মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

ভারতের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায় জামায়াতে ইসলামী?

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫:৫৬

ছবি: সংগৃহীত

জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। সেই ধারণাটা হলো জামায়াত ভারতবিরোধী। এটা আসলে ঠিক নয়। এই ধারণা পরিবর্তন করা দরকার। ‘জামায়াতে ইসলামী কোনো দেশের বিরুদ্ধে নয়। এটি একটা ভুল ধারণা, এই ধারণা পরিবর্তন করা দরকার।। আমরা বাংলাদেশপন্থী এবং আমরা একমাত্র বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় আগ্রহী।’

তিনি বলেন, ‘ভারত আমাদের প্রতিবেশী ও আমরা একটি ভালো, স্থিতিশীল এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক চাই। যা–ই হোক, ভারত অতীতে এমন কিছু কাজ করেছে, যা বাংলাদেশের জনগণ ভালোভাবে নেয়নি। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৪ সালের বাংলাদেশের নির্বাচনের সময় এক ভারতীয় কূটনীতিক ঢাকা সফর করেছিলেন এবং নির্বাচনে কার অংশগ্রহণ করা উচিত এবং কাদের উচিত নয়- সেই বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এটি অগ্রহণযোগ্য। কারণ, এটি একটি প্রতিবেশী দেশের ভূমিকা নয়।’

শফিকুর বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, ভারত অবশেষে তার পররাষ্ট্রনীতি পুনর্মূল্যায়ন করবে। বাংলাদেশের বিষয়ে আমরা মনে করি, একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধ করা উচিত। জামায়াতে ইসলামী চায়, ভারত বন্ধু হোক এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করুক।’

জামায়াত আমির বলেন, তার দল সম্পর্কের উন্নতির ক্ষেত্রে নিজেদের দায়িত্ব স্বীকার করে, কিন্তু সম্পর্ক অবশ্যই একে অপরের অভ্যন্তরীণ সমস্যার ক্ষেত্রে অহস্তক্ষেপমূলক হবে।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত- এমন প্রশ্নে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘একসঙ্গে কাজ করা এবং হস্তক্ষেপ করা, দুটি ভিন্ন জিনিস। একসঙ্গে কাজ করার একটি ইতিবাচক অর্থ আছে, কিন্তু হস্তক্ষেপ নেতিবাচক। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অর্থ হলো-সহযোগিতা এবং পারস্পরিক সম্মান। ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। আমরা স্থল ও সমুদ্র উভয় ধরনের সীমানা ভাগাভাগি করি, তাই আমাদের ভালো সম্পর্ক থাকা উচিত। কারণ, আপনি আপনার প্রতিবেশী থেকে দূরে থাকতে পারবেন না।’

তিনি বলেন, অতীতে তারা ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল। কিন্তু গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে এই যোগাযোগ হ্রাস পেয়েছিল। ভারতের সঙ্গে জামায়াতের কার্যকর সম্পর্ক এখনো পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

হিন্দুদের ওপর জামায়াতের হামলার অভিযোগের বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে দলটির আমির বিষয়টিকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেন। এ সময় তিনি জামায়াতের নেতিবাচক চরিত্র সামনে আসার জন্য গণমাধ্যমে বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারণাকে দায়ী করেন।

ডা. শফিকুর রহমান দাবি করেন, শেখ হাসিনা সরকারের গত ১৫ বছরের নৃশংসতায় তার দল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে দলটি এখনো টিকে আছে এবং জনগণের সমর্থন লাভ করেছে বলেও জানান তিনি।

পাকিস্তানের সঙ্গে জামায়াত কেমন সম্পর্ক চায়- জানতে দলটির আমির বলেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক চাই। আমরা ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মিয়ানমার, ভুটান, শ্রীলঙ্কাসহ উপমহাদেশের আমাদের সব প্রতিবেশীর সঙ্গে সমান ও ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক চাই। স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য এই ভারসাম্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

শফিকুর রহমান বলেন, ‘পানি ছাড়ার আগে ভারতের উচিত ছিল বাংলাদেশকে আগে থেকে তথ্য দেওয়া। আমরা বলছি না যে ভারী বৃষ্টির জন্য ভারত দায়ী। তবে ভারতের উচিত ছিল পানি ছাড়ার আগে আমাদের জানানো। যাতে আমরা পরিস্থিতি আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি এবং জীবন বাঁচাতে পারি। আমরা বিশ্বাস করি, এই বাঁধটির থাকা উচিত নয় এবং পানিকে প্রাকৃতিক গতিপথ অনুসরণ করতে দেওয়া উচিত।’

জামায়াত আমির বলেন, ‘দেশে যখনই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে জামায়াতে ইসলামী তাতে অংশগ্রহণ করবে। আমরা বিশ্বাস করি, অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে সময় দেওয়া উচিত, তবে তা অনির্দিষ্টকাল হওয়া উচিত নয়। আমরা যথাসময়ে নতুন নির্বাচনের সময় সম্পর্কে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করব। তবে যখনই নির্বাচন হবে, আমরা অংশগ্রহণ করব।’।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top