শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মেট্রোরেল চালুর বিষয়ে যা জানাল কর্তৃপক্ষ

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১২ আগষ্ট ২০২৪, ১২:৫২

ছবি: সংগৃহীত

মেট্রোরেল চালুর নির্দেশনা পেয়েছে কর্তৃপক্ষ। শনিবার (১৭ আগস্ট) থেকে যাত্রী নিয়ে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হবে। এর আগে এখন মেট্রোরেল ব্যবস্থার নানা দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তবে ক্ষতিগ্রস্থ মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়ার স্টেশন দুটি মেরামত না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। রোববার (১১ আগস্ট) অর্ন্তর্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক জানিয়েছেন, যাত্রী নিয়ে মেট্রোরেল চলাচলে সর্বোচ্চ সাত দিন সময় লাগতে পারে। তবে এর আগেও চালু হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তিনি বলেন, নিরাপত্তাসংক্রান্ত কিছু প্রক্রিয়া শেষ করে যাত্রী নিয়ে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হবে।

সড়ক পরিবহণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, রোববার বিকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সচিবদের বৈঠক হয়। এতে সড়ক পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী মেট্রোরেল চলাচলের বিষয়টি তুললে দ্রুত তা চালুর নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা। আগামী শনিবার যাত্রী নিয়ে মেট্রোরেল চলাচল শুরু করবে।

ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, মেট্রোরেল পুনরায় চালুর সর্বাত্মক প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপ হিসেবে আজ সংশ্লিষ্টরা হেঁটে হেঁটে পুরো মেট্রোরেলের পথ পরীক্ষা করেছেন। আগামীকাল সোমবার নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয়গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।

আগামী মঙ্গলবার যাত্রীবিহীন (ব্ল্যাঙ্ক) ট্রেন পরিচালনা শুরু হতে পারে। যাত্রী ছাড়া কয়েক দিন মেট্রোরেল চালানো হবে। এরপরই যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু হবে। কারণ, মেট্রোরেলের জন্য আলাদা পুলিশ রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশ এখনো পুরোদমে কাজে যোগ দেয়নি। যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরুর আগে পুলিশের উপস্থিতিও নিশ্চিত করতে হবে।

মেট্রোরেলে যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু করলেও মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে থামবে না। আন্দোলনের সময় এই দুটি স্টেশন ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বাকি ১৪টি স্টেশনে যাত্রী ওঠা-নামা করতে পারবেন বলে ডিএমটিসিএল সূত্র জানিয়েছে।

গত ১৮ জুলাই মিরপুর–১০ নম্বর গোলচত্বরে পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ করা হলে ওই দিন বিকাল ৫টায় মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এর পরদিন মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে ভাঙচুর করা হয়।

ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন বন্ধ রেখে বাকি স্টেশনের মধ্যে মেট্রোরেল চালাতে কোনো সমস্যা নেই। কারণ মেট্রোরেলের লাইন, কোচ, সংকেত ও বিদ্যুৎ–ব্যবস্থা এবং কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সবই অক্ষত আছে। সরকার পরিবর্তনের কারণে সড়ক পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আত্মগোপনে চলে গেছেন। ফলে মেট্রোরেল চালানোর বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পায়নি কর্তৃপক্ষ। রোববার সেই নির্দেশনা পাওয়া গেছে।

চালুর পর থেকেই মেট্রোরেল জনপ্রিয় গণপরিবহণ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বন্ধ হওয়ার আগে মতিঝিল থেকে মেট্রোরেলের সর্বশেষ ট্রেন ছাড়ত রাত ৯টা ৪০ মিনিটে। আর উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিলের পথে সর্বশেষ ট্রেন ছেড়ে যেত রাত ৯টায়। সারা দিনে প্রায় ২০০ বারের মতো মেট্রোরেল চলাচল করে। যাত্রী যাতায়াত করে তিন লাখের মতো। যুগান্তর

এদিকে, বাংলাদেশ যাত্রী কলাণ সমিতির মহাসচীব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তাবায়নের জন্য মেট্রোরেল বন্ধ ছিল। মেট্রোরেলের বড় পদের কর্মকর্তারা হলো বিগত সরকারের সুবিধাভোগী। তাছাড়া মেট্রোরেল বন্ধ থাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ আগের থেকে বহুগুণ বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে অসংখ্য মানুষের ভোগান্তি দেখা যাচ্ছে সড়কে।

বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. হাদিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মেট্রোরেল মূলত রিমোটলি কন্ট্রোল করা হয়। এখন কমিউনিকেশন সিস্টেম যদি ঠিক থাকে তাহলে মেট্রোরেল চালু করা সম্ভব। যে স্টেশনে দুটি ক্ষতি হয়েছে সে স্টেশন আপাতত বন্ধ রেখে বাকিগুলো চালু করা যেতে পারে।

কারণ আমরা বিগত সময় দেখেছি অনেক স্টেশন বন্ধ রেখে মেট্রোরেল চালু করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে যে স্টেশনগুলো ক্ষতি হয়েছে, সে স্টেশনের সরঞ্জামগুলো যেখান থেকে আনা হয়েছিল, সেখানে সে ডিজাইন অবশ্যই পাওয়া যাবে। কারণ এখনো মেট্রোরেলের পুরো কাজ শেষ হয়নি। তাই মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টা যদি থাকে তাহলে এক বছরের কথা যে শোনা যাচ্ছে দুটি স্টেশন ঠিক হতে, এত সময় লাগার কথা নয়।’

তিনি আরও বলেন, মেট্রোরেলের যে দুটি স্টেশন সমস্যা সেগুলোও ধীরে ধীরে চালু করা সম্ভব। প্রয়োজনে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টিকিট কেটে ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশনগুলোও চালু করা যেতে পারে। দেশ রূপান্তর



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top