শরণখোলায় সৌদি দুম্বার মাংস বিএনপি-জামায়াত ও সাংবাদিকদের পেটে
বাগেরহাট প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:১৫
বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলায় সৌদি সরকারের পাঠানো দুম্বার মাংস বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দুঃস্থ ও এতিম শিশুদের জন্য প্রেরিত এই মাংসের একটি বড় অংশ স্থানীয় বিএনপি, জামায়াত ও কিছু সাংবাদিক নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) রাত ১১টার দিকে উপজেলার বিভিন্ন মাদরাসায় মাংস বিতরণের কথা থাকলেও বাস্তবে তার বড় অংশ গন্তব্যে পৌঁছায়নি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস (পিআইও) সূত্রে জানা গেছে, শরণখোলায় মোট ১০ কার্টন দুম্বার মাংস আসে। প্রতিটি কার্টনে ১০ প্যাকেট করে মাংস থাকার কথা ছিল— অর্থাৎ মোট ১০০ প্যাকেট।
কিন্তু উপজেলা প্রেসক্লাবে সরবরাহকৃত তালিকা অনুযায়ী, ২৯টি মাদরাসায় বিতরণ করা হয়েছে মাত্র ৫০ প্যাকেট। বাকি ৫০ প্যাকেটের কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়দের দাবি, শরণখোলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার প্রতিনিধি শেখ মোহাম্মদ আলী, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও মানবজমিন প্রতিনিধি আব্দুল মালেক রেজা, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বেল্লাল হোসেন মিলন এবং জামায়াতের আমির রফিকুল ইসলাম কবির—এদের বিরুদ্ধে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
শরণখোলার বাসিন্দা হুমায়ূন কবির নামে এক ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন,
“মাংস কোথায় গেল? শরণখোলার এক আওয়ামী দোসর তেলবাজ সাংবাদিকের বাসায় ৫ কার্টন আর ইসলামী দলের নেতার বাসায় ১০ কার্টন মাংস কীভাবে গেল?”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. সোহাগ আকন বলেন,
“সব কার্টনে সমানসংখ্যক প্যাকেট ছিল না। কোনো কোনো কার্টনে ১০টির পরিবর্তে ৭ বা ৮টি প্যাকেট ছিল।”
তবে স্থানীয়দের প্রশ্ন— সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রেরিত সিল করা কার্টনে প্যাকেটসংখ্যা কমবেশি হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হাবিবুল্লাহ বলেন,
“আমার কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ এসেছে। ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
অভিযোগের বিষয়ে বিএনপি নেতা বেল্লাল হোসেন মিলন ও জামায়াত নেতা রফিকুল ইসলাম কবিরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি। অপরদিকে সাংবাদিক শেখ মোহাম্মদ আলী বর্তমানে সরকারি খরচে রাসমেলায় অবস্থান করায় তার মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, সরকারি তত্ত্বাবধানে বিদেশি সহায়তা বিতরণে এমন অনিয়ম প্রশাসনের ওপর জনগণের আস্থা কমিয়ে দেয়। তারা দ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।