তীব্র শীতে পেটের দায়ে নদীতে জাল নিয়ে দুই নারী

নিশি রহমান | প্রকাশিত: ২৬ জানুয়ারী ২০২৩, ০১:৩১

প্রতীকী ছবি

তীব্র শীতে মানুষের যখন জবুথবু অবস্থা, তখন সেই শীত উপেক্ষা করে খুলনার কয়রা উপজেলার সুন্দরবনসংলগ্ন শাকবাড়িয়া নদীতে জাল নিয়ে নেমে পড়েছেন দুই নারী। গায়ে শীত নিবারণের পোশাক নেই। সুতি কাপড়ের ওড়না কোনোরকমে শরীরটায় জড়িয়ে আছেন। জোয়ারের পানিতে প্রায় এক ঘণ্টা জাল টানা শেষে বাঁধের ঢালে বসে পোনা বাছাই করছিলেন তাঁরা।

তাঁদের কাছে গিয়ে শীতে ভয় লাগে কি না জানতে চাইলে,এক নারী বলেন, ‘শীতির ভয় পালি কি আর প্যাট চলবে?’ তাঁর পাশে বসা আরেকজন বলেন, ‘নিজেরা খাই বা না খাই, ছাওয়াল-মাইয়েগের জন্যি তো দুই বেলা খাবার জোগাড় করতি হবে। শীতির ভয় পালি খাব কী?’

আরও পড়ুন>>> মহিপুরে কোস্ট গার্ডের অভিযানে ৫০ মণ ইলিশের ঝাটকা জব্দ

খুলনার কয়রা উপজেলায় তাদের দু’জনের মতো নদীতীরবর্তী গ্রামগুলোর নারী-পুরুষের জীবিকার প্রধান উৎস জাল টেনে বাগদার পোনা আহরণ। দিন ও রাতের জোয়ারে দুবার পোনা ধরেন তাঁরা। এক সপ্তাহ ধরে শৈত্যপ্রবাহ চলায় রাতের জোয়ারে কেউ বের হতে পারছেন না। তবে দিনের বেলা যতক্ষণ পারা যায় পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করেন তাঁরা। কারণ, এক দিন নদীতে জাল টানতে না গেলে তাঁদের সংসার চলে না। তাই শীত, বর্ষা, গ্রীষ্ম তাঁদের কাছে একই রকম মনে হয়।

সুন্দরবনসংলগ্ন মাটিয়াভাঙ্গা গ্রামে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। কপোতাক্ষ নদে অনেক নারী-পুরুষকে দেখা গেল পিঠে দড়ি বেঁধে জাল টানতে। সেখানে শীতে কাঁপতে কাঁপতে জাল টানছিলেন বৃদ্ধ কওছার আলী। তাঁর কাছাকাছি এগিয়ে গেলে তিনি বলেন, ‘দুটো মাইয়ের বিয়ের পর থেইকে নিজির কামাই নিজি করি খাতি হয়। এক দিন গতর খাটাতি না পারলি বুড়ো-বুড়ির উপোস থাকতি হবে। তাই শীত লাগলিও ঘরের মধ্যি বইসি থাকপার উপায় নেই, বাবা।’

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, কয়রা উপজেলার সুন্দরবনসংলগ্ন নদীতীরবর্তী ৩০টির মতো গ্রামের বাসিন্দাদের জীবিকার প্রধান উৎস নদীতে জাল টেনে পোনা ধরা। এসব গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ এ পেশায় জড়িত। তাদের কাছ থেকে ফড়িয়ারা পোনাগুলো সংগ্রহ করে স্থানীয় ঘেরমালিকদের কাছে বিক্রি করেন। এভাবে প্রতিদিন গড়ে একেকজন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় করেন। ওই টাকায় তাদের খাওয়া এবং পরার বন্দোবস্ত হয়। যাদের সংসার বড়, তাদের সমস্যা বেশি। প্রতিবছর সরকারি ও বেসরকারিভাবে এসব গ্রামে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। কেনার সামর্থ্য না থাকায় বেশির ভাগ পরিবারের শীত কাটে ত্রাণের বস্ত্রে।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top