বন্যায় পানি কীভাবে বিশুদ্ধ করবেন

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৪ আগষ্ট ২০২৪, ১৮:১৬

ছবি: সংগৃহীত

দেশে বন্যা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি।টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানিতে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় কবলিত হয়েছে দেশের ১১টি জেলা। এসব এলাকায় তীব্র খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। পানির ওপর নাম জীবন হলেও যদি সেটা দুষিত হয় তাহলে পানিই হতে পারে নানা রোগের কারণ। বন্যাপ্লাবিত এলাকায় টিউবওয়েলসহ বিশুদ্ধ পানির বিভিন্ন উৎসও ক্ষতিগ্রস্থ। ফলে পানি সংকট পূরণে ভরসা এখন বিকল্প উপায়। পানি না ফুটিয়ে বিশুদ্ধকরণের বেশ কয়েকটি উপায় রয়েছে।

এখন সারাদেশে বন্যা। এ রকম অবস্থায় খাওয়ার পানির অভাব হয়ে পড়ে। বন্যার দূষিত পানি পানে হতে পারে ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড, জন্ডিসের মতো মারাত্মক পানিবাহিত রোগ। এতে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে। তাই চাই বিশুদ্ধ পানি।

১. পানি ফুটানো: সরাসরি বন্যার পানি ফুটানোর সময় বুদবুদ ওঠার ১৫ থেকে ২০ মিনিটের পর বিশুদ্ধ হয়ে যায়। এতে সহজে পানি পান করা যায়। তবে মনে রাখবেন, পানি বেশি ফুটালে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায় এবং বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদানের পরিমাণ বেড়ে যায়।

২.ট্যাবলেট: পানি ফোটানো বা ফিল্টার করার ব্যবস্থা না থাকলে পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট দিয়ে পানি পরিশোধন করা যেতে পারে। প্রতি তিন লিটার পানিতে একটি ট্যাবলেট গুলিয়ে রেখে দিলে এক ঘণ্টা পর বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায়।

৩. পটাশ বা ফিটকিরি: এক কলসি পানিতে সামান্য পরিমাণ ফিটকিরি মিশিয়ে দুই থেকে তিন ঘণ্টা রেখে দিলে পানির ভেতরে থাকা ময়লা তলানিতে জমে। এ ক্ষেত্রে পাত্রের ওপর থেকে শোধিত পানি সংগ্রহ করে তলানির পানি ফেলে দিতে হবে।

৪.আয়োডিন: এক লিটার পানিতে দুই শতাংশ আয়োডিনের দ্রবণ মিশিয়ে কিছুক্ষণ ঢেকে রাখলেও পানি বিশুদ্ধ হয়। তবে কাজটি করতে হবে দক্ষ কারো সহায়তায়। কেননা পানি ও আয়োডিনের মাত্রা ঠিক না থাকলে সেই পানি শরীরের ক্ষতি করতে পারে।

৫. হ্যালোজেন: বিশেষত তিন লিটার পানিতে একটি হ্যালোজেন ট্যাবলেট গুলিয়ে রেখে দিলে এক ঘণ্টা পর পানি বিশুদ্ধ হয়ে যাবে।

৬. বৃষ্টির পানি সংগ্রহ: বৃষ্টি শুরু হওয়ার ১০ মিনিট পর থেকে পরিষ্কার পাত্রে পানি সংগ্রহ করে রাখলে পানি পানের উপযোগী হয়। এ ক্ষেত্রে আকাশ থেকে সরাসরি পড়া বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করতে হবে। বাড়ির ছাদ বেয়ে পড়া বা গাছের পাতা ছুঁয়ে পড়া বৃষ্টির পানির সঙ্গে নানারকম জীবাণু মিশে থাকে।

৭.সূর্যের আলোর ব্যবহার: দূষিত পানি কয়েক ঘণ্টা তীব্র সূর্যের আলো ও তাপে রেখে দিয়ে বিশুদ্ধ করা যায়। সূর্যের ভায়োলেট রশ্মি পানির ব্যাকটেরিয়া, জীবাণু, পরজীবীর ডিএনএ দুর্বল করে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, সূর্যের তাপে বিশুদ্ধ করা পানি ঘণ্টার পর ঘণ্টা রেখে দেওয়া উচিত নয়।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, পানি ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার চেয়ে বেশি তাপমাত্রায় ৫ থেকে ২৫ মিনিট ফোটানো হলে তাতে জীবাণু, লার্ভাসহ সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যায়। তারপর সেই পানি ঠান্ডা করে ছাঁকুনি দিয়ে ছেঁকে পরিষ্কার পাত্রে ঢেকে সংরক্ষণ করতে হবে। পানি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাচ বা স্টিলের পাত্র ব্যবহার করা সংগত।

যেসব পাত্র বা গ্লাসে পানি খাওয়া হচ্ছে সেটিও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে হবে। আবার সেদ্ধ করা পানি বেশিদিন রেখে দিলে তাতে আবারও জীবাণু আক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যায়। সাধারণত ফোটানো পানি দুই দিনের বেশি খাওয়া যাবে না। ফেটানো পানিতে কিছুটা গন্ধ থাকলেও সেটা পরিষ্কার স্থানে খোলা রাখলে বা পরিচ্ছন্ন কোনো কাঠি দিয়ে নাড়াচাড়া করলে গন্ধটি বাতাসে মিশে যায়।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top