বাঙালির ইতিহাসের কালিমালিপ্ত দিন আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৫ আগষ্ট ২০২২, ১২:১১
আজ ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে ঘাতকদের নির্মম বুলেটে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ঐতিহাসিক ভবনে শহীদ হন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই রাতে প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, ভাই শেখ নাসের ও কর্নেল জামিল।
ঘাতকদের বুলেটে আরও প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর ভাগনে মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, শিশু বাবু, আরিফ খান রিন্টুসহ আরও অনেকে। দেশে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা।
বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো বাঙালি তার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে না। সে জন্য তিনি গণভবনের পরিবর্তে থাকতেন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের নিজ বাসভবনে। এখানে থেকেই তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে সর্বশক্তি নিয়ে ব্রতী ছিলেন। ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকদের বুলেটের মুখেও বঙ্গবন্ধু ছিলেন অকুতোভয়। প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তোরা কী চাস? কোথায় নিয়ে যাবি আমাকে?’
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক নীরদ সি চৌধুরী বাঙালিদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি বিশ্বের মানুষের কাছে নিজেদের আত্মঘাতী চরিত্রই তুলে ধরেছে।
লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্টের সংখ্যায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশের লাখ লাখ লোক শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকাণ্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট খুনিরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে ঘৃণ্য ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট থেকে দীর্ঘ ২১ বছর বাঙালি জাতি বিচারহীনতার কলঙ্কের বোঝা বহন করতে বাধ্য হয়।
২০২২ সালের শোক দিবসকে সামনে রেখে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার (১৫ আগস্ট) সরকারি ছুটি। জাতীয় পতাকা থাকবে অর্ধনমিত। সরকারি ও বেসরকারি ভবনে উড়বে কালো পতাকা। দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পৃথক পৃথক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ ছাড়া, সারাদেশে দলটির নেতাকর্মীদের উদ্যোগে এতিম ও দুস্থ মানুষদের মাঝে খাদ্য বিতরণ ও গণভোজের আয়োজন করা হয়েছে।
জাতীয় শোক দিবস যথাযথ মর্যাদায় এবং ভাবগম্ভীর পরিবেশে স্বাস্থ্য-সুরক্ষা বিধি মেনে পালনের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দিবসটিতে দেশের সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।
এদিন সকাল সাড়ে ছয়টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে শ্রদ্ধা জানানো হবে। রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সমন্বয় করে তা জানানো হবে। সকাল আটটায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে। দুপুর ১২ টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার ভোরে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন। শ্রদ্ধা জানানো শেষে প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যাবেন। সকাল ১০টায় প্রথমে তিনি সরকারের পক্ষে শ্রদ্ধা জানাবেন। পরে দলীয় নেতাদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন বলে জানা গেছে।
১৬ আগস্ট বিকেল চারটায় আওয়ামী লীগের আয়োজনে শোক দিবসের স্মরণ সভা করা হবে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এনএফ৭১/আরআর/২০২২
বিষয়: বঙ্গবন্ধু শোক দিবস শহীদ আওয়ামী লীগ
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।