মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১

কোন সময় সহবাস করা নিরাপদ?

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০২৪, ১৮:৪১

ছবি: সংগৃহীত

অনেকের প্রশ্ন, অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এড়াতে মানুষ কী করতে পারে? পিরিয়ডের সঙ্গে নিরাপদ সহবাসের (সেফ সেক্স) কোনো সম্পর্ক আছে কি না। সহবাসের পর স্পার্ম বা শুক্রাণু নারীর জরায়ুর ভেতর কত দিন পর্যন্ত থাকতে পারে।

ডা. ফাহমিদা সুলতানা জানান, স্পার্ম জরায়ুতে সাধারণত তিন দিনের বেশি টেকে না। ওই তিন দিনের যেকোনো এক দিন যদি ডিম্বাশয় ডিম্বাণু উৎপন্ন করে, সেই ডিম্বাণু ডিম্বনালির ভেতর দিয়ে জরায়ুতে পৌঁছে শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয়। তখন এই নারী গর্ভবতী হয়। এখন প্রশ্ন হলো, কখন ডিম্বাশয় ডিম্বাণু উৎপাদন করে।

পিরিয়ডের মানে হলো ওই নারী ডিম্বাণু উৎপাদন করতে সক্ষম। তবে ডা. ফাহমিদা সুলতানা যোগ করেন, এর ব্যতিক্রমও আছে। পিরিয়ড হয়েছে মানেই যে ডিম্বাশয় ডিম্বাণু উৎপাদন করেছে, এমনটা না-ও হতে পারে।

সাধারণত ডিম্বাণু যতক্ষণে পরিপক্ব হয়, ততক্ষণে জরায়ু রাসায়নিক সংকেত পেয়ে ভেতরে একটা নরম, পুরু আবরণের সৃষ্টি করে। ডিম্বাণু নিষিক্ত না হলে সেটা নষ্ট হয়ে যায়। আর আবরণসহ সবটা ভেঙে গিয়ে পিরিয়ডের রক্ত আকারে বের হয়ে যায়।

সাধারণত দুবার পিরিয়ডের মাঝামাঝি সময়ে ডিম্বাণু পূর্ণাঙ্গ হয়। সাধারণভাবে পিরিয়ড শুরুর ১৪তম দিনে বা এর আশপাশের সময়ে ডিম্বাশয় ডিম্বাণু উৎপাদন করে। পূর্ণাঙ্গ ডিম্বাণু জরায়ুতে ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত কার্যকর থাকে। তাই সেই সময়টা গর্ভধারণের জন্য সবচেয়ে উর্বর।

সাধারণভাবে ধরা হয়, পিরিয়ডের শুরুর দিন থেকে ধরলে ৯ থেকে ১৯তম দিনের মাঝে, অর্থাৎ এই ১০ দিনের যেকোনো দিন জরায়ুতে শুক্রাণু থাকলে নিষিক্ত হতে পারে। তবে কি এই ১০ দিন বাদে অন্য সময় যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা নিরাপদ?

উত্তর হলো, না, নিরাপদ নয়। তবে অন্য দিনগুলোতে কোনো সুরক্ষাব্যবস্থা ছাড়া সহবাস করলে গর্ভবতী হয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম। তবে পুরোপুরি নিরাপদ, এটা বলা যাবে না। কেননা, ডিম্বাশয় যে ৯ থেকে ১৯তম দিনের মাঝেই ডিম্বাণু উৎপাদন করবে, এমন কোনো কথা নেই। এটা নানা কারণে এগোতে বা পেছাতে পারে।

ধরুন আপনি পিরিয়ডের শেষ দিকে সহবাস করেছেন, আর সেই মাসে ডিম্বাশয় আগে আগেই ডিম্বাণু উৎপাদন করেছে। আর শুক্রাণু তো পাঁচ দিন পর্যন্ত থাকেই। সে ক্ষেত্রে নিষিক্ত হওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকেই যায়। টেনশন বা দুশ্চিন্তা, ডায়েট, ভারী শরীরচর্চা এগুলো ডিম্বাশয়কে ডিম্বাণু উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রভাবিত করতে পারে। তাই অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভাবস্থা এড়াতে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই।

তথ্যসূত্র: হেলথলাইন। তথ্যসহায়তা: ডা. ফাহমিদা সুলতানা (এমবিবিএস, বিসিএস, হেলথ, যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স) ও ডা. নুসরাত জাহান (এমবিবিএস, বিসিএস, হেলথ)

কীভাবে গণনা করতে হবে

যে নারীরা প্রাকৃতিক বা ন্যাচারাল পদ্ধতি ব্যবহার করতে চান, তাঁদের পূর্ববর্তী ছয় মাসের মাসিকের হিসাব রাখতে হবে। একবার মাসিক শুরু হওয়া থেকে পরবর্তী মাসিক শুরু হওয়া পর্যন্ত কত দিনের ব্যবধান থাকে, তা লিখে রাখতে পারলেই ভালো। তারপর সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ব্যবধানের মাসিকচক্র থেকে ১৮ দিন বিয়োগ করতে হবে আর সবচেয়ে দীর্ঘ মাসিক চক্র থেকে ১১ দিন বিয়োগ করতে হবে।

যেমন কারও মাসিকচক্রের হিসাব যদি এমন হয় যে ২৫ থেকে ৩০ দিন, তাহলে হিসাবটা হবে: ২৫-১৮ = ৭ ও ৩০-১১ = ১৯ তাহলে তার ওভুলেশনের (বা ডিম্বাণু স্ফুরণের সময়) সম্ভাবনা মাসিকের ৭ম থেকে ১৯তম দিন পর্যন্ত। এ সময়টাকে ডেঞ্জার পিরিয়ড বা ফার্টাইল পিরিয়ড বলে। এ সময় সহবাস বন্ধ রাখা বা স্বামী কনডম ব্যবহার করলে গর্ভধারণের ঝুঁকি কমে যায়।

সীমাবদ্ধতাগুলো কী

এই পদ্ধতি তাঁদের জন্যই প্রযোজ্য, যাঁদের মাসিক নিয়মিত। অনিয়মিত মাসিক যাঁদের, তাঁদের জন্য এ পদ্ধতি ফলপ্রসূ হবে না। নানা রকম গবেষণায় দেখা গেছে, এ পদ্ধতির ফেইলর রেট অনেক বেশি, এমনকি ১৪ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

যাঁরা বাচ্চা নিতে চান

যেসব দম্পতি বাচ্চা নিতে চাইছেন, তাঁরা ঠিক এভাবে হিসাব–নিকাশ করে ডেঞ্জার পিরিয়ডে সহবাস করলে ফলপ্রসূ হবে। ওভুলেশন হওয়ার পর ডিম্বাণু সাধারণত ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ভালো থাকে। আবার শুক্রাণু ৩-৫ দিন পর্যন্ত নারীর যোনিপথে জীবিত থাকতে পারে। এই পিরিয়ডে তাই প্রতিদিন সহবাস করতে হবে, এমন ধারণা ঠিক নয়। চিকিৎসকেরা সাধারণত এক দিন অন্তর সহবাসের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

ডা. শাহীনা বেগম। কনসালট্যান্ট, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ, বিআরবি হাসপাতাল লিমিটেড



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top