জাবির প্রাণ ফিরিয়েছে অতিথি পাখিরা
ডেস্ক রিপোর্ট | প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর ২০২০, ১৫:২১
নিজস্ব প্রতিবেদক:
দৃষ্টি ফেরাতে ভোরের শিশিরে সিক্ত ঘাসে কুয়াশার রেখা। ক্রমেই সূর্যের আলোতে ম্লান হচ্ছে কুয়াশার আভা। হঠাৎ উত্তরের শিরশিরে হাওয়ার ঝাঁকুনি। প্রকৃতি এভাবেই জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। বছরের এই সময়টাতে নৈসর্গের আরেক নাম হয়ে ওঠে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাসে লাল শাপলায় রক্তিম শোভিত জলাশয়ে আগমন ঘটে ভিনদেশী পাখিদের।
গত ১৭ মার্চ থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বন্ধ রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীশূন্য বিশ্ববিদ্যালয় নীরব-নিস্তব্ধতার শিকল চিহ্ন করে পরিযায়ী পাখির আগমনে ফিরে ফেলো নতুন প্রাণ।
রাজধানী ঢাকার অদূরে বন্ধুর ও সমতল ভূমিতে গড়ে ওঠা এ ক্যাম্পাসে শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে পাখির সংখ্যা। লেকের জলে পাখিদের জলকেলি আর খুঁনসুটির দৃশ্য নিসন্ধে চোখ জুড়াবে যে কারো।
এরই মধ্যে দেশীয় জাতের পাশাপাশি বিদেশি হাঁসজাতীয় এসব পাখি বরফ শুভ্র হিমালয় ও সুদূর সাইবেরিয়া থেকে এসে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনের লেক, ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের ভেতরের লেক, ট্রান্সপোর্ট সংলগ্ন লেকসহ সুইমিংপুল সংলগ্ন জয়পাড়া লেকে।
নিজ দেশের তীব্র শীত থেকে বাঁচতে প্রতিবছরই বাংলাদেশের মতো নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে উড়ে আসে এসব পাখিরা। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু সময় কাটিয়ে পরে আবার ফিরে যায় নিজ দেশে। তাই এদের বলা হয় অতিথি পাখি। এই পাখিদের তালিকা রয়েছে- সরালি, গার্গেনি, পিচার্ড, মানিকজোড়, মুরগ্যাধি, জলপিপি, নাকতা, কলাই, ফ্লাইপেচার, পাতারি, চিতা টুপি, লাল গুরগুটিসহ নানা প্রজাতি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৬ সাল থেকেই এখানে প্রথম অতিথি পাখির আগমণ শুরু হয়। এসব পাখির মধ্যে ১২৬টি দেশীয় ও ৬৯টি বিদেশি প্রজাতি মিলিয়ে মোট ১৯৫ প্রজাতির পাখি রয়েছে। অতিথি পাখিরা অক্টোবরের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জলাশয়ের আশপাশে আশ্রয় নিতে শুরু করে। আর ডিসেম্বরের দিকে তা পরিপূর্ণ রূপ পায়।
সাধারণত এসব পাখি নভেম্বরের শুরুতে আসতে শুরু করলেও এবার সেপ্টেম্বর মাসেই আসতে শুরু করে। সেই সঙ্গে এবার বেড়েছে পাখির সংখ্যা ও প্রজাতি।
গত বছরের ডিসেম্বরে পাখি শুমারিতে ক্যাম্পাসে ৫ হাজারের কিছু বেশি পাখি আসার রেকর্ড করা হয়। তবে এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪টি লেকে ৭ প্রজাতির ৫ হাজারের মতো পাখি এসেছে বলে প্রাথমিক শুমারিতে জানা গেছে।
প্রজাতিগুলো হলো- নাকতা হাঁস, খুনতে হাঁস, জিরিয়া হাঁস, ভুতি হাঁস, লেঞ্জা হাঁস, আফ্রিকান কম্বডাক, ছোট সরালি ও বড় সরালি। এর মধ্যে ছোট সরালি দেশের হাওর অঞ্চল থেকে আসে। সাইবেরিয়া, নেপাল, চীন, ভারতের আসাম, অরুনাচল অঞ্চল থেকে আসে বড় সরালি জাতের পাখিরা।
পাখি বিশেষজ্ঞ ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসান বলেন,গত ৮-৯ নভেম্বর প্রাথমিকভাবে পাখির ওপর শুমারির মাধ্যমে ধারণা করা হচ্ছে, এবার অন্যবারের থেকে বেশি সংখ্যক পাখি আসতে পারে। তবে বিগত বছরগুলোতে ডিসেম্বরে যে পরিমাণ পাখি এসেছিল এবার নভেম্বরেই আমরা সেই সংখ্যক পাখি দেখতে পাচ্ছি।
ট্রান্সপোর্ট ও প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন দুই লেকের রাস্তার পাশ থেকে সহজেই পাখি দেখা যায়। যে কারণে এই দুই লেকের পাশেই দর্শনার্থীর ভিড় একটু বেশি লক্ষ্য করা যায়। রাস্তা ও জনসমাগমের ঠিক বিপরীতে এই দুই লেকের শুধু একপাশেই পাখিদের অবস্থান।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানুষের উৎপাত, গাড়ির আওয়াজ ও আবর্জনার কারণে পাখিরা দূরে থাকে। কারন পাখিরা মানুষের ভীড় দেখে ভয় পায়। অনেক সময় মানুষ অসচেতন হয়ে পাখি দেখতে নির্দিষ্ট বেড়া অতিক্রম করে কাছে যাওয়ার চেষ্টা করে। এতে পাখিদের অবাধ বিচরণ ব্যহত হয়।
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। ফলে অন্যান্য বছরের মতো এবার ক্যাম্পাসে পাখি দেখা হচ্ছে না শৌখিন দর্শনার্থীদের। নিষেধাজ্ঞা ভেঙে অনেকেই প্রবেশ করায় করোনার ঝুঁকি বাড়ছে ক্যাম্পাসে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বলেন, ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ বন্ধে প্রশাসন অত্যন্ত তৎপর। তবে মানুষের অসচেতনতা ও অসহযোগিতার কারণে তা সম্পূর্ণভাবে সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের নিরাপত্তাকর্মীরা নানাক্ষেত্রে বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে। পাখি সংরক্ষণে প্রতিবছরের মতো এবারও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ পাখি সংরক্ষণ ও এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে ২০০১ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে পাখিমেলা করে আসছে। তবে এবার করোনাভাইরাসের কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় পাখি মেলা হওয়ার সম্ভাবনা কম।
এনএফ৭১/এবিআর/২০২০
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।