বিএনপির নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

বেপরোয়া হয়ে লুটপাটে মেতেছে আওয়ামী সিন্ডিকেট: রিজভী

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১৮:৫৫

ছবি: সংগৃহীত

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষ এখন মানুষ মাছের কাঁটা, মুরগীর চামড়া-ঠ্যাং কিনে খাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেছেন, ক্ষমতাসীন দলের সিন্ডিকেটরা আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে লুটপাটে মেতে উঠেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য যেমন: চাল, ডাল, তেল, চিনি, শাকসবজী, মাছ-মাংসসহ সব জিনিসের দাম বেড়ে যাচ্ছে ঊর্ধ্বশ্বাসে।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র সরকারী দলের সিন্ডিকেটের কারণে এই ভরা মৌসুমে ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা কেজির নীচে কোন সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। জনস্বার্থের কথা বিবেচনায় না নিয়ে এর মধ্যে বেশ কয়েকবার বেআইনীভাবে বাড়ানো হয়েছে, গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানির দাম। আর বাড়িভাড়া বৃদ্ধি হচ্ছে জ্যামিতিক হারে। বাড়িভাড়া বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোন নীতিমালা নেই। অথচ সচিবরা ডুপ্লেক্স বাড়িতে থাকেন মাসিক মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা ভাড়ায়।

রিজভী বলেন, দেশে চলছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক দৃষ্টান্তহীন নৈরাজ্য। আবারও ক্ষমতা দখলের পর দেশজুড়ে বেপরোয়া দখলবাজী চলছে। দখলকৃত সম্পদ ভাগাভাগী করতে গিয়ে নিজেরা নিজেদেরকে হত্যা করছে। যার প্রমাণ কুড়িগ্রাম ও কুমিল্লাসহ সারাদেশে ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে আওয়ামী লীগ নেতারা খুন হচ্ছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা নেমে পড়েছে বেপরোয়া নারী ও শিশু নির্যাতনে। একটি গণমাধ্যমের মতে শিশু নির্যাতনে ৭৬ শতাংশ শিশুই যৌন নির্যাতনের শিকার। বিরোধীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার, ব্যাপকভাবে নির্যাতন, নারকীয় অত্যাচারের পাশাপাশি জনপদের পর জনপদে আধিপত্য বজায় রাখতে চলছে গণধর্ষণ এবং বেছে বেছে খুন। ফলে সমাজের ওপর নেমে এসেছে এক ভয়াল আতঙ্ক, উদ্বেগ ও বিপদের ছায়া।

রিজভী বলেন, ‘গতকাল প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘নির্বাচন অনিয়ম বা অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি, তার প্রমাণ কই’। যারা অপরাধ করে তারা নিজেদেরকে নিরাপরাধ ভাবে। প্রধানমন্ত্রী, নির্বাচনে জালিয়াতির সবচেয়ে বড় প্রমাণ আপনি নিজেই।

কারণ আপনার নিয়োগকরা নির্বাচন কমিশনের সচিব নিজেই বলেছেন যে, যারা জিতবে ডিসিদের কাছে তাদের তালিকা আগেই দেয়া আছে, ঘোষণা দিয়ে দিলেই বাসায় গিয়ে ঘুমাতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী, আপনার জালিয়াতির নির্বাচনের প্রমাণ কেবল আন্তর্জাতিকভাবেই উত্থাপিত হয়নি, দেশেও এর ভুরি ভুরি প্রমাণ আছে।

শুধু তাই নয়, শুন্য ভোটকেন্দ্রে ছবি এবং ভিডিও-ই কেবল দেখা যায়নি, বিভিন্ন আসন থেকে প্রার্থীরা জালিয়াতি হচ্ছে বলে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। আপনার ভোট জালিয়াতির তথ্য আপনার দলের নেতারাই সংবাদ সম্মেলন করে জাতির সামনে তুলে ধরেছেন। গতকাল তারাও আপনার সামনে বসেছিলেন। আপনার বক্তব্য শুনে তারা হয়তো লজ্জা পেয়েছেন।

তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারি ভোটারবিহীন শুন্য ভোটকেন্দ্র সারাদিন দৃশ্যমান হয়েছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। জনগণ এই ভোট সর্বান্তকরণে বর্জন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শুধু আপনিই ‘চোখ থাকিতে অন্ধ’।

রিজভী বলেন, মিছিল-সমাবেশে হামলা চালিয়ে, গুলি করে, মানুষ হত্যা করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ রাজনৈতিক নেতাদের কারাগারে নিক্ষেপ করে, নিষ্ঠুরভাবে দমন-পীড়ন চালিয়েছেন তা আপনার দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক প্রকাশ্যেই বলে দিয়েছেন। সেটাকে খণ্ডন করবেন কিভাবে? ভারত যে আপনাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে সেটি তো আপনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী, মিথ্যার তাস দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায় না।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, বিরোধী দলের ওপর ক্র্যাকডাউন চালিয়ে বিএনপি’র শীর্ষ নেতাসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে বন্দী করেছেন কী উদ্দেশে সেটি কি দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জানে না? কারাগারে রাজবন্দীদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের মতো দস্যুদের ন্যায় পরিবেশে তৈরী করার উদ্দেশ্য ছিল ‘আমরা আর মামুদের’ একতরফা নির্বাচন।

বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এক দফার আন্দোলন চলছে, চলবে। বহু মৃত্যুঞ্জয়ী সংগ্রামের ঐতিহ্যবাহী দল বিএনপি। জনগণের সংগ্রামী ঐক্য, সংকল্প ও বীরত্বকে সঙ্গে নিয়ে দখলদার আওয়ামী সরকারের পতন নিশ্চিত করে এক দফার আন্দোলন বিজয়ের পথে ধাবিত হচ্ছে। যে রাজনৈতিক জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে সেটিকে শেখ হাসিনা দমিয়ে রাখতে পারবেনা। জনগণের বিজয় সুনিশ্চিত।’

এদিকে, সরকারের পদত্যাগসহ একদফা আন্দোলন বেগবান করতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আজ রবিবার বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

পাশাপাশি ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে মারা যাওয়া বাংলাদেশিদের স্মরণে দোয়া ও মাগফিরাত কামনায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামী মঙ্গলবার ও বুধবার ঢাকাসহ দেশের সকল মহানগরে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ। ১৬ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে মারা যাওয়া বাংলাদেশিদের স্মরণে বাদ জুম্মা সকল মসজিদে দোয়া ও মাগফিরাত কামনা। ১৭ ফেব্রুয়ারি সকল জেলা শহরে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ এবং ১৮ এবং ১৯ ফেব্রুয়ারি দেশের সকল উপজেলা, থানা, পৌরসভায় ও ইউনিয়ন পর্যায়ে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ।

 

 

 

 

 



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top