শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বাংলাদেশের সংঘাতময় পরিস্থিতিতে উদ্বেগ, ভলকার তুর্ককে বিশ্বের দেড়শ বিশিষ্টজনের চিঠি

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৮ জুলাই ২০২৪, ১৪:১০

ছবি: সংগৃহীত

ধীরে ধীরে সামনে আসছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নানা অজানা তথ্য। প্রথম দিকে আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে চললেও, সোমবার (১৫ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠে। এই আন্দোলনের নানা দিক উঠে আসে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে।

এবার কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘটিত সহিংসতা ও বর্তমান ঘটনাপ্রবাহে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষাবিদ, লেখক ও বুদ্ধিজীবীরা। জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ফলকার টুর্ককে গত বৃহস্পতিবার লেখা এক চিঠিতে এ উদ্বেগ জানান তাঁরা। সেই সঙ্গে তাঁরা এ বিষয়ে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এ তথ্য নিশ্চিত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্ট দিয়েছেন লেখক অমিতাভ ঘোষ।

এক্সের ওই খোলা চিঠিতে বিশিষ্টজনরা বলেন, ভয়ভীতি ও নির্যাতনের এমন পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনার হিসেবে ভলকার তুর্কের কাছে তারা ওইসব ঘটনায় একটি স্বাধীন তদন্ত পরিচালনার জন্য চাপ প্রয়োগের অনুরোধ জানাচ্ছেন; যাতে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী সহিংসতা ঘটানো এবং সংবাদ প্রকাশ ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায়।

একটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ও অন্যদের হতাহতের  ঘটনায় তারা (চিঠিতে সই করা বিশিষ্টজনেরা) গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ওই ঘটনা কোনো গণতান্ত্রিক দেশে বিক্ষোভ প্রদর্শনের মৌলিক অধিকারই শুধু খর্ব করেনি; বরং বাংলাদেশ সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদের অধীন মানুষের জীবনধারণের অধিকারের নিশ্চয়তাকে উপহাস করেছে।

তথ্যপ্রবাহের ক্ষেত্রে অব্যাহত বাধা সৃষ্টি করার কারণে সহিংসতার শিকার শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সাংবাদিক ও অন্যদের বিষয়ে খুব কম খবরই পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেন, এ অবস্থায় বাংলাদেশে থাকা সহকর্মীদের কাছ থেকে তারা জেনেছেন, পুলিশের হাতে কয়েকশ’ বিক্ষোভকারী নিহত ও হাজারের বেশি আহত হয়েছেন।

চিঠিতে বিশিষ্টজনেরা বাছ-বিচারহীন গ্রেপ্তার, শোকজ ছাড়াই আটক, আটক বা গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের আইনজীবীর সহায়তা পাওয়ার সুযোগ না দেওয়া, আহত করা, নির্যাতন-মানবাধিকার লঙ্ঘনের এমন ঘটনা থামাতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। তারা বলেন, ভয়ভীতি ও নির্যাতনের এমন পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার হিসেবে ভলকার তুর্কের কাছে তারা ওইসব ঘটনায় একটি স্বাধীন তদন্ত পরিচালনার জন্য চাপ প্রয়োগের অনুরোধ জানাচ্ছেন; যাতে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী সহিংসতা ঘটানো এবং সংবাদ প্রকাশ ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা যায়।

চিঠিতে সই করা উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হলেন- জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত ক্রিগার-আইজেনহাওয়ার অধ্যাপক বীণা দাস, লেখক অমিতাভ ঘোষ, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস ১৯৩১ চেয়ার অব জিওগ্র্যাফি অ্যাশ আমিন, কলেজ দ্য ফ্রান্সের অধ্যাপক দ্যদিয়ার ফসিন, নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড লুডেন, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক শেলডন পোলক ও পার্থ চ্যাটার্জি, লন্ডনের এসওএএস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাওমি হোসেন, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডায়ানা ইক, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু ব্র্যান্ডেল, ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আশুতোষ ভর্শনি, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফয়সাল দেভজি,

প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জ্ঞান প্রকাশ, কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইফতিখার দোদি, ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রসেনজিৎ দুয়ারা, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শ্রুতি কপিলা, ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিস্টিংগুইশড্ প্রফেসর জয়া মিশ্র, জওহরলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রতীক্ষা বক্সি, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থমাস ব্লম হ্যানসেন, জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেন বেনেট, কানেটিকাট বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিস্টিংগুইশড্ প্রফেসর বন্দনা পুরকায়স্থ, সেন্ট লুইস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড্যানিয়েল জে মন্টি, দ্য জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এলিজাবেথ অ্যাংকার।

বিশিষ্টজনদের মধ্যে আরও আছেন, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক প্যাট্রিসিয়া ওবেরয়, নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জুলি মস্তভ, টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরান আসদার আলী, এমআইটির ইমেরিটাস অধ্যাপক নাইজেল উইলসন, নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু সরতরি, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সাবেক উপ-হাইকমিশনার এনরিক টার হর্স্ট, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক ডেভিড লিউইস, ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডারকো সুভিন, বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাজলি কিবরিয়া, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নয়নিকা মথুর, এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তোবিয়াস কেলি, অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দীপক মেহতা, ফোর্ডহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফালগুনি সেন, ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা মুল্বা, অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিচার্ড এম ইটন,

গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাঞ্চনা এন রুয়ানপুরা, কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফরিদা সি খান, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক যোগিতা গয়াল, নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অরবিন্দ রাজা গোপাল, মায়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহনাজ দুয়ারা, ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সানা হারুন, ফোর্ডহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ সিদ্দিকী, টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজরি জেইন, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিশেল চিউ, জেস ঘানম ও ক্রিস টিলি, ইবনে হালদুন বিশ্ববিদ্যালয় ইস্তাম্বুলের অধ্যাপক ইরফান আহমেদ, লেখক প্রদীপ জেগানাথান (শ্রীলঙ্কার কলম্বো), মেলবোর্ন ও সানফ্রান্সিসকো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পুরুষোত্তমা বিলিমোরিয়া, অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অরিল্ড ইনজেলসেন রুড, ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস বোবেল, লেখক ব্রঙ্কা ফুলানোভি। খবর: ইত্তেফাক, প্রথম আলো, বণিক বার্তা।

 

 

 

 

 



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top