ফের চক্রান্ত শুরু হয়েছে: মির্জা ফখরুল

Nasir Uddin | প্রকাশিত: ১ জানুয়ারী ২০২৫, ২১:২৬

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বাংলাদেশে আবার চক্রান্তের খেলা শুরু হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যে চক্রান্তের খেলার কারণে আমাদের নেত্রীকে ৬ বছর জেলে থাকতে হয়েছে, এখনও আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেশের বাইরে থাকতে হচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে আবার সেই চক্রান্তের খেলা শুরু হয়েছে।

বুধবার (১ জানুয়ারি) বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যারা বাংলাদেশে বিশ্বাসী, যারা জোর গলায় বলতে পারে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ সেই দলের নেতাদের দূরে সরিয়ে রাখতে চায়। ইতিহাসে এ ঘটনা বহুবার হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এই চক্রান্তকে কখনও সমর্থন দেবে না। বিএনপিকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা বহুবার হয়েছে, কখনোই সম্ভব হয়নি। কারণ, বিএনপির রাজনীতি গণমানুষের রাজনীতি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, মানুষের প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গে সময়ের প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গে সংস্কার আনতে হবে। তাই বলে সংস্কারের নাম করে আমরা এমন কিছু হতে দিতে পারি না, যেটা আমাদের গণতন্ত্রকে বিঘ্নিত করবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সংকট নিরসনে কালবিলম্ব না করে অতিদ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। একটা নির্বাচন করার ক্ষেত্রে ন্যূনতম যে সংস্কারগুলো করা দরকার সেটা দ্রুত শেষ করে নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। যে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে, এ সংকটের একমাত্র সমাধান গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন।’

ছাত্রদলকে ভ্যানগার্ড আখ্যায়িত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের সামনের যোদ্ধা তারা, ছাত্রদলকে এখন জ্ঞানভিত্তিক রাজনীতি করতে হবে। আমাদের একটা সাইবার ওয়ার্ক করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের অবস্থান সবচেয়ে বেশি রাখতে হবে। এটা যদি না করতে পারি তাহলে এ যুদ্ধে আমরা হারিয়ে যাবো।’

ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাক্টিভিটিস বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশ ও দেশের বাহিরে ষড়যন্ত্র চলছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের মেধা, মনন দিয়ে তাদের পরাজিত করতে পারবো বিশ্বাস রাখি।’

সভাপতির বক্তব্যে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সফল হয়েছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের রক্তের ওপর দিয়ে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ক্যাম্পাসে কোথাও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের থাকতে দেওয়া হয়নি। আগামী দিনে সারা দেশের ক্যাম্পাসে ছাত্রদল নতুন ধারার রাজনীতি চালু করবে। কোথাও চাঁদাবাজি ও দখলবাজি থাকবে না।’

বক্তব্যের শুরুতে ছাত্রদলের গুম-খুন ও ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মরণ করা হয়।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দুপুর থেকে প্লাকার্ড, ব্যানার হাতে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে আলোচনা সভায় যোগ দেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা নানা রঙবেরঙের ব্যাজ, টুপি-গেঞ্জি পরে ছিলেন। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের বাইরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ছাত্রদলের প্রথম শহীদ মো. ওয়াসিম আকরাম, মো. সবুক মিয়া, আরিফুর রহমান রাসেলসহ নেতাকর্মীদের শ্রদ্ধা জানিয়ে ব্যানার দেখা গেছে।

এছাড়াও বিগত আওয়ামী লীগের আমলে গুম হওয়া ছাত্রদলের সাবেক নেতা ইলিয়াস আলী, নুরুজ্জামান জনি, মাহাবুবুল হক বাবলু, আবু তাহের দাইয়া, সাজেদুল ইসলাম সুমন, আমিনুল ইসলাম জাকিরকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে ব্যানার দেখা গেছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ছাত্রদলের নিহত ১৪২ জনের নামে তালিকার বই প্রকাশ করে সংগঠনটি।

দিনটি উপলক্ষে এদিন সকালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা জানান সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি পালিত হয়।

ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, যুবদলের সভাপতি আবদুর মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আহসান রাজিব, সাবেক ছাত্রদল নেতা কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুমসহ সংগঠনটির অসংখ্য নেতাকর্মী।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top