শেখ হাসিনা ও সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের লাল পাসপোর্ট বাতিল হচ্ছে
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২১ আগষ্ট ২০২৪, ১৯:৫৫
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা ও সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের নামে বরাদ্দ কূটনৈতিক পাসপোর্ট (লাল পাসপোর্ট) বাতিল হতে যাচ্ছে। আজ বুধবার (২১ আগস্ট) পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সূত্রটি জানায়, লাল পাসপোর্ট বাতিল হলে যেসব সাবেক মন্ত্রী-এমপির নামে ফৌজদারি অপরাধের মামলা আছে বা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের সাধারণ পাসপোর্ট পেতে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আদালতের আদেশ পেলেই কেবল মিলবে সাধারণ পাসপোর্ট।
ভারতে আশ্রয় নেয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কূটনৈতিক পাসপোর্ট বা লাল পাসপোর্টধারী ছিলেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১৮ সালের ১৫ জুলাই স্বাক্ষরিত সমঝোতা অনুযায়ী, সেই পাসপোর্টের সুবাদে তিনি অন্তত দেড় মাস কোনো ভিসা ছাড়াই অনায়াসে ভারতে অবস্থান করতে পারবেন।
গত ৫ আগস্ট ভারত যান তিনি। ভারতের আইন অনুযায়ী আর ২৯ দিন দেশটিতে থাকতে পারবেন শেখ হাসিনা। যদি না এর মধ্যে সেই পাসপোর্ট ‘রিভোকড’ বা প্রত্যাহৃত হয়। তাই বর্তমান অবস্থান সম্পূর্ণ আইনসম্মত, ভারতের এ ক্ষেত্রে আলাদা করে কোনো ব্যবস্থা নেয়ারও প্রয়োজনও নেই।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট বিভাগের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিসভায় থাকা অন্যদের সরকারি পাসপোর্ট বাতিলের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কারণ পদত্যাগের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী পদ এরইমধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যরা আইন অনুযায়ী অফিসিয়াল পাসপোর্ট আর ধারণ করতে পারবেন না।
শেখ হাসিনার সরকারি পাসপোর্টের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী একটি বৈধ সরকারি পাসপোর্ট বহন করছেন। একদিনের মধ্যে তা বাতিলের প্রক্রিয়া চলছে। শেখ হাসিনা এখন ভারতে অবস্থান করছেন এবং পশ্চিমা দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছেন। এমনটি ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১৮ সালের ১৫ জুলাই স্বাক্ষরিত সমঝোতা অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীরা ভিসা ছাড়াই ভারতে যেতে পারবেন। দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি অনুযায়ী ৪৫ দিন সেখানে অবস্থান করতে পারবেন।
দুদেশের চুক্তি অনুযায়ী শেখ হাসিনা অন্তত দেড় মাস কোনো ভিসা ছাড়াই অনায়াসে ভারতে অবস্থান করতে পারবেন। ভারতের আইন অনুযায়ী আর ২৯ দিন দেশটিতে থাকতে পারবেন শেখ হাসিনা। যদি না এর মধ্যে সেই পাসপোর্ট ‘রিভোকড’ বা প্রত্যাহৃত হয়। অন্যদিকে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা যুক্তরাজ্যের পাসপোর্টধারী। তিনি ভারতে অন অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা পাবেন। এই সুবিধায় তিনি যতদিন খুশি ভারতে থাকতে পারবেন।
গত ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন ৭ জানুয়ারি সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত দ্বাদশ সংসদ ভেঙে দেন। পরে গত ৮ আগস্ট দেশ পরিচালনার জন্য নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠিত হয়।
লাল পাসপোর্ট বাতিল হলে যেসব সাবেক মন্ত্রী-এমপির নামে ফৌজদারি অপরাধের মামলা আছে বা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের সাধারণ পাসপোর্ট পেতে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে আদালতের আদেশ পেলেই কেবল মিলবে সাধারণ পাসপোর্ট।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরইমধ্যে তার সরকারের কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী-এমপি গ্রেফতার হয়েছেন। কেউ কেউ গ্রেফতার এড়াতে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগেই বিদেশে পাড়ি দেন। তবে পতনের পর আর কেউ বিদেশে পালিয়ে গেছেন এমন খবর পাওয়া যায়নি। বেশির ভাগ সাবেক মন্ত্রী-এমপি এখনো দেশেই আত্মগোপনে আছেন। তাদের ধরতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযান অব্যাহত আছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, লাল পাসপোর্টকে বলা হয় ডিপ্লোম্যাটিক বা কূটনৈতিক পাসপোর্ট। এই পাসপোর্ট পান রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য এবং তাদের স্পাউস অর্থাৎ স্বামী বা স্ত্রী। সেই সঙ্গে উচ্চতর আদালতের বিচারপতি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রধান, মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বিদেশে বাংলাদেশি মিশনের কর্মকর্তারা লাল পাসপোর্ট পান।
লাল পাসপোর্ট যাদের আছে, তাদের বিদেশ ভ্রমণের জন্য কোনো ভিসার প্রয়োজন হয় না। তারা সংশ্লিষ্ট দেশে অবতরণের পর অন অ্যারাইভাল ভিসা পান। লাল পাসপোর্ট তথা ডিপ্লোম্যাটিক বা কূটনৈতিক পাসপোর্ট সব দেশেই লাল রঙের হয়ে থাকে।
পাসপোর্ট অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ নতুন সরকার গঠন হলে মন্ত্রী-এমপিরা সংসদের মেয়াদকাল অর্থাৎ পাঁচ বছরের জন্য কূটনৈতিক পাসপোর্ট (লাল পাসপোর্ট) পেয়ে থাকেন। সংসদের মেয়াদ শেষ হলে পাসপোর্টের বৈধতাও শেষ হয়ে যায়। তবে মন্ত্রী-এমপিদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট (লাল পাসপোর্ট) বাতিলের আদেশ এলে সাধারণত বাতিল করা হয়। এরপর বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে যে কেউ সাধারণ পাসপোর্ট (সবুজ রঙের) পাওয়ার অধিকার রাখেন।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, যে কোনো সংসদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে বা সংসদ ভেঙে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কূটনৈতিক পাসপোর্টের বৈধতাও শেষ হয়ে যায়। সাধারণত কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীরা মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে সেই পাসপোর্ট সারেন্ডার করে সাধারণ পাসপোর্ট গ্রহণ করে থাকেন।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।