ভোলার তিন কৃতি সন্তানের গল্প

ভোলা থেকে | প্রকাশিত: ১৯ মার্চ ২০২১, ০০:৩৮

ভোলার তিন কৃতি সন্তানের গল্প

স্বপ্ন সত্যি হবার গল্প গুলো সবসময় শিহরণ জাগায়। সেই স্বপ্নযাত্রায় যদি সাফল্য আসে তবেই নির্মিত হয় স্বপ্নজয়ের দুর্বার কাহিনী। তেমনই নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবে রুপদান করলেন দ্বীপজেলা ভোলার তিন কৃতি সন্তান। জীবন যুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট হবার প্রবল ইচ্ছা আর স্বপ্ন তাঁদের কোনো বাঁধায় আটকাতে পারেনি।

স্বপ্ন জয়ী দ্বীপজেলার তারকারা ৩৮ তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের মর্যাদা লাভ করেন। সম্প্রতি তাঁরা ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে যোগদান করেন। এদের মধ্য দু’জনকে ময়মনসিংহ, একজনকে জামালপুর জেলা প্রশাসনে পদায়ন করা হয়। স্বপ্নজয়ী তারকা জান্নাতুল মাওয়া (তাহরিমার) জন্ম ভোলার চরফ্যাশন পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের কলেজ রোডে। পিতা মৃত শাজাহান, মাতা অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিদর্শিকা জান্নাতুল ফেরদৌসীর দু’ কন্যা এক পুত্রের মধ্য জান্নাতুল মাওয়া সবার বড়। তাঁদের একমাত্র পুত্র বেসরকারি কেয়ার মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ১ম বর্ষে, আরেক কন্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। সমাজ সভ্যতার শত বাঁধা মোকাবেলা করে মেধার যোগ্যতায় জান্নাতুল মাওয়া ৫ম এবং ৮ম শ্রেণিতে বৃত্তি লাভ করেন। চরফ্যাশন বালিকা বিদ্যালয় হতে এসএসসি এবং চরফ্যাশন সরকারি কলেজ হতে এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ২০১৫ সালে বাবার মৃত্যু হলে কিছুটা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। নিজের অন্তরে বেদনার ব্যাপারটি অন্তরেই গেঁথে রাখলেন। দৃঢ়প্রত্যয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে গেলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস কৌশল বিভাগ হতে স্নাতকে সিজিপিএ- ৪-এর মধ্য ৩.৯১ এবং স্নাতকোত্তরে সিজিপিএ- ৩.৮৩ পেয়েছেন। তিনি ময়মনসিংহে জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক হিসেবেও চাকুরী করেছেন। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

স্বপ্ন জয়ী তারকা রায়হান মাহামুদের জন্ম ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার শষীভূষণ থানার চরকলমি গ্রামে। পিতা মো.মোস্তফা মিয়া আনজুর হাট আলিম মাদ্রাসার সিনিয়র সহকারী শিক্ষক (বাংলা), মাতা পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা আলো নূর বেগমের দু’কন্যা এক সন্তানের মধ্য রায়হান মাহমুদ সবার ছোট। ছোটবেলা হতে মেধাবী রায়হান মাহামুদ ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে বৃত্তিলাভ করেন। আনজুরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে এসএসসিতে জিপিএ ফাইভ এবং ঢাকার মাইলস্টোন কলেজ হতে গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিএসসি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সিজিপিএ ৪-এর মধ্য ৩.৫৮ পেয়েছেন। দ্বীপজেলা ভোলার প্রত্যন্ত গ্রাম হতে উঠে আসা এ স্বপ্নজয়ী তরুণ তাঁর নিরলস পরিশ্রম,একাগ্রতা, ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে সাফল্যের শিখরে পৌছেছেন। রায়হান মাহমুদ সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে জামালপুর জেলা প্রশাসনে কর্মরত রয়েছেন।

স্বপ্নজয়ী তারকা শৈশব-কৈশোরের দুরন্ত মেধাবী এরফানুর রহমানের জন্ম ভোলার বোরহানউদ্দিন পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডে। পিতা ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক কায়কোবাদ মিয়া, মাতা শিক্ষিকা রাশিদা বেগমের দু’পুত্রের মধ্য এরফানুর রহমান বড়। ছোট ছেলে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে অধ্যয়নরত। এরফানুর রহমান ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করেন। ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ হতে এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন,একই প্রতিষ্ঠান হতে এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন। দেশের স্বনামধন্য বিদ্যাপিঠ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগ হতে স্নাতকে সিজিপিএ ৪-এর মধ্য ৩.৫৮ এবং স্নাতকোত্তরে ৩.৫০ পেয়েছেন। ৩৮তম বিসিএসের আগে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসে চাকুরী করেন। অদম্য মেধাবী এরফানুর রহমান তাঁর স্বপ্ন পূরণে নিজের ইচ্ছা শক্তি আর প্রচেষ্টাকে কাজে লাগিয়ে সফলতা পেয়েছেন। তিনি ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

ভোলার গর্বিত স্বপ্নজয়ী তারকারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সহিত পালনে সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। ভোলার রাজনৈতিক, সামজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাদের এই সাফল্যের জন্য প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

এনএফ৭১/জেএস/২০২১




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top