লোকসানের আশংকায় রয়েছে গোপালগঞ্জের খামারিরা
গোপালগঞ্জ থেকে | প্রকাশিত: ১১ জুলাই ২০২১, ২৩:৪৬
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবারা লঞ্চ ঘাট এলাকার খামারি মো: রশিদ মৃধা (৩০) কোরবানির ঈদকে সমানে রেখে এবার নিজ খামারে ৪৫টি গুর লালন পালন করেছেন। এবারের ঈদে এসব গরু বিক্রি করে লাভবান হওয়ার আশা করেছিলেন তিনি।
কিন্তু কারোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউন থাকায় তার সেই স্বপ্ন ফিকে হতে বসেছে। কপালে দেখা দিয়েছে চিন্তার ভাঁজ। ঈদের আগেই গরু বিক্রি করতে পারবেন কিনা সেই চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটছে তার। গরু বিক্রি করতে না পারলে ধার দেনা তো মিটাতেই পারেবেনই না সেই সাথে সংসার চালানোও কষ্টসাধ্য হয়ে পরবে।
মো: রশিদ মৃধা বলেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এক বছর আগে নিজ খামারে ৪৫টি গরু লালন পালন করেছি বিক্রি করে লাভবান হওয়ার আশায়। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউন থাকায় জেলায় পশুর হাট বসবে কি না তা জানি না। আর অনলাইনে কিভাবে বিক্রি করবো তাও বুঝতে পারছি না। এ গরুগুলো বিক্রি করতে না পারলে লোকসান দিতে হবে। আর তারই মত এমন দু:চিন্তায় দিন কাটছে জেলার অন্তত চার হাজার খামারির।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবারের কোরবানির ঈদে গোপালগঞ্জে জেলায় পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৯ হাজার। লাভের আশায় ৩২ হাজার গবাদি পুশ মোটা তাজা করা হয়েছে খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে। যা জেলার চাহিদা তুলনায় প্রায় তিন হাজার বেশি। তবে এ বছর হাট না বসলেও খামারিদের পশুর ছবি, দাম, ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার দিয়ে অনলাইনের ৫টি প্লাটফরমে পশু বিক্রির ব্যবস্থা করেছে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
সদর উপজেলার গোবারা লঞ্চ ঘাট এলাকা গিয়ে দেখা গেছে, মো: রশিদ মৃধা তার খামারে ৪৫টি গরু মোটাতাজা করেছেন। ছোট গরু কিনে ৮/১০ মাস পালন করে খড় ও ভুষির সাথে ঘাস খাইয়ে ক্ষতিকর কোন রকম ওষুধ ব্যবহার না করেই এসব গরু মোটাতাজা করেছেন। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ ও দাদন নিয়ে এসব পশু পালন করেছে তিনি। করোনার প্রভাবে দফায় দফায় পশু খাদ্যের দাম বাড়ায় খরচও বেড়েছে দ্বিগুণ। তার খামারে থাকা এসব গরু সর্বোচ্চ ১ লাখ ১০ হাজার থেকে সব নিন্ম ৬০ হাজার টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব গুর বিক্রি করতে না পারলে তাকে দিতে হবে লোকসান।
এদিকে কোরবানির পশুর হাট বসানোর ব্যাপারে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। খামারিদের সঙ্গে ক্রেতাদের যোগাযোগ না হওয়ায় হতাশায় ভুগছেন তারা। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর অনলাইনের মাধ্যমে পশু বিক্রির ব্যবস্থা করা হলেও অনেক খামারি বিষয়টি জানেনই না। সেই সাথে ভারতীয় গরু দেশে আসলে লোকসান গুনতে হবে এমনই শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
খামারি সাহেব আলী ফকির (৫০) ও মো: নিজামুল বিশ্বাস (১৯) বলেন, কোরবানিকে সমানে রেখে এবার গরু পালন পালন করেছি। কিন্তু বিক্রি করতে পারবো কিনা সেই চিন্তায় রয়েছি আমরা। এবার হাট না বসলে খামারের গরু খামারেই রয়ে যাবে। এতে লোকসানগুনতে হবে আমাদের। অনলাইনেও কিভাবে বিক্রি করবো সে বিষয়টিও আমরা জানি না। তবে শেষ পর্যন্ত বিক্রি করতে না পারলে আমাদের মাথায় হাত পরবে।
খামারি মিনহাজ মৃধা (২০) বলেন, একদিকে করোনা অন্যদিকে হাট না বসার আশংকা। সেই সাথে ভারতীয় গরু আসা নিয়েও চিন্তায় রয়েছি। যদি ভারতীয় গরু আমাদের জেলায় চলে আসে তাহলে আমাদের পথে বসতে হবে।
গোপালগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো: আজিজ আল মামুন বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে এবার হাট বসানো নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। খামারীদের পশুর ছবি, দাম, ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার দিয়ে অনলাইনের ৫টি প্লাটফরমে পশু বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদের আগ মূহুর্তে হাট বসলে ও আনলাইনে পশু বিক্রি করার পাশাপাশি ভারতীয় পশু না আসলে খামারিরা লাভবান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এনএফ৭১/এনজেএ/২০২১
বিষয়: গোপালগঞ্জ
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।