সায়মা ওয়াজেদ পুতুল: আপন আলোয় আলোকিত হওয়া এক অনন্য প্রতিভা

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। বিনয়ী ও নিরহঙ্কারী এক মানুষের নাম। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পরমাণু বিজ্ঞানী ডক্টর এম ওয়াজেদ আলীর কন্যা। আপন কর্মদক্ষতায় নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের জন্মদিন আজ। ১৯৭২ সালের এদিন জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

বিশ্বের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের মেধা, মনন, প্রতিভা বিকাশে কাজ করে যাচ্ছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। তিনি বিশেষ শিশুদের পরম বন্ধু, মানবসেবার অন্যতম অগ্রদূত। তারুণ্যের অনুকরণীয় আদর্শ ও স্বপ্নজয়ের উজ্জ্বল প্রতীক। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের অধিকার আদায়ের প্রতীকী হিসেবে নিজেকে তৈরী করেছেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের এই যোগ্য উত্তরসূরি।

২০০৮ সাল থেকে শিশুদের অটিজম ও স্নায়বিক জটিলতা নিয়ে কাজ শুরু করেন সায়মা ওয়াজেদ। অল্প সময়ের মধ্যে তার কাজ বিশ্বজুড়ে প্রশংসা লাভ করে। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে পুতুলকে হু অ্যাক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে ডব্লিউএইচও।

মনস্তত্ত্ববিদ সায়মা ওয়াজেদ পুতুল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অটিজম স্পিকসের পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেন। ২০১৩ সালের জুন থেকে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ডব্লিউএইচওর বিশেষজ্ঞ পরামর্শক প্যানেলে যোগ দেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার মিয়ামি শহরে ব্যারি ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়ন নিয়ে গবেষণা করেন। এ বিষয়ে তার গবেষণাকর্ম ফ্লোরিডার অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সে শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানভিত্তিক উপস্থাপনা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক, ২০০২ সালে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি নিয়ে মাস্টার্স ও ২০০৪ সালে স্কুল সাইকোলজি নিয়ে বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের (এসইএআরও) আঞ্চলিক পরিচালক পদে সায়মা ওয়াজেদকে মনোনয়ন দিয়েছে সরকার। এসইএআরও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ছয়টি আঞ্চলিক অফিসের মধ্যে একটি, যা সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত।

প্রধানমন্ত্রীর কন্যা হয়েও পারিবারিক সূত্রে তিনি কোনো সুবিধা গ্রহণ করেন নি। তিনি যা কিছু অর্জন করেছেন, তা নিজের মেধা যোগ্যতা দিয়ে। যত সব বড় কৃতিত্ব সবটুকুই নিজের অর্জন। তিনি আপন আলোয় আলোকিত হয়েছেন। ক্ষমতার এত কাছাকাছি থেকেও প্রচারের আলোতে না থাকা শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, উপমহাদেশের রাজনৈতিক পরিবারে এমন ঘটনা বিরল।

২০১১ সালে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের উদ্যোগে ঢাকায় প্রথমবারের মতো অটিজম বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়। সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের স্বামীর নাম খন্দকার মাশরুর হোসেন। তাদের সংসারে ৩ মেয়ে ও ১ ছেলে রয়েছে।

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, যার রক্ত ও চেতনায় বহমান মানবিক সেবা আর দেশপ্রেম। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল সরাসরি রাজনীতিতে জড়িত নয়। তবে তিনি সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের সেবা করা, তাদের জীবনমান উন্নত করার কাজটি নিরবে নিভৃতে করে যাচ্ছেন।

মায়ের দেখানো সেই মানবকল্যাণের পথে নিজেকে যোগ্য মায়ের যোগ্য কন্যা হিসেবে গড়ে তুলেছেন তিনি। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল আমাদের অহংকার। আগামী বাংলাদেশের ঠিকানা। তার মানবিক আলোয় উদ্ভাসিত হোক এদেশের তরুণ সমাজ। শুভ জন্মদিনে তার জন্য নিরন্তর শুভকামনা।