ত্রিশালে দেওয়ানবাগীর আস্তানা ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩:৩৪

ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ত্রিশালে দেওয়ানবাগী আস্তানার প্রধান ফটকসহ দু’টি গেট ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় উভয়পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফেসবুকে ঘোষণা দেওয়ায় গতকাল ভোর থেকে বিভিন্ন এলাকার মানুষ দেওয়ানবাগী পীরের দরবারে যেতে শুরু করেন। স্থানীয় কাশিগঞ্জ বাজার এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের আটকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু বাধা উপেক্ষা করে জনতা বাবে বরকত দেওয়ানবাগ শরীফের ফটকের কাছে চলে যায়। বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা দেওয়ানবাগ শরীফের প্রধান ফটক ও সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন।

এ সময় ভেতরে থাকা দরবারের ভক্ত–অনুরাগীরা মরিচের গুঁড়া, স্প্রে, ইটপাটকেল ও মার্বেল নিক্ষেপ করে প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। বাইরে থেকে বিক্ষুব্ধ জনতাও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা উত্তেজিত হয়ে মূল ফটকের বাইরে থাকা দরবারের একটি ঘরে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে বেলা দুইটার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিক্ষুব্ধ জনতাকে সরিয়ে দেয়।

স্থানীয়রা জানান, পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হয়ে বিক্ষুব্ধ জনতাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। আস্তানা থেকে ভক্ত ও বিক্ষুব্ধ জনতার মধ্যে ছোড়া ইটপাটকেল ও লাঠিচার্জে প্রায় ১০-১২ জন আহত হন।

এ ঘটনার পর উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও পুলিশ স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বিএনপি, জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে এলাকায় বৈঠক করে। সভায় স্থানীয় মানুষদের পক্ষ থেকে তিন দফা দাবি জানানো হয়। সেগুলো হলো- ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমি থেকে দেওয়ানবাগ শরীফের তোরণ সরাতে হবে। দেওয়ানবাগ শরীফের ভেতর অবস্থান করা মুরিদদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে এবং ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ বন্ধ রাখতে হবে।

ত্রিশাল থানা (ওসি) কামাল হোসেন ঘটনাটির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দুই ঘণ্টা চেষ্টার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে আমরা বিক্ষুব্ধ জনতার সঙ্গে আলোচনায় বসি। এক পর্যায়ে তারা আমাদেরকে তিনটি দাবি পেশ করে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থার আশ্বাস দিলে তারা ফিরে যান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুয়েল আহমেদ জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। জনতার বিক্ষোভ পরিস্থিতি সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

দেওয়ানবাগ শরীফের মিডিয়া সেলের কো-অর্ডিনেটর সৈয়দ মেহেদী হাসান দাবি করেন, ‘স্থানীয় মৌলবাদীরাই হামলা চালিয়েছে। ইটপাটকেল নিক্ষেপে আমাদের ১২০ জন আহত হয়েছেন। তবে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়নি। দীর্ঘদিন দরবারের কার্যক্রম চললেও এবারই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের দরবারে হামলার রেশ ধরে এখানেও হামলা হয়েছে। বর্তমানে মৌলবাদীরা মাজার ভেঙে দেওয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।’

জানা গেছে, গত শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় দেওয়ানবাগী পীরের দরবারে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তৌহিদি জনতার ব্যানারে ছড়ানো হয়, ত্রিশালে দেওয়ানবাগ পীরের দরবার রবিবার ভাঙা হবে। শনিবার বিষয়টি ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ত্রিশাল উপজেলার আমিরাবাড়ি ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে বাবে বরকত দেওয়ানবাগ শরীফ ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top