বিমানবন্দর থেকে জিয়াউল আহসান আটক
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৭ আগষ্ট ২০২৪, ১৮:৩১

সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান আটক করা হয়েছে। আজ বুধবার ভোররাতে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে বোর্ডিং ব্রিজে ফিরিয়ে আনার পর তাকে আটক করা হয়। বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, জিয়াউল আহসানকে বহনকারী এমিরেটসের ফ্লাইট-৫৮৫ রানওয়ে থেকে বোর্ডিং ব্রিজে ফিরিয়ে আনা হয়। পরে ফ্লাইট থেকে তাকে আটক করে নামিয়ে আনা হয়।
সূত্র জানিয়েছে, জিয়াউল আহসানকে বিমানবন্দর থেকে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে গেছেন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সদস্যরা। দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়ার আগ পর্যন্ত জিয়াউল আহসান ২০২২ সাল থেকে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি ওই কোম্পানির পরিচালক ছিলেন।
সেনাবাহিনীর এই সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফোনে আড়িপাতা এবং গুপ্তহত্যায় শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা দেওয়ার সরাসরি অভিযোগ তুলেছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও বিরোধী নেতারা।
বিমানবন্দরে ডিউটিরত একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে রাত দেড়টায় ঢাকা থেকে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল জিয়াউল আহসানের। ফ্লাইটটি বোর্ডিং ব্রিজ থেকে রানওয়ের দিকে যাচ্ছিল।
তবে হঠাৎ পাইলটকে ফ্লাইটটি নিয়ে বোর্ডিং ব্রিজে ফিরে আসতে বলা হয়। পাইলট ফিরে বোর্ডিং ব্রিজে এলে ফ্লাইটে প্রবেশ করেন যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। পুরো ফ্লাইটে তল্লাশি চালিয়ে জিয়াউল আহসানকে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, জিয়াউল আহসান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নানা ব্যক্তিকে গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে সিলেটের বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর অন্তর্ধান রহস্যের সঙ্গে বারংবার নাম এসেছে জিয়ার। এছাড়াও আইন বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে।
১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশনড অফিসার হিসেবে যোগ দেন জিয়াউল আহসান। ২০০৯ সালের ৫ মার্চ র্যাব-২ এর উপ-অধিনায়ক ও একই বছর লে. কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক হন তিনি।
২০১০ সালে র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক থাকা অবস্থায় লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান নোয়াখালীর হাতিয়ারচরে শীর্ষ বনদস্যু বাশার মাঝি গ্রুপের সঙ্গে মুখোমুখি বন্দুকযুদ্ধের নেতৃত্ব দেন। ২০১১ সালে সুন্দরবনের জলকটকাতেও বনদস্যুদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের সফল নেতৃত্ব দেন তিনি।
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তিনি কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান। একই বছর (২০১৩ সালে) মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ও আশপাশের এলাকায় হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডব প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
এসব অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে একাধিক সম্মানজনক পদকও লাভ করেন জিয়াউল আহসান। ২০২২ সালের জুলাই মাসে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থেকে মেজর জেনারেলে পদোন্নতি পান জিয়াউল আহসান। ২১ জুলাই তাকে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এনটিএমসির মহাপরিচালকের দায়িত্ব দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়।
এর আগে তিনি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তখন জিয়ার জন্যই প্রথমবারের মতো এনটিএমসির ‘মহাপরিচালক’ পদটি সৃষ্টি করা হয়। আর পদটিতে প্রথম কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান জিয়াউল আহসান।
এদিকে, নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সমালোচিত ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) ও ডিবির সাবেক কর্মকর্তা হারুন অর রশিদকে আটক করা হয়। তবে গ্রেপ্তার করে তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর হয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন হারুন অর রশিদ। কিন্তু পালানোর আগেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, সোমবার হারুন দিনভর পুলিশ প্রধানের সঙ্গেই ছিলেন। কিন্তু হাসিনার দেশত্যাগের খবর পাওয়ার পর থেকেই ওয়্যারলেসে তিনি কোনো নির্দেশনা দেননি। শেষে দুপুরে হারুন পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পালানোর চেষ্টা করেন। তিনি পুলিশ সদর দপ্তরের পূর্ব পাশে থাকা সিটি করপোরেশনের সীমানা দেয়াল টপকে সেদিকে চলে যান। এ সময় তিনি সাদা পোশাক পরিহিত ছিলেন।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গতকাল দিনের কোনো এক সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করে নিয়ে যায় রাষ্ট্রীয় একটি সংস্থা। সেটি পুলিশ, র্যাব নাকি অন্য কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।