পশ্চিমবঙ্গে ‘জাতীয় সংগীত’ বিতর্কে উত্তপ্ত রাজনীতি: ঠাকুরবাড়ি থেকে পথে নামছে তৃণমূল
নিউজফ্ল্যাশ ডেস্ক | প্রকাশিত: ৮ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৩৯
পশ্চিমবঙ্গে নতুন রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) ও বিজেপির মধ্যে। এবার বিষয়টি রাজনীতির গণ্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে জাতীয় সংগীত নিয়ে বিতর্কে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘জন গণ মন’ বনাম বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বন্দে মাতরম’—এই দুই গানকে ঘিরেই তীব্র রাজনৈতিক তর্ক শুরু হয়েছে দেশজুড়ে।
বিতর্কের সূত্রপাত কর্ণাটকের বিজেপি নেতা বিষ্ণেশ্বর হেগড়ে কাগেরির বক্তব্যকে ঘিরে। তিনি বলেন, “বন্দে মাতরমই জাতীয় সংগীত হওয়া উচিত ছিল। জন গণ মন মূলত ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের স্বাগত জানাতে লেখা হয়েছিল।”
এই মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় তৃণমূল কংগ্রেস। দলটির অভিযোগ, এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি চরম অপমান। যদিও বিজেপি নেতা পরে মন্তব্য প্রত্যাহার করে বলেন, তিনি “অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক দীর্ঘায়িত করতে চান না।”
তবে ততক্ষণে রাজ্যের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি ইচ্ছাকৃতভাবে রবীন্দ্রনাথ ও বঙ্কিমচন্দ্রকে মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে। অপরদিকে, বিজেপির দাবি—তৃণমূল সরকার বিশেষ একটি সম্প্রদায়কে খুশি রাখতেই ‘বন্দে মাতরম’-এর ১৫০ বছর পূর্তি উদযাপন বড় পরিসরে করছে না।
রাজ্য বিজেপি সভাপতি শমিক ভট্টাচার্য বলেন,
“তারা একটি সম্প্রদায়কে খুশি রাখতে চাইছে বলেই এই অনুষ্ঠান বড় আকারে করছে না। আমরা জানি পশ্চিমবঙ্গে কী হয়, কে কাদের পাশে দাঁড়ান।”
যেদিন রাজ্যজুড়ে বিজেপি কর্মীরা জাঁকজমকভাবে ‘বন্দে মাতরম’-এর ১৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করেন, সেদিন তৃণমূল সীমিত পরিসরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য ইতিহাস বিকৃতি করছে এবং দুই সাহিত্যিককে পরস্পরের বিপরীতে দাঁড় করাচ্ছে।
দলটি জানিয়েছে, রাজ্য সরকার ইতোমধ্যে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সম্মানে বিশেষ কমিটি গঠন করেছে। তৃণমূলের দাবি, ইতিহাসবিদরা ইতোমধ্যেই প্রমাণ করেছেন ‘জন গণ মন’ ব্রিটিশদের খুশি করার জন্য লেখা হয়নি।
আজ শনিবার এই বিতর্কের প্রতিবাদে পথে নামছে তৃণমূল কংগ্রেস। ড. শশী পাঞ্জা ও বিবেক গুপ্তর নেতৃত্বে দুপুর ১টায় ঠাকুরবাড়ি (জোড়াসাঁকো) থেকে শুরু হবে প্রতিবাদ মিছিল।
উল্লেখ্য, ‘বন্দে মাতরম’ গানটি ১৮৭০-এর দশকে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচনা করেন। এটি ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে ওঠে। যদিও ১৯৫০ সালে সংবিধান সভা গানটিকে জাতীয় সংগীতের মর্যাদা দেয়নি, তবে ‘জাতীয় গান’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ বলেছিলেন, “বন্দে মাতরম ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছে, তাই এটি জাতীয় সংগীতের মতোই সম্মানের যোগ্য।”
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজধানী দিল্লিতে ‘বন্দে মাতরম’-এর ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বছরব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করেন এবং স্মারক ডাকটিকিট ও মুদ্রা প্রকাশ করেন।
সূত্র: নিউজ১৮
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।