কোম্পানীগঞ্জ শাহ আরেফিন রাস্তায় চাঁদাবাজির মহোৎসব

আলী হোসেন, কোম্পানীগঞ্জ ( সিলেট) প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:১৩

ফাইল ফটো

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার প্রাচীন ও ঐতিহাসিক নিদর্শন ছিলো শাহ আরেফিন টিলা। ১৩৭ দশমিক ৫০ একরের এ টিলাটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। দেখে মনে হতে পারে এটা কোনো যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি এলাকা। হযরত শাহ আরেফিন (র.) এর মাজার এখন একবারে গর্তে নিশ্চিহ্ন।

খেলার মাঠ, বড় বড় গাছ সব কিছুই উজাড়। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর থেকে নতুন করে এ টিলা কেটে পাথর উত্তোলন শুরু করে স্থানীয়রা। ফলে পাথর পরিবহন করতে গিয়ে পাথর ব্যবসায়ীরা পদে পদে চাঁদাবাজির সম্মুখীন হচ্ছেন। প্রতিযোগিতা দিয়ে চলছে পুলিশ ও সিন্ডকেটের চাঁদাবাজি। ফলে ভোলাগঞ্জ শাহ আরেফিন রাস্তা যেন চাঁদাবাজদের নিরাপদ অভয়ারণ্য হয়ে ওঠেছে।


প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক কর্তাব্যক্তিরাই মিলেমিশে একাকার। শাহ আরেফিন থেকে সিলেট ভোলাগঞ্জ মহাসড়ক পর্যন্ত রয়েছে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য। মাসের পর মাস প্রকাশ্যে এমন চাঁদাবাজি চলছে। প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

পুলিশ ও বিজিবি ছাড়াও চাঁদাবাজিতে লিপ্ত রয়েছে স্থানীয় শক্তিশালী সিন্ডিকেট। রাজনৈতিক দলের উঠতি নেতা থেকে শুরু করে পাতি নেতাও রয়েছে চাঁদাবাজির এই শক্তিশালী সিন্ডিকেটে। এককথায় চাঁদাবাজদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে এখানকার পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।


খুঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনানের মদদে সরাসরি পুলিশ দিনেরাতে বিভিন্ন পথে পথে পাথর বহনকারী ট্রাক্টর থেকে নির্দিষ্ট হারে তুলছে চাঁদার অর্থ। টাকা না দিলে ব্যবসায়ীদের ট্রাক্টর আটকে রাখা হয়। টাকা হাতে আসলেই লাইন ক্লিয়ার হয়ে যায়। ব্যবসায়ীরা একরকম নিরুপায় হয়ে চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। যদিও কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি চাঁদাবাজির বিষয়টি অস্বীকার করেন।


প্রতিদিন দিনরাতে প্রায় ৫০০/৬০০ ট্রাক্টর পাথর পরিবহনের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আজির উদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে শাহ আরেফিন টিলায় প্রতি কোয়ারীর গর্ত থেকে বিজিবির নামে ৫শ টাকা করে চাঁদা নিচ্ছেন। সেখান থেকে চিকাডহর মসজিদের সামনে থেকে বিজিবি নিজ হাতে নিচ্ছে ট্রাক্টর প্রতি ৩০০ টাকা। চিকাডহর গ্রামের আঞ্জু মিয়ার বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে ৫শ টাকা নিচ্ছেন একদল পাথরখেকো চক্র।

পর্যায়ক্রমে নোয়াগাঁও ও বাবুল নগর মোড়ে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ নিজ হাতে ৫শ টাকা নিচ্ছে। নোয়াগাঁও মাদ্রাসার সামনে ১শ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। পাড়ুয়া উজানপাড়া পয়েন্টে রাসা নামের এক ব্যক্তি নিচ্ছেন ২শ টাকা। রুস্তমপুর এলাকায় একটি পাথর খেকো চক্র নিচ্ছেন ২শ টাকা করে। এভাবে একটি ট্রাক্টর টিপ প্রতি ২ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে। এভাবেই প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে। আর এসব চাঁদাবাজির অর্থ ভাগবাটোয়ারা করে খাচ্ছেন প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়রা।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাথর ব্যবসায়ী নিউজ ফ্ল্যাশ ৭১ কে জানান, শাহ আরেফিন টিলা থেকে মহাসড়ক পর্যন্ত পাথর পরিবহনের কাজে নিয়োজিত ট্রাক্টর নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছতে পথে পথে বিভিন্ন নামে বেনামে দিতে হয় চাঁদা। প্রশাসনের নিকট চাঁদাবাজির অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয় না। কারণ সবাই ভাগ পায়। এভাবে চলতে পারেনা। তাদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ আমরা। চাঁদাবাজি বন্ধ করে নির্বিঘ্নে ব্যবসা করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।


কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান , চাঁদাবাজির কথা অস্বীকার করে জানান কোথায় ও, চাঁদাবাজি হচ্ছে এটা আমার জানা নেই। আমার নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ চাঁদাবাজি করলে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এবিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজ আজিজুন্নাহার বলেন,বিভিন্ন পয়েন্টে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে এটা আপনাদের কাছ থেকে শুনেছি। যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।


সিলেট জেলা পুলিশের এডিশনাল এসপি (ক্রাইম) রফিকুল ইসলাম নিউজ ফ্ল্যাশ ৭১ কে বলেন- কোম্পানীগঞ্জে পাথর পরিবহনে চাঁদাবাজির বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে আমরা খোঁজ নিচ্ছি। অভিযোগ পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top