মিলবে যেসব সুবিধা

আগামী ২ সেপ্টেম্বর চালু হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ

রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ২২ আগষ্ট ২০২৩, ২০:১৫

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মহাসড়কে বিড়ম্বনা নিরসনে আমাদের কতই না আয়োজন। সেই আয়োজনের কাফেলায় যুক্ত হচ্ছে দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী গিয়ে শেষ হবে এই কর্মযজ্ঞ। বিমানবন্দরের কাওলা থেকে উড়ালসড়কের ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের কাজ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। যান চলাচলের জন্য এটি ২ সেপ্টেম্বর খুলে দেয়া হবে।

যানজট নিরসনে নেয়া সবচেয়ে বড় এই প্রকল্পের সংযোগ সড়কসহ দৈর্ঘ্য ৪৬.৭৩ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়েটিতে ১১টি টোল প্লাজা থাকবে। যার পাঁচটিই এক্সপ্রেসওয়ের উপরে। এর উপর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার যানবাহন চলাচল করতে পারবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি ঢাকার উত্তর-দক্ষিণে বিকল্প সড়ক হিসেবে কাজ করবে।

সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগে (পিপিপি) তিন ধাপে উড়াল সড়ক প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রথম ধাপ হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত। দ্বিতীয় ধাপ বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত। তৃতীয় ধাপ মগবাজার রেলক্রসিং থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত।

উড়াল সড়কের রুট হচ্ছে—কাওলা, কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত। পুরো পথই রেললাইন ঘেঁষে। প্রকল্পটির বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা।

প্রথম অংশের ফিনিশিংয়ের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। রাস্তার বাতি বসানোর কাজ শুরু করা হয়েছে। রাস্তার দুই পাশে রেলিং বসানোর কাজও চলছে। কয়েক দিনের মধ্যে কাওলা থেকে বনানী অংশ পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যাবে।

এক্সপ্রেসওয়েতে সব ধরনের যানবাহন চলবে না, দ্রুতগতির যানবাহন চলবে। এসব যানবাহন কোথাও থামবে না। থামলেও ব্যবহার করতে হবে একটি নির্দিষ্ট লেন, যা মূল এক্সপ্রেসওয়ের বাইরে। এক্সপ্রেসওয়ের সুবিধা নিতে যানবাহন কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করতে হবে নির্দিষ্ট পরিমাণ টোল। আর এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী যানবাহন গন্তব্যে পৌঁছে যাবে অন্য যানবাহনের তুলনায় কম সময়ে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।

প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, উদ্বোধন হতে যাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতি হবে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। থ্রি-হুইলার, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ও পথচারী এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল করতে পারবে না। অন্যান্য যানবাহনকে এ পথ ব্যবহারে দিতে হবে টোল। সর্বনিম্ন টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। প্রাইভেট কার, জিপ, মাইক্রোবাস, ট্যাক্সির মতো হালকা শ্রেণীর যানবাহনের জন্য টোলের এ হার ধার্য করা হয়েছে। অন্যদিকে সর্বোচ্চ ৬২৫ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে বড় ট্রাকের (ছয় চাকার বেশি) জন্য।

সেতু বিভাগ বলছে, প্রকল্পটি ঢাকা শহরের উত্তর-দক্ষিণ করিডোরের সড়কপথের ধারণক্ষমতা বাড়াবে। অন্যদিকে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে এটি সংযুক্ত হলে ঢাকা ইপিজেড ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের যোগাযোগ আরো সহজ হবে। ফলে ঢাকার যানজট নিরসনের পাশাপাশি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।

উড়ালসড়ক থেকে নামার র‌্যাম্পগুলো শহরের যানজট বাড়িয়ে দিতে পারে বলে মনে করছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, শহর এলাকায় যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার যে সমাধান দেয়ার বদলে উল্টো তা বাড়িয়ে দেয়, তার সবচেয়ে ভালো উদাহরণ ঢাকার বিভিন্ন ফ্লাইওভার। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‌্যাম্পগুলোও একই অবস্থা তৈরি করতে যাচ্ছে। এগুলোর কারণে ঢাকার যানজট বাড়বে না কমবে—সে বিতর্কগুলো আমরা ২০১০ সালের দিকেই করেছি। কিন্তু সরকার আমাদের কথায় কান দেয়নি।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top