মন্দে আমাদের আস্থা বেড়েছে: আফজাল হোসেন
রাজীব রায়হান | প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১৪:০৭
আফজাল হোসেন, দেশের একজন মেধাবী অভিনেতা, চিরসবুজ নায়ক। তবে এর বাইরেও তার আছে আরও কিছু পরিচয়। তিনি একাধারে নির্মাতা, চিত্রশিল্পী ও লেখক। সমাজ ও দেশের বিভিন্ন অসঙ্গতি উঠে আসে তার লেখায়। বিশেষকরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি খুবই সরব থাকেন।
গেল বুধবার রাতে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন এই বরেণ্য অভিনেতা। তার সেই লেখায় উঠে এসেছে বিশ্বাস- অবিশ্বাসের কথা। এই অভিনেতার কথায়, ‘আমাদের মধ্যে বাসা বেঁধে থাকে অবিশ্বাস। অবিশ্বাস সেখানে নিয়মিত ডিম পেড়ে বাচ্চা ফুটিয়ে চলেছে। সেই বাচ্চারা ছোট বড় মাঝারি- নানা সাইজের। পৃথিবীর বহু দেশে অবিশ্বাস বসবাসের জন্য জায়গা পায় না। আমাদের মনে তার জন্য অগাধ জায়গা। সে জায়গা অতি নিরাপদ। অবিশ্বাস বাসা বেঁধেই বুঝে ফেলে, এখন থেকে কখনোই উচ্ছেদ হতে হবে না।’
এরপর তিনি লিখেছেন, ‘কোনো বাড়ির ঠিকানা খুঁজছেন, কেউ একজন দেখিয়ে দিল- বাম দিক দিয়ে সোজা এগিয়ে গেলে ডাইনে রাস্তা পাবেন। সে রাস্তা ধরে খানিকটা সামনে গেলে বামে পাবেন আপনার ঠিকানা। বিস্তারিত শুনে আপনি এগুচ্ছেন কিন্তু মনে সন্দেহ নিশপিশ করবে, লোকটা ভুল রাস্তা দেখিয়ে দেয়নি তো! দোকান থেকে অনেক দরাদরি করে কোনো জিনিস কিনেছেন, যে দাম বলেছিল তার থেকে ছয়শত টাকা কমাতে পেরে খুশিমনে কি বাড়ি ফিরতে পারেন?
মনে হতে থাকবে, ছয়শত টাকা কমানো গেছে, তার মানে আরও শ খানেক হয়ত কমানো যেত। দোকানদার ব্যাটা অনেক ঠকিয়েছে। ডাক্তার প্রেসক্রিপশনে ওষুধ লিখে দিয়েছে। মাত্র তিনটা ওষুধের নাম। মনে সন্দেহ লাফঝাঁপ দেওয়া শুরু করে দেবে- এই কটা ওষুধে রোগ ভালো হবে কি?’
আফজাল হোসেন লিখেছেন, ‘কোনো বড় কর্তার অফিস রুমের বাইরে কেউ অপেক্ষা করছেন। জানানো হয়েছে রুমে একজন রয়েছেন, তিনি বের হলে আপনি যাবেন। কুড়ি বাইশ মিনিট পরে কর্তার ঘর থেকে একজন নারী বেরিয়ে আসেন। বাইরে অপেক্ষারত মানুষটা উঠে দাঁড়ান। যে সমস্যা নিয়ে কর্তার কাছে আসা- তা মাথা থেকে হুট করে সরে গেছে। মাথায় ঢুকে পড়েছে বড় কর্তা আর বেরিয়ে যাওয়া মেয়েটি। এতটা সময় তাকে বাইরে বসিয়ে রেখে ঘরে আসলে কি হচ্ছিল?
মাছ বিক্রেতা বলছে, দ্যাখেন স্যার টাটকা মাছ। মনে মনে হাসবে ক্রেতা- ব্যাটা পচা মাছ টাটকা দেখানোর নতুন কোনো ত্বরিকা পেয়ে গেছে বোধহয়! পদে পদে এই রকম অসংখ্য বিষয়ে অবিশ্বাস ছায়ার মত আমাদের অনুসরণ করে চলেছে। মানুষ আগ্রহ নিয়ে খবর শোনে, দেখে, পড়ে- সবই অভ্যাসবশত, বিশ্বাস করে না।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘কেউ একজন বলল- নিরাশ হওয়ার কিছু নেই, দেশের ভালো হবে। শোনে, বিশ্বাস করে না। আবার কেউ যদি খুবই বিরক্তি দেখিয়ে বলে- দেশের ভালো হবে, তার কোনো লক্ষন দেখি না। এরকম মন্দ কিছু বললে, শুনলে মন সন্তুষ্ট হয়। মন্দ কথা সহজে বিশ্বাস করে ফেলে। মন্দে আমাদের আস্থা বেড়েছে।
কারও প্রসঙ্গে, যে কোনো বিষয়ে মন্দ কথা মন্দভাবে বললে আমাদের বিশ্বাস করতে আরাম লাগে। ভালোয় আমাদের প্রবল অবিশ্বাস আর সকল মন্দে সপে দিয়েছি মন। এটা ভয়ংকর এক রোগ। যার চিকিৎসা করা প্রয়োজন, তাও মনে করি না কেউ, বরং যদি কাউকে শোনানো হয়, এটা একটা রোগ- উল্লেখ করা মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে। মন্দে মন্দে আমরা আরও রুগ্ন হয়ে মরব। জীবনভর অবিশ্বাসের সুখ ভোগ করে করে যখন মরব- তখনও কি আমাদের মরদেহ অবিশ্বাস আক্রান্ত থাকবে?’
বিষয়: ভয়ংকর রোগ মন্দে আস্থা
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।