প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে নির্বাচন রোডম্যাপ না থাকায় হতাশ বিএনপি
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৬ আগষ্ট ২০২৪, ১৬:৫৩
প্রশাসনে থাকা স্বৈরাচারের দোসরদের দ্রুত সরিয়ে দিতে অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যারা গণতন্ত্রের জন্য কাজ করতে আগ্রহী এবং বঞ্চিত হয়েছে বছরের পর বছর তাদেরকে নিয়োগ দেয়ার দাবিও জানান তিনি। সোমবার (২৬ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের এক স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, পুলিশ আমাদের ছেলেদেরকে গুলি করবে, আমাদের সর্বনাশ করবে এটি আমরা দেখতে চাই না। প্রত্যেকটি হত্যার বিচার করতে হবে। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের প্রায় ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে গায়েবি ও মিথ্যা মামলা হয়েছে। এগুলোকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা পত্রিকার মাধ্যমে শুনেছি, প্রধান উপদেষ্টা ও আরেকজন উপদেষ্টার মামলার সাজা তুলে নেয়া হয়েছে। আমরা যারা বিএনপি-জামায়াত আছি, এমন কোনো মানুষ নেই তার বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। আমার আশা, এক লাখ ৪৫ হাজার মামলা প্রধান উপদেষ্টা তুলে নিবেন। এটি দাবি রাখছি।
গতকাল অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জাতির উদ্দেশে ভাষণের কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখনো একটি জিনিসের ধোঁয়াশা পরিষ্কার হয়নি। আমরা আশা করেছিলাম, প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় একটি রোডম্যাপ দেবেন। যেটা পরিষ্কার হয়নি। সেটি উনার বক্তব্যের মধ্যে পাইনি।
উনি রিফর্ম বিষয়ে কথা বলেছেন, কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন আবার কিছু বিষয়ে বলেননি। আমি জানি, এত কম সময়ে সবগুলো বিষয় সমাধান করা সম্ভব নয়। সেই রিফর্মগুলোর বিষয়ে উল্লেখ করলে সেগুলোর একটা ধারণা করতে পারতাম, ঘটনা আসলে ভালোর দিকে যাচ্ছে। ঘটনা ভালোর দিকে যাবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
গতকালের সচিবালয়ের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, কিছু আনসার পোশাকধারী লোক সচিবালায় ঘেরাও করে কিছু অপকর্ম করার চেষ্টা করেছিল। ছাত্ররা সেটাকে নস্যাৎ করে দিয়েছে। এটা কিন্তু অশনি সংকেত, এটি কোনো ভালো সংকেত নয়। যারা পরাজিত তারা এখনো বিভিন্নভাবে চক্রান্ত করে যাচ্ছে, এই বিজয়কে নস্যাৎ করে দেয়ার জন্য। তাই জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
সকলের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ফ্যাসিবাদের সময় তো কেউ একটি কথা বলতে পারতেন না, দাঁড়াতে পারতেন না। এখন কথা বলতে পারছেন, দাঁড়াতে পারছেন। সময় নিয়ে ধৈর্য ধারণ করুন নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্টরা বিষয়গুলো দেখবেন। কিন্তু সচিবালয় ঘেরাও করে বাধ্য করে কোনো কিছু আদায় করার চেষ্টা করবেন না এই মুহূর্তে। কারণ জনগণ সেটিকে ভালো চোখে দেখবে না।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্রদের কৃতিত্ব তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৯৫২ থেকে ২৪ প্রতিটি স্টেপ নিয়ে পরিবর্তন এনে দিয়েছিলেন ছাত্ররা। এজন্য দেশের মানুষ ছাত্রদেরকে আলাদাভাবে সম্মান করেন। একই সাথে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এমন কিছু করবেন না, বল প্রয়োগ করে কাউকে পদত্যাগে বাধ্য করবেন না। যাতে করে প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙ্গে যায়। আপনারা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অভিযোগ করেন, ব্যবস্থা তো আছেই। অভিযোগ প্রমাণিত হলে নিশ্চয় তাকে সরানো হবে। কিন্তু তাকে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা এখনো প্রশাসনে সেই ব্যক্তিদেরকে দেখতে পাচ্ছি, যারা ফ্যাসিবাদী সরকারকে প্রকাশ্যে মদদ দিয়েছেন। তারা এই স্বৈরাচারকে সাহায্য করেছে, তারা গণহত্যার সাথে জড়িত। তাদের চেহারা আমরা দেখতে চাই না। আবারো বলছি, এদেরকেও অপসারিত করে যারা দেশপ্রেমিক-বঞ্চিত তাদের নিয়ে এসে প্রশাসন চালানোর ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় এটির জন্য জাতি আপনাদের ক্ষমা করবে না।
তিনি বলেন, আমাদের অত্যন্ত ধৈর্য-সতর্কতার সাথে পা ফেলতে হবে। বর্তমান সরকার অবশ্যই কাজ করার জন্য এসেছেন, তাদেরকে সুযোগ করে দিতে হবে। আমরা অবশ্যই সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চাই। আমরা অপেক্ষা করছি, অবশ্যই সেটি একটি যৌক্তিক সময় পর্যন্ত হতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, অবশ্যই সেই যৌক্তিক সময়ের মধ্যে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।