‘গণভবন কারও বাপের না, এখানে মিউজিয়াম কেন’
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯:৫৪
ছাত্র-জনতার চরম আত্মত্যাগের বিনিময়ে দুর্নীতিবাজ, স্বৈরাচারী, অর্থ পাচারকারী ও গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় হয়েছে। এ অসীম আত্মত্যাগকে আমরা ব্যর্থ হতে দিতে পারি না। অভ্যুত্থান পরবর্তী দেশের সব কর্মকাণ্ড স্বচ্ছতা ও সততার সাথে দ্রুত গতিতে বাস্তবায়ন না হলে সমস্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে অথর্ব, অকর্মণ্য, ধীরগতির ব্যক্তিদের দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। ছাত্র-জনতার রক্ত বৃথা যাবে।
আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর মগবাজারে এলডিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ।
তিনি বলেন, ‘আমরা এলডিপির পক্ষ থেকে ২ দফায় সংবাদ সম্মেলন ও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে মোট ৮৩টি প্রস্তাবনা উত্থাপন করি, যা আমাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য নয়, বরং দেশের সার্বিক মঙ্গলের জন্য। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সংস্কার বাস্তবায়নের গতি হতাশাব্যঞ্জক।
কর্নেল অলি বলেন, একজন উপদেষ্টা বলেছেন, জাতীয় সংগীত একটি বিতর্কিত বিষয়, সুতরাং এটি পরিবর্তন করা যাবে না। তার জানা উচিত, জনগণের মতামতের ওপর ভিত্তি করে সবকিছু পরিবর্তন করা সম্ভব। গণভবন কারও বাপের ভবন না, বরং জাতীয় প্রতিষ্ঠান। মিউজিয়াম করা অবশ্যই প্রয়োজন, তবে প্রশ্ন হল গণভবনে কেন? অন্য জায়গায় নয় কেন? জাতীয় প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করার আইনগত ভিত্তি এখন কোথা থেকে পেলেন? ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের ওপর অন্য কিছুই অধিকতর গুরুত্ব পেতে পারে না।
তিনি বলেন, আন্দোলনকারী ছেলে-মেয়েদের বা জনতার সরলতাকে পুঁজি করে, কোনো অন্যায় পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না। এই দেশ এখন কারো বাপের সম্পত্তি না। যত দ্রুত সম্ভব আইন শৃঙ্খলার উন্নতি সাধন করতে হবে। আমরা জানি, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি খুবই কঠিন কাজ। তবে পুলিশ প্রশাসনকে দ্রুত কার্যকর করতে হবে। তা না হলে গণহত্যাকারীরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে। আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ ও সমস্যার অন্ত নেই। এ চ্যালেঞ্জগুলো দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।
কর্নেল অলি বলেন, নিত্যপণ্যের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। অসংখ্য ছাত্র-জনতা আহত অবস্থায় হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন। এরই মধ্যে বন্যায় কয়েকটি জেলা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ভাটির দেশ হিসেবে আমরা উজানের দেশের বৈরিতার স্বীকার হচ্ছি। শেখ হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী ও লোটা-বহনকারী অনেক ব্যক্তি এখনো প্রশাসনে ঘাপটি মেরে বসে আছে। তাদের ব্যাপারে জরুরিভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গুম, খুন, দুর্নীতি, টাকা পাচারকারী, গণতন্ত্র হত্যাকারী এবং চাঁদাবাজদের আইনের আওতায় এনে যথোপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রশাসনের মধ্যে দুর্নীতিবাজ ও টাকা পাচারকারীদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা এবং তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করা খুবই জরুরি।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকার অবৈধ ক্ষমতা কুক্ষিগত করার স্বার্থে, দেশকে ভারতের কাছে নতজানু করে ফেলেছে। আমরা ইচ্ছা করলেও প্রতিবেশী বদলাতে পারব না। সুতরাং উভয় দেশের সুসম্পর্কের স্বার্থে অনতিবিলম্বে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে। আমাদেরকে আত্মসম্মান ও মর্যাদা নিয়ে প্রতিবেশীদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে যৌথ নদীগুলির পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে আমাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নাই। মেজরিটি বা মাইনরিটি বলতে কিছুই নেই। সকলে বাংলাদেশের নাগরিক এবং সকলের সমান অধিকার। আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
কর্নেল অলি বলেন, ‘আমাদেরকে সততা, ন্যায় এবং নিষ্ঠার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে, ঈমান মজবুত করতে হবে। আমরা অন্য কোনো দেশের ক্ষতি কামনা করি না। অনুরূপভাবে আমরা চাই কেউ যেন আমাদের দেশের ব্যাপারে নাক না গলায়, বরং আমরা সকলের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে চাই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস মহান আল্লাহ্ রাব্বুলআলামীন আমাদের সহায় হবেন।’
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।