বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে পাকিস্তানের নয়া উদ্যোগ

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:১০

ছবি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরবাংলাদেশের সঙ্গে পুনরায় সম্পর্ক জোরদারের জন্য একটি কৌশলগত নথি বা স্ট্র্যাটেজিক পেপার তৈরি করেছে পাকিস্তান। ঢাকায় দায়িত্ব পালনকারী দেশটির রাষ্ট্রদূতসহ কূটনীতিকরা পাকিস্তান সরকারের জন্য একটি কৌশলপত্র তৈরি করেছেন। এখন কীভাবে সম্পর্ক উন্নয়নে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া যায়, সেই রোডম্যাপ নিয়ে ভাবছে দেশটি।

বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে পাকিস্তানে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকও চলছে। সম্প্রতি দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করা সাবেক কূটনীতিকরা অংশ নেন। একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করা যায়, সে বিষয়ে মতামত নিতেই শেহবাজ এই বৈঠক ডেকেছিলেন।

দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের ১৫ বছরের অবসান ঘটিয়ে গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পথ খুলে যায়।

শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে পাকিস্তান-বাংলাদেশের সম্পর্ক ছিল তিক্ত। ইসলামাবাদ ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করেছিল, কিন্তু হাসিনা সেই প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করেন। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা নেতা শেখ মুজিবের কন্যা ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন এবং তিনি প্রায়ই পাকিস্তানের বিষয়ে নয়াদিল্লির সঙ্গে পরামর্শ করতেন।

হাসিনার অপসারণ ভারতের জন্য একটি গুরুতর ধাক্কা হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক খোঁজার জন্য এটি পাকিস্তানের জন্য একটি সুযোগ। এই পরিবর্তনের পটভূমিতে অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিকরা পাকিস্তান সরকারকে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।

শেহবাজ শরিফের কাছে হস্তান্তর করা কৌশলপত্রে পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্কের একটি রোডম্যাপ দেওয়া হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিকরা বিশ্বাস করেন, পাকিস্তানকে অবশ্যই এই কাজটি দ্রুত করতে হবে, তবে দক্ষ কূটনীতির মাধ্যমে।

দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদন আরও বলছে, কোনো পক্ষ না নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বিশেষ করে শুরুতে স্বল্প পরিসরে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের প্রবণতা আছে- এমন কোনো তৎপরতায় লিপ্ত না হতেও সরকারকে বলা হয়েছে।

শেখ হাসিনাকে পৃষ্ঠপোষকতার জন্য ভারতকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের হাসিনার ওপর ক্ষুব্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল, তাকে ভারতের পুতুল হিসেবে দেখা হতো। অবসরপ্রাপ্ত এক কূটনীতিক বলেন, বাঙালিরা স্বাধীনচেতা মানুষ। তারা কখনোই কোনো দেশের আধিপত্য মেনে নেবে না।

অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিকরা প্রস্তাব করেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে ভারতের চশমা দিয়ে দেখা উচিত নয়। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের ধরন যাই হোক না কেন, পাকিস্তানকে অবশ্যই তার নিজস্ব পথ অনুসরণ করতে হবে।

পর্যবেক্ষকদের মতে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চার হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। তাদের বর্তমান বৈরিতা সত্ত্বেও উভয় দেশের কিছু কার্যকরী সম্পর্ক থাকতেই হবে। একজন অবসরপ্রাপ্ত আমলা পরামর্শ দিয়েছিলেন, পাকিস্তান বাংলাদেশ সম্পর্কে একজন বিশেষ দূত নিয়োগ করতে পারে বা এমন কাউকে হাইকমিশনার করতে পারে, যিনি বাংলাভাষী।

তিনি বলেন, ফরেন সার্ভিসের অনেক ভালো অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আছেন, যারা বাংলাভাষী। পাকিস্তান যদি ৭৮ বছর বয়সী মুনির আকরামকে জাতিসংঘে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিতে পারে, তাহলে আমরা কেন ঢাকায় একজন অভিজ্ঞ কূটনীতিককে নিয়োগ দিতে পারব না?

এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলে হয়েছে, শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতির কারণে পাকিস্তান ঢাকায় যোগ্য ফরেন সার্ভিস অফিসার নিয়োগ বন্ধ করে দেয়। এদিকে, সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেছেন শেহবাজ শরিফ। বহু বছরের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে এটিই ছিল প্রথম সর্বোচ্চ পর্যায়ে কথোপকথন। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবরাও সম্প্রতি ওআইসি সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠক করেছেন।তথ্যসূত্র: দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top