন্ধ থাকায় লক্ষাধিক মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে বহু মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে, বিশেষ করে ক্যান্সার বা দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্তরা।

সৌদি আরব ২০২১ সালে ইয়েমেনের প্রয়োজনীয় জ্বালানির মাত্র ৩ শতাংশ সরবরাহ করতে দিয়েছে। জ্বালানি না থাকায় খাদ্য ও ওষুধ দেশের অভ্যন্তরে পরিবহন ব্যাহত হয়। হাসপাতালও চালু রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।

অন্যদিকে ২০১৫ সালে ওবামা প্রশাসন সৌদি জোটকে সামরিক সহায়তা দেয়। এতে ছিল বিমানে জ্বালানি সরবরাহ, অস্ত্র বিক্রি, এবং নিদিষ্ট এলাকায় ত্রান সহযোগিতা। ২০২১ সালে বাইডেন প্রশাসন ঘোষণা দেয়, যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণাত্মক সহায়তা বন্ধ করবে। কিন্তু আজও যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ বন্ধ করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।

হুথিরা ইরান সমর্থিত হলেও ইরানের সহায়তা অনেকটাই সীমিত। বহু অস্ত্র স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে। যুদ্ধের আগে হুথিদের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক এতটা ঘনিষ্ঠ ছিল না যতটা এখন রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধ ও অবরোধ বন্ধ করাই হুথিদের হামলা বন্ধ করার সেরা উপায়। কারণ হুথিরা এখন ইয়েমেনের ৮০% জনগণ বসতি স্থাপন এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। এই যুদ্ধের ফলে তারা আরও শক্তিশালী হয়েছে।

২০১৯ সালে কংগ্রেস যুদ্ধ বন্ধে একটি War Powers Resolution পাস করেছিল, যা বর্তমানের প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্প ভেটো দেন। এরপরে কিছু অগ্রগতি হলেও যুদ্ধ থামেনি।

বর্তমান কংগ্রেস সদস্যরাও প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে চাপ দিচ্ছেন যুদ্ধ ও অবরোধ বন্ধ করতে এবং মানবিক সহায়তা প্রবাহ নিশ্চিত করতে।

"ইয়েমেন যুদ্ধ শুধু মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির লড়াই নয়, এটি একটি মানবিক সংকট। বিশ্ব সম্প্রদায় ও শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর উচিত এই সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top