করোনাকালে ভালো নেই ঈশ্বরদীর মুচি সম্প্রদায়
পাবনার ঈশ্বরদী থেকে | প্রকাশিত: ৭ জুলাই ২০২১, ০৫:৩৮
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে গত ১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে দেশব্যাপী কঠোর বিধিনিষেধ। এ বিধিনিষেধ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে ঈশ্বরদী উপজেলার প্রায় দেড় শতাধিক মুচি সম্প্রদায়ের জন্য। করোনাকালে মুচিদের জীবন যাপন নিয়ে কথা হয় পৌর শহরের বাজার এলাকায় বিমল দাস, রেলগেট এলাকার বাহাদুর রবি দাস ও সুনীল লালের সাথে।
নিজেদের দুর্দশার কথা জানিয়ে তাঁরা বলেন, করোনার আগে তাদের দৈনিক আয় হতো পাঁচ থেকে ছয়শত টাকা। তখন সকাল ৮ থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত কাজ করতে পারতো। তবে বর্তমানে দেশে করোনার কারণে প্রভাব পড়ে কাজে। সকালে এসে ৪ টার মধ্যে দোকান বন্ধ করে দিতে হয়। এতে আয় হয় মাত্র দেড় থেকে দুইশত টাকা। এর মধ্যে নিজেদের খরচ হয়ে যায় প্রায় পঞ্চাশ-ষাট টাকা। বাকি যা অবশিষ্ট থাকে তা দিয়ে সংসার চলে না।
অন্যান্য মুচিরা জানান, তাঁদের খবর কেউ রাখে না। তাঁরা একেক জনের এ পেশার বয়স ২৫-৩০ বছর করে। তবে পর্যন্ত তাঁরা সরকারী কোনো সহায়তা পাইনি। তাই সরকারের কাছে দাবী তাদের যেনো দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতার ব্যবস্থা করে। তাহলে তাঁরা ভালোভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকতে পারবে।
এমন করেই অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন ঈশ্বরদী বাজারে মুচি শ্রী লিটন কুমার দাস। তিনি বলেন, নবম শ্রেণিতে লেখাপড়া করা অবস্থায় অর্থের অভাবে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ছোট জাত হওয়াতে অনেক চেষ্টা করেও কোনো চাকরি পাননি। ফলে বাধ্য হয়েই মুচির কাজ শুরু করেন।
রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে তিনি প্রতিদিন রিক্সা সমিতি এলাকায় জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন। ২০ বছর ধরে তিনি এ কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। আগে দিনে ৪০০-৫০০ টাকা আয় করতেন। কিন্তু করোনা আসার পর থেকে তেমন আয় হয় না। দিনে ৬০-৭০ টাকা আয় হয়। এতে ৮ সদস্যদের পরিবারের সংসার চলে না।
এ ব্যাপারে ঈশ্বরদী উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা খোন্দকার মাসুদ রানা বলেন, বর্তমানে মুচিদের জন্য সরকারী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক ভাতার একটি প্রকল্প চালু রয়েছে। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগী ব্যক্তির বয়স ৫০ হতে হবে। এছাড়াও এদের সন্তানদের জন্য শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে। তারা আবেদন করলে বৃত্তির ব্যবস্থা করা হবে। সামনের দিকে যদি সরকারী অন্য কোনো সহায়তা আসে তাহলে তা এদের মাঝে সঠিকভাবে পৌঁছে দেয়া হবে।
ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নায়েব আলী বিশ্বাস বলেন, আমাদের মাসিক সাধারণ সভায় এ সম্প্রদায়ের মানুষের মানবেতর জীবনযাপন নিয়ে আলোচনা করবো। শিগগির আমাদের উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তাদের আর্থিক প্রণোদনা বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
এনএফ৭১/এনজেএ/২০২১
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।