১৪ বছরে ঢাকায় যতো ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২ মার্চ ২০২৪, ১৬:৫৫

ছবি: সংগৃহীত

পুরান ঢাকার নিমতলী, চুড়িহাট্টা ও বনানীর এফআর টাওয়ারের পর এবার রাজধানীর অগ্নি-ট্রাজেডির খাতায় যুক্ত হলো বেইলি রোড। গত ১৪ বছরে ঘটে যাওয়া এ চারটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২৬৮ জনের। অন্যদিকে মগবাজারে ভবনে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ১২ জনের। এছাড়া বঙ্গবাজার, নিউমার্কেটসহ গত কয়েক বছরে ঢাকায় বেশ কয়েকটি বড় অগ্নি-দুর্ঘটনা ঘটেছে।

প্রতিবার আগুন লাগার পর নড়েচড়ে বসে সরকার। অগ্নিকাণ্ডের জন্য ভবনের অনুমোদন, নকশার ত্রুটি ও অগ্নিনিরাপত্তাকে দায়ী করা হয়।আশ্বাস দেওয়া হয়, দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার। কিন্তু দৃশ্যপটে খুব একটা পরিবর্তন দেখা যায় না।

নিমতলী ট্রাজেডি:

২০১০ সালের ৩ জুন রাত ৯টার দিকে পুরান ঢাকার চানখাঁরপুলের নিমতলীতে একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের বিস্ফোরণ ঘটে। আগুন ধরে যায় পাশের কেমিক্যালের গোডাউনে। মুহূর্তেই দাহ্য পদার্থ ও কেমিক্যালে ঠাসা ওই এলাকার বেশ কয়েকটি ভবনে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। যখন আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে, ততক্ষণে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যান ১২৪ জন। আহত হন প্রায় অর্ধশতাধিক। পুড়ে যায় ২৩টি বসতবাড়ি, দোকান ও কারখানা। 

চুড়িহাট্টা ট্রাজেডি:

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকায় হঠাৎ বিকট শব্দে সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ওয়াহেদ ম্যানশনে থাকা কেমিক্যালের কারণে আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে, যা ছড়িয়ে পড়ে সড়কে যানজটে আটকে থাকা পিকআপ, প্রাইভেট কার, রিকশা, ঠ্যালাগাড়ি ও মোটরসাইকেলে।

কিছু বুঝে ওঠার আগেই যানজটে আটকে থাকা অর্ধশতাধিক মানুষ প্রাণ হারান। আগুন লাগার ১৪ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। তার আগেই ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় ৬৭ জনের। পরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭১। এতে আহত হন কয়েক শ মানুষ।

এফআর টাওয়ার ট্রাজেডি:

রাজধানীর বনানীর বহুতল বাণ্যিজিক ভবন এফআর টাওয়ারে ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ দুপুর ১টায় লাগা আগুনে ২৭ জনের মৃত্যু এবং শতাধিক আহত হয়। ২২ তলা ঐ ভবনের অষ্টম তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল। অগ্নিকাণ্ডের পর আগুন যখন দ্রুত অন্যান্য তলায় ছড়িয়ে পড়ে, তখন ভবনের ভেতর আটকাপড়া অনেকে ভবনের কাচ ভেঙে ও রশি দিয়ে নামার চেষ্টা করেন। এ সময় কয়েক জন নিচে পড়ে মারা যান। 

মগবাজারের বিস্ফোরণ:

২০২১ সালের ২৭ জুন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মগবাজার ওয়্যারলেস এলাকার ‘রাখি নীড়’ নামে একটি ভবনের নিচতলায় বিস্ফোরণ হয়। আড়ংয়ের শোরুম ও রাশমনো হাসপাতালের উলটো দিকের মূল সড়ক লাগোয়া সেই ভবন। ঐ ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন দুই শতাধিক ব্যক্তি। বিস্ফোরণের শব্দ এতটাই বিকট ছিল যে, প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, এমন বিকট আওয়াজ তারা আগে শোনেননি। ইত্তেফাক

বঙ্গবাজার ও নিউমার্কেটে আগুন:
২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল ভোরে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে আগুন লেগে পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।সেদিন বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের পাশাপাশি আরও চারটি মার্কেট আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ডে ৩ হাজার ৮৪৫ জন ব্যবসায়ী সর্বস্ব হারিয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৩০৫ কোটি টাকার।

অন্যদিকে ১৫ এপ্রিল ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে ২২৬টি দোকান পুড়ে গেছে। মার্কেটের মালিক সমিতি বলছে, আগুনে ৩৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সময় নিউজ

রাজধানীর বস্তি আগুন: 

২০১৭ সালের ১৫ মার্চ দিবাগত রাত ২টা ৫০ মিনিটে মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। এর আগে, ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর হাজারীবাগ বেড়িবাঁধ-সংলগ্ন শিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশে বউবাজার বস্তিতে আগুনে পুড়ে যায় ৫০টি ঘর।

এ ছাড়া ২০১৮ সালের ১৯ নভেম্বর একই বস্তিতে লাগা আগুনে প্রাণ হারান ১১ জন। একই বছর ১২ মার্চ রাজধানীর পল্লবীর ইলিয়াস আলী মোল্লা বস্তিতে আগুন লাগে। অগ্নিকাণ্ডে বস্তির প্রায় ৫ হাজার ঘরের সব পুড়ে যায়। এ ছাড়া মাঝে মাঝেই বস্তিগুলোতে অগ্নিকাণ্ড ঘটতে থাকে।

বসুন্ধরা সিটি:

২০০৯ সালের ১৩ মার্চ বসুন্ধরা সিটিতে লাগা আগুনে মারা যান সাতজন। একই জায়গায় ২০১৬ সালে আবারও ঘটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। ঘটনাটি পুরো ঢাকা শহরকে নাড়িয়ে দিয়েছিল তীব্রভাবে। সোনালী নিউজ

বেইলি রোড ট্র্যাজেডি:

বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবনে আগুনের লেলিহান শিখা কেড়ে নিলো ৪৬টি নিরীহ-অসহায় প্রাণ। এছাড়াও, দগ্ধ হয়ে ১৮ জন হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন। বেইলি রোডের সাততলা গ্রীন কোজি কটেজ নামের বহুতল ভবনে রাত সাড়ে নয়টার পর আগুন লাগে। প্রতিটি ফ্লোরে রেস্টুরেন্ট ছিল। আগুনের খবর পৌঁছালেও নিচতলার প্রবেশপথে আগুন লাগায় অনেক চেষ্টা করেও বের হতে পারেননি অনেকেই।

উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বলছেন, আগুন লাগা ভবনটির প্রতিটি তলার সিঁড়ি ছিলো বড় বড় গ্যাস সিলিন্ডারে ঠাঁসা। যা ব্যবহৃত হতো রেস্টুরেন্টে রান্নার কাজে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ব্যবহৃত সেসব গ্যাস সিলিন্ডারই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে পুরো ঘটনায়। বাংলা ইনসাইডার

 



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top