আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২৩৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৩:১৪

ছবি: সংগৃহীত

বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা কয়েকটি সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের ডাকা দুই দিনের হরতালের প্রথম দিনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সারাদেশে ২৩৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়ন করা হয়েছে। 

রোববার (১৯ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া এ হরতাল চলবে মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) সকাল ৬টা পর্যন্ত। তবে হরতালের প্রথম দিন সকালে রাজধানীতে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। সকালে ঢাকার অভ্যন্তরীণ গণপরিবহনের চাপ কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে যানবাহনের সংখ্যা। সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যক্তিগত গাড়িও চলছে স্বাভাবিকের মতোই। কর্মজীবীরা কর্মস্থলে যেতে শুরু করেছেন। তবে গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জনমনে কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করছে।

হরতালের সমর্থনে সড়কে কাউকে পিকেটিং করতে দেখা যায়নি। তবে হরতাল শুরুর আগের রাতেই সারা দেশে অন্তত ৮টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। সরিষাবাড়ীতে আগুন দেওয়া হয়েছে একটি ট্রেনে। রোববার সকালে রাজধানীর পুরান ঢাকায় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

এ অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঢাকা ও আশপাশের জেলায় ২৮ প্লাটুনসহ সারাদেশে ২৩৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবির জনসংযোগ দফতর থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীতে র‍্যাবের ১৬০টি টহল দলসহ সারাদেশে ৪৬০টি টইল দল মোতায়েন রয়েছে। র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানিয়েছেন।

এদিকে সকাল থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। তাদের পক্ষ থেকে বরাবরই জানানো হয়েছে, যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করে যাবেন তারা।

গত তিন সপ্তাহে নিয়মিত হরতাল-অবরোধের কারণে দেশে এখন পর্যন্ত ১৫০টিরও বেশি বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবুও রোববার থেকে ডাকা হরতালে বাস চলাচল স্বাভাবিক রাখতে মালিকদের অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।

বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির পক্ষ থেকে হরতালের ডাক দেন দলটি যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এরপর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাছুমও এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একই সময়ে হরতালের ডাক দেয়।

গত ২৮ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা ও সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ ডাকে বিএনপি। সমাবেশ শুরুর আগেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় দলটির নেতা–কর্মীরা। এ সময় বিক্ষুব্ধ বিএনপি কর্মীরা কাকরাইলে প্রধান বিচারপতির বাসভবন ও জাজেস কমপ্লেক্সে হামলা চালায়। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালেও।

বিএনপিকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন পুলিশ সদস্য নিহত হন। আহত হন শতাধিক। এ সময় সমাবেশের সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীর ওপরও হামলা করা হয়। ভাঙচুর করা হয় গণমাধ্যমের কয়েকটি গাড়ি ও মোটরসাইকেল।

ওই দিন সন্ধ্যায় রোববার সারা দেশে সকাল–সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। হরতালের মধ্যেও বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পরে ৩১ অক্টোবর থেকে টানা তিনদিনের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি। তাদের কর্মসূচির সাথে মিল রেখে জামায়াতে ইসলামীও তিনদিনের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে। এরপর থেকে বিভিন্ন মেয়াদে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে আসছে দলটি।

সব শেষ, আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবিতে বুধবার (১৫ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ পালন করে বিএনপি। এটি ছিল তাদের পঞ্চম দফার অবরোধ কর্মসূচি।

 

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top