দেশে প্রতি লাখে ক্যানসারে আক্রান্ত ১০৬ জন: গবেষণা
Nasir Uddin | প্রকাশিত: ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৭:৪৯
দেশে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ১০৬ জনের ক্যান্সার আক্রান্ত। শনিবার (১ ফেব্রয়ারি) বিএসএমএমইউর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে ‘বাংলাদেশে ক্যান্সারের বোঝা: জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি’ শীর্ষক এক গবেষণার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রাথমিকভাবে ২ লাখ ১ হাজার ৬৬৮ জন অংশগ্রহণকারী ৪৬ হাজার ৬৩১টি পরিবারের মধ্যে থেকে গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত হয়। যার মধ্যে ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ নারী। মোট ক্যানসার রোগীর সংখ্যা ছিল ২১৪ এবং ক্যানসারের প্রাদুর্ভাব ছিল প্রতি ১ লাখে ১০৬ জন। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রতি লাখে ১১৮ জন এবং নারীদের জন্য, প্রতি এক লাখে ৯৬ জন।
গবেষণায় দেখা যায়, ৯২.৫ শতাংশ ক্যান্সার রোগী ১৮ থেকে ৭৫ বছর বয়সী ছিলেন। ২.৪ শতাংশ রোগী ১৮ বছরের নিচে এবং ৫.১ শতাংশ রোগী ৭৫ বছরের ওপরে ছিলেন।
গবেষণা অনুযায়ী, শীর্ষ ৫টি ক্যান্সার ছিল– স্তন ক্যান্সার (১৬.৮ শতাংশ), ঠোঁট ও মুখগহ্বরের ক্যান্সার (৮.৪ শতাংশ), পাকস্থলীর ক্যান্সার (৭ শতাংশ), কণ্ঠনালীর ক্যান্সার (৭ শতাংশ) এবং জরায়ু ক্যান্সার (৫.১ শতাংশ)।
নারী ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ১৯ শতাংশ প্রজনন অঙ্গের ক্যান্সারে আক্রান্ত (জরায়ু ক্যান্সার ১১ শতাংশ, ডিম্বাশয় ৫ শতাংশ, এবং গর্ভাশয় ৩ শতাংশ)।
ক্যান্সার রোগীদের আরও কিছু রোগ ছিল– হাইপারটেনশন (১৭ শতাংশ), ডায়াবেটিস (১১ শতাংশ), হৃদরোগ (৬ শতাংশ), ক্রনিক কিডনি রোগ (৩ শতাংশ) এবং স্ট্রোক (২ শতাংশ)।
৭৫.৮ শতাংশ পুরুষ ক্যান্সার রোগী ছিলেন ধূমপায়ী। ৪৬ শতাংশ ক্যান্সার রোগী তামাক সেবন করেন না।
ক্যান্সার রোগীদের ৬০ শতাংশ একাধিক চিকিৎসা যেমন অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপি নিয়েছেন। ৭.৪ শতাংশ রোগী রোগ নির্ণয়ের পর কোনো চিকিৎসা পাননি।
২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩ হাজার ৪১১টি পরিবারের ৫৮ হাজার ৫৩৯ জন অংশগ্রহণকারীকে ফলো-আপ করা হয়েছে।
নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত শীর্ষ ৩টি ক্যান্সার ছিল– ফুসফুসের ক্যান্সার (১৬.১ শতাংশ), যকৃতের ক্যান্সার (১২.৯ শতাংশ) এবং কণ্ঠনালীর ক্যান্সার (১২.৯ শতাংশ)।
গবেষকরা বলেছেন, বর্তমান জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা উচিত।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, নিত্যনতুন জ্ঞান তৈরিতে গবেষণার বিকল্প নেই। বিএসএমএমইউ থেকে সেই গবেষণায় পরিচালনা করা উচিত যা রোগীদের কল্যাণে কাজে আসে। যেসব গবেষণা দেশের মানুষের, দেশের রোগীদের উপকার হবে সে ক্ষেত্রে সরকারের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক শাহিনুল আলম বলেন, গণআকাঙ্খা পূরণ করে এমন গবেষণার জন্য ফান্ডের কোনো সমস্যা হবে না। বিএসএমএমইউর উদ্যোগে পরিচালিত বাংলাদেশে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রি থেকে যে পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে তা দেশের মানুষের ক্যানসার প্রতিরোধ, প্রতিকার ও ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসায় বিরাট ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে এই পরিসংখ্যান বাংলাদেশে ক্যানসার নিয়ে গবেষণার বহুমুখী দ্বার উন্মোচন করেছে।
প্রধান গবেষক পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জামান জানান, ক্যানসার বিশ্বে মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর একটি। বাংলাদেশে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রি বা নিবন্ধন (পিবিসিআর) না থাকায় প্রতিবেশী দেশগুলোর তথ্য ব্যবহার করে ক্যানসারের পরিস্থিতি অনুমান করতে হয়। এর ফলে বাংলাদেশে ক্যানসারের সঠিক পরিস্থিতি জানার ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা আছে। তাই জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বা বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার নিবন্ধন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্যানসারের পরিস্থিতি নির্ণয় করা জরুরি হয়ে পড়েছিল। এজন্যই এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।