কোটা আন্দোলনকারীদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০২৪, ২২:০৭

ছবি: সংগৃহীত

যৌক্তিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলমান থাকবে বলে জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শনিবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আবু বকর মজুমদার বলেন, ‘কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা এখনও পর্যন্ত কোনো আশ্বাস পাইনি। যতদিন কোটার সংস্কার করে সংসদে আইন পাস না করা হবে, ততদিন আমরা আন্দোলন ও কর্মসূচি চালিয়ে যাবো।’

ঢাকার সাত কলেজসহ আমাদের সমন্বয়ক টিম কুমিল্লাসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছে। তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা নৈতিক ও যৌক্তিক দাবি নিয়ে যে অবস্থান নিয়েছি তাতে কেউ হস্তক্ষেপ করলে আমরা কঠোরভাবে অবস্থান নেবো।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, রোববারের (১৪ জুলাই) কর্মসূচি হিসেবে ক্লাস ধর্মঘটের পাশাপাশি জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকারি সব চাকরিতে সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারক লিপি পাঠানো হবে। এ ছাড়া গণপদযাত্রা করা হবে। বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার আশপাশের সব বিশ্ববিদ্যালয় এ গণপদযাত্রায় অংশ নেবে।

‘৫ শতাংশ কোটা পদ্ধতি চাই। আমরা মুক্তিযোদ্ধা কোটাবিরোধী নই। নাতি- নাতনিরা পাবে, আমরা এটা চাই না। সন্তান পর্যন্ত ঠিক আছে। আমরা চাই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য কোটা,’ যোগ করেন তিনি।

সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন, কর্মসূচি অব্যাহত রাখবো। ততদিন আমরা ক্লাস, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবো না। আশা করি, আমাদের যৌক্তিক দাবিতে শিক্ষকরাও পাশে থাকবেন।’

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করে সাংবিধানিক অধিকারকে ক্ষুণ্ন করছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটা রেখে বাকি কোটা বাতিল করে সংসদে আইন পাসের এক দফা দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে’ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন।

এর আগে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুক্রবার (১২ জুলাই) ছুটির দিনেও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন।

অন্যদিকে রেলপথ অবরোধ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ‘বাংলা ব্লকেড’ নামের অবরোধ কর্মসূচিতে পুলিশের হামলার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা সারা দেশে এ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন।

গত ১ জুলাই থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে, ৫ জুন সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এরপর ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওইদিন এই আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত।

গত ৪ জুলাই প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় আপাতত বহাল রাখার নির্দেশ দেন। পরে ১০ জুলাই হাইকোর্টের দেয়া রায়ে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা দেন আপিল বিভাগ।

এর আগে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি তুলে দিয়ে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

 

 

 



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top