ইউএনও অপসারনের আন্দোলনের সুযোগে

দৌলতখানে নদীতে অবাধে মাছ শিকার

ভোলা থেকে | প্রকাশিত: ১৩ মার্চ ২০২১, ২২:২৬

দৌলতখানে নদীতে অবাধে মাছ শিকার

ভোলার দৌলতখান উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাওছার হোসেনকে অপসারণের দাবিতে দৌলতখানে টানা কয়েকদিন বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন সহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে সেখানকার ইউনিয়নের মেম্বার ও স্থানীয়রা।

উপজেলার ভাবানীপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আবদুল মতিনকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে আনসার সদস্যরা লাঞ্চিত করার অভিযোগ এনে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা। এর ফলে গত চার দিন ধরে দৌলতখানের মেঘনা নদীতে কোনো অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। এ সুযোগে সেখানকার জেলেরা নদীতে নির্বিঘ্নে মাছ শিকার করছেন। এই চিত্র এমন যে, দেখে মনে হয় সেখানে মাছ ধরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে।

দৌলতখানের বিভিন্ন মাছ ঘাটে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি মাছ ঘাটেই মাছ ব্যবসায়ী ও মানুষের সমাগম। নদী থেকে একে একে আসছে মাছ ধরার নৌকা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই দৌলতখানের মাঝিরহাট মাছ ঘাট থেকে তজুমদ্দিন উপজেলার সীমানা পর্যন্ত এলাকায় শত শত মাছ ধরার নৌকা নিয়ে জেলেরা নদীতে মাছ শিকার করছেন। কেউ জাল টানছে আবার কেউ জাল ফেলছে। দেখলে মনে হবে ওই এলাকায় কোনো অভিযান নেই।

দৌলতখানের নতুন রাস্তা মাছ ঘাটে গেলে দেখা মিলে নদী থেকে মাছ ধরে আসা ইউছুফ মাঝি নামের এক জেলের সঙ্গে। তারা তিনজন সকালে নৌকা ও জাল নিয়ে নদীতে মাছ শিকারে নেমেছেন। অভিযানের কথা জিজ্ঞেস করলেই তিনি বলেন, এনজিওর ঋণের টাকা পরিশোধ করতেই তারা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নদীতে মাছ শিকারে গেছেন।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, দুই মাসের সরকারি নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে ১৬টি সচেতনতা সভা করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে আটটি ব্যানার টাঙানো হয়েছে। এছাড়া গত ১০ দিনে ১০টি অভিযান ও দুটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে।

গত ১ মার্চ থেকে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি ও জাটকা সংরক্ষণের লক্ষে দুই মাসের জন্য সব ধরনের মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। এরই ধারাবাহিকতায় জেলার দৌলতখান উপজেলার মেঘনা নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। দৌলতখান ইউএনও কাওছার হোসেন আনসার সদস্যদের নিয়ে মেঘনা নদীতে অভিযানে নামেন। এসময় একটি মাছ ধরার ট্রলারসহ দুজনকে আটক করে থানা সংলগ্ন পৌর মাছঘাটে নিয়ে এলে ইউএনওকে চারদিক থেকে জেলে ও স্থানীয়রা ঘিরে ফেলে।

সেখানে উপস্থিত হন ভাবানীপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল মতিন। এক পর্যায়ে ইউএনওর সঙ্গে বাক বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন ইউপি সদস্য আবদুল মতিন। পরে সেখানে উত্তেজিত জনতার উপর লাঠিচার্জ করে আনসার সদস্যরা। এ অবস্থায় ইউপি সদস্য আনাসারদের লাঠির আঘাতে আহত হন।

এরপর থেকেই ইউএনওকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ, মানববন্ধন সহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও মাছ ব্যবসায়ীরা। এরপর থেকে দৌলতখানের মেঘনা নদীতে অভিযান বন্ধ রয়েছে। এ সুযোগে দৌলতখানের জেলেরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠেছে।

এদিকে আহত ইউপি সদস্য আবদুল মতিন গত চারদিন ধরে দৌলতখান হাসপাতালের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দকৃত ক্যাবিনে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। তার ওপর হামলার প্রতিবাদে দৌলতখান উপজেলার সকল ‘ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যবৃন্দের’ ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দৌলতখান উপজেলার সব ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও সর্বস্তরের জনগণ এর ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এ সময় মানববন্ধনকারীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কাওছার হোসেনের অপসারণ দবি করেন। আহত ইউপি সদস্য আবদুল মতিন অভিযোগ করে বলেন, গত সোমবার তার ভাই মনির হোসেনের শ্বশুর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দেখতে বিকালে মাছ ধরার ট্রলারে করে চারজন মহিলা ও দুজন পুরুষসহ নোয়াখালীর আলেকজেন্ডার যান।

পরে রাতেই মহিলাদের সেখানে রেখে ট্রলার নিয়ে তারা দৌলতখানে ফিরে এলে মাছ ঘাটে ইউএনও তাদের আটক করে এবং মনির হোসেনকে নৌকার সাথে বেঁধে রাখে। ইউএনও কাওছার হোসেন বলেন, সোমবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে মেঘনা নদীতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় চারটি মাছ ধরার ট্রলার ও সাত জেলেকে আটক করা হয়েছে। একই সঙ্গে মাঝ নদীতে একটি বড় মাছ ধরার ট্রলারকে ধাওয়া দিলে তারা জাল ফেলে রেখে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে ট্রলারটিকে এক কিলোমিটার ধাওয়া করে আটক করা হয়। এ সময় ট্রলারে থাকা সাত-আটজন জেলে পালিয়ে গেলেও মনির হোসেন নামে এক জেলেকে আটক করতে সক্ষম হয় আনসার সদস্যরা।

দৌলতখান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারি মৎস্য কর্মকর্তা আমির হোসেন বলেন, জাটকা রক্ষা ও ইলিশ উৎপাদন বাড়াতে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা সময়ের মধ্যে গত ১ মার্চ থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত ১০টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। দুটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়েছে। অভিযানে ২০ হাজার মিটার জাল জব্দ করে আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়েছে। তিনি জানান, দৌলতখানে কোনো অফিসার আসতে চায় না। মনের বিরুদ্ধে আসতে হয়। আমিও এখানে অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি। আমার মূল দায়িত্ব হলো তজুমদ্দিনে। আমি নিজে অসুস্থ হয়েও দুইটি উপজেলা সামাল দিতে হয়। তবে নিষেধাজ্ঞার সময়ে নদীতে মাছ ধরা বন্ধ করতে জোরদার অভিযানের বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, অভিযান পরিচালনার জন্য জনবল দরকার। এখানে আমি ছাড়া মাত্র একজন ফিল্ড অফিসার ও একজন পিয়ন রয়েছে। আমাদের নিজস্ব কোনো যানবাহনও নেই। জেলেদের ট্রলার রিকুজিশন করে নদীতে অভিযানে যেতে হয়

এনএফ৭১/জেএস/২০২১




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top