আয়নাঘরের লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন আমান আযমী

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫:০৬

ছবি: সংগৃহীত

শেখ হাসিনার পতনের পর গত ৬ আগস্ট ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী। এরপর চিকিৎসা শেষে এই প্রথম গণমাধ্যমের সামনে এলেন তিনি। দিলেন আয়নাঘরে থাকার লোমহর্ষক বর্ণনা। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে তিনি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি হয়ে বর্ণনা করেন তাকে আটকের দিন কেমন আচরণ করেছিল সাদা পোশাকের বিশেষ বাহিনী। বর্ণনা করেন কীভাবে কাটিয়েছেন আয়নাঘরে।

তিনি বলেন, ‌‘যখন আমার বাসায় তারা আসল তখন তাদের কাছে আমি জানতে চেয়েছিলাম আপনারা কারা, পরিচয় কী, পরিচয়পত্র দেখান। তারা আমার কথার জবাব দেননি। আমি বেশ কিছু প্রশ্ন করেছি তারা কোনো কথার জবাব দেননি। এক অফিসার আমাকে তুই করে সম্বোধন করে। আমার সঙ্গে খুবই খারাপ ব্যবহার করে। এক পর্যায়ে আমাকে গ্রেপ্তার করে গাড়িতে নিয়ে চোখ বেঁধে দেয়। সে সময় আমাকে ও সেনাবাহিনীকে নিয়ে খুবই খারাপ ব্যবহার করে।’

আযমী বলনে, ‌‘আমি ফিরে এসে জানতে পারলাম আমার পরিবারের ওপর তারা কী পরিমাণ নির্যাতন চালিয়েছে। আমার স্ত্রীর গায়ে হাত তুলতে চেয়েছিল তারা। এক পর্যায়ে আমার স্ত্রীকে তুলে নিতে চাইলে স্ত্রী আমার মাকে সঙ্গে নিতে বলে তখন তারা তাকে নেয়নি। এ সময় আমার বাড়ির যুবতী কাজের মেয়ের ওপর হাত চালিয়েছে। বাসার ম্যানেজার ও দারোয়ানসহ সবাইয়ের ওপর তারা হামলা চালায়।’

তিনি বলেন, ‘আমার চোখ-মুখ বাঁধা অবস্থায় একটা জায়গায় নিয়ে গেল। তারা আমাকে পোশাক দিল। রাতের আমাকে খাবার দেয় কিন্তু খাওয়ার মতো অবস্থায় ছিলাম না। টয়লেট যেতে চাইলে তারা আমার চোখ-হাত বেঁধে নিয়ে যেত। প্রায় ৫০ কদম হাঁটার পর টয়লেটে যেতাম।’

সাবেক ব্রিগেডিয়ার বলেন, ‘বারবার মনো হতো তারা হয়ত আমাকে ক্রস ফায়ার করে হত্যা করবে। আমি রাতে তাহাজ্জত পড়ে আল্লাহর কাছে শুধু কান্না করতাম আল্লাহ আমার লাশটা যেন কুকুরদের খাদ্যে পরিণত না হয়। আমার লাশটা যেন আমার পরিবারের কাছে যায়। সব সময় এ দোয়াটাই করতাম।’

তিনি বলেন, আমাকে যখন একটি ঘরে আবদ্ধ করা হল তখন জিজ্ঞাস করা হয়েছিল কেন আমি ভারতের বিরুদ্ধে লেখি। কেন ফেসবুকে ভারতের বিরুদ্ধে সোচ্চার। এতে স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে তারা কেন আমাকে আয়নাঘরে আটকিয়ে রাখেন।

পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা অফিসারের খুনের বদলা চান উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোরআনে আছে খুনের বদলে খুন৷ আমি তদন্ত করে বিচারের আহ্বান জানাই। বিগত আমলে যারা তদন্ত করেছে, তারা দায়সারা ভাবে তদন্ত করছে। ওই হত্যাকাণ্ডের পূর্ণ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি বলেন, দেশের সবগুলো প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। নতুন সরকার এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঢেলে সাজাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ব্রিগেডিয়ার আযমী বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান কোনো রকম জরিপ ছাড়াই মুক্তিযুদ্ধের শহিদের সংখ্যা প্রকাশ করেন। একটা যুদ্ধে কত মানুষ মারা গেলেন তার কোনো সঠিক সংখ্যা জাতি এখনো জানে না।

শহিদের সংখ্যা নিয়ে একটি জরিপ হয়েছিল উল্লেখ করে ব্রিগেডিয়ার আযমী বলেন, একটা জরিপ হয়েছিল যেখানে ২লাখ ৮৬ হাজার শহিদের সংখ্যা জানা গেলেও শেখ মুজিবুর রহমান ৩ লাখ বলতে গিয়ে ৩ মিলিয়ন বলে।

সংবাদ সম্মেলনে ব্রিগেডিয়ার আযমী বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত যেন নতুন করে লেখা হয়। বর্তমানে যে জাতীয় সংগীত চলছে তা করেছিল ভারত। দুই বাংলাকে একত্রিত করারজন্য করা হয়েছিল এই জাতীয় সংগীত। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে তাই বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত নতুনভাবে হওয়া উচিত।

উল্লেখ্য, সেনাবাহিনীর সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী গত ৬ আগস্ট আয়নাঘর থেকে মুক্তি পান। তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক প্রয়াত আমির গোলাম আযমের মেজো ছেলে। ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট রাতে তাকে তুলে নেওয়া হয়। ওই দিন দিবাগত রাত ১২টার দিকে রাজধানীর বড় মগবাজারের বাসা থেকে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তাকে আটক করা হয়।

পরে তাকে সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অব্যাহতি দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। তবে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে থেকে আটকের বিষয়টি একাধিকবার দাবি করা হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top