ফকিরহাটে ১ মাসে ১২টি অস্বাভাবিক মৃত্যু, আত্মহত্যার চেষ্টায় আহত ২৯ জন
নিজস্ব প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ৭ জানুয়ারী ২০২৩, ১৩:১১
বাগেরহাটের ফকিরহাটে আত্মহত্যা ও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ডিসেম্বর মাসে এই উপজেলায় আত্মহত্যাসহ ১২টি অস্বাভাবিক মৃত্যু ও ২৯টি আত্মহত্যার চেষ্টায় আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতিকে ভয়াবহ উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আত্মহত্যাসহ ১২টি অস্বাভাবিক মৃত্যুর তথ্য নথিভূক্ত করা হয়। একই সময় আত্মহত্যা করতে গিয়ে অসুস্থ্য অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে এমন ১৭ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন যার মধ্যে ১২ জন নারী। এছাড়া আত্মহত্যার করতে গিয়ে বেঁচে যাওয়া ১২ জন ভিকটিম বিভিন্ন বেসারকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন। চলতি মাসেও একাধিক অত্মহত্যা চেষ্টার রোগী মূমুর্ষূ অবস্থায় ফকিরহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছে বলে জানান হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শিশির বসু। আত্মহত্যার ঘটনায় আহত ও মৃত্যুর হারে কিশোর কিশোরী রয়েছে প্রায় ৬০ ভাগ।
আরও পড়ুন: আশুলিয়ায় দুই মাদক কারবারি গ্রেপ্তার
একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান জানান, প্রাপ্ত পরিসংখ্যানের চেয়ে উপজেলায় আত্মহত্যার ঘটনা অনেক বেশি। পাশেই খুলনা ও বাগেরহাটের মতো বড় শহর থাকায় অনেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য উপজেলায় না এসে জেলা ও বিভাগীয় শহরে নিয়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গলায় দড়ি, ঘুমের অসুধ, বিষ পান, হারপিক ও অন্যান্য বিষক্ত দ্রব্য খেয়ে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি লক্ষ করা গেছে।
উপজেলায় সর্বশেষ ৬দিনে ৪জন আত্মহত্যা করেছে। যাদের মধ্যে ৮ বছরের শিশু থেকে ৪৫ বছরের পৌঢ় রয়েছে। এদের মধ্যে উপজেলার মৌভোগ মধ্যপাড়া গ্রামের যুবক আবু হানিফ শেখ (২২), ছোট খাজুরা গ্রামের পোল্ট্রি খামার মালিক জাহাঙ্গীর মোড়ল (৪৫), টাউন-নওয়াপাড়ার সেকেরডাঙ্গা এলাকার ২য় শ্রেণির ছাত্রী সানজিদা খাতুন (৮) ও ঠিকরিপাড়া এলাকার দশম শ্রেণির ছাত্র মো. ইয়াছিন (২০)।
রোগতত্ত্ব গবেষক ও ফকিরহাট ইউএইচএফপিও ডা. শাহ মো. মহিবুল্লাহ বলেন, বর্তমান নাগরিক জীবনে শারীরিক সুস্থ্যতার পাশাপাশি মানুষিক সুস্থ্যতার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। দ্রুতবর্ধনশীল অঞ্চল হিসেবে অন্যান্যা এলাকার মতো ফকিরহাটেও কিছু নাগরিক জটিলতা তৈরি হয়েছে। আর এ থেকেই ঘটে আত্মহত্যার ঘটনা। এ পরিস্থিতিতে আমরা হাসপাতালে কাউন্সিলিং করার জন্য একটি ইউনিট চালু করার কথা ভাবছি।
ফকিরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মু. আলীমুজ্জামান বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা জানতে পারি দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর। যে কোন অস্বাভাবিক মৃত্যুই দুঃখজনক। এক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকালীন শিশু কিশোরদের স্কুল পর্যায়ে কাউন্সিলিং, পারিবারিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনোয়ার হোসেন জানান, শিশু কিশোরদের মানসিক বিকাশের জন্য বিভিন্ন ধরণের সহপাঠ কার্যক্রমে গ্রহণ করা হয়েছে। স্মার্ট ফকিরহাটে শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও ফকিরহাট উপজেলা চেয়ারম্যান স্বপন দাশ বলেন, প্রতিযোগিতার সংস্কৃতি, দারিদ্রতা ও সামাজিক বৈষম্য, সোশ্যাল মিডিয়ার নেতিবাচক ভূমিকা আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। জীবনধারনের দক্ষতা চর্চার বিষয় শিশু কিশোরদের পাঠ্যক্রমে যুক্ত করা উচিত। যোগব্যায়াম, মননশীলতার অনুশীলন, চাপ ব্যবস্থাপনা, রাগ ব্যবস্থাপনা, সহানুভূতি, নিজের যত্ন নেওয়ার মতো বিষয়গুলোও থাকা উচিত। ইতোমধ্যে আমরা উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সচেতনতামূলক কর্মসূচী গ্রহণ করেছি। বিভিন্ন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে শিশু কিশোরদের যুক্ত করেছি।
বিষয়: বাগেরহাট ফকিরহাট অস্বাভাবিক মৃত্যু
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।