ওবায়দুল কাদের কোথায়?
সুজন হাসান | প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৫০
সমকাল
দৈনিক সমকালের প্রধান শিরোনাম ‘ওবায়দুল কাদের কোথায়’। প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কোথায়? তিনি দেশে, নাকি বিদেশে? এ নিয়ে পরস্পরবিরোধী তথ্যসহ নানা আলোচনা রয়েছে। অবশ্য এর মধ্যেই ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগে নিজের সাংগঠনিক অবস্থান হারিয়েছেন। এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেওয়া না হলেও তাঁর নামে দলের কোনো বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে না।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর কয়েক সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ মাঝারি পর্যায়ের অনেক নেতা গত ৫ আগস্ট ছাত্র- জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ভারত ছাড়াও বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে গেছেন। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ নেতাই ভারতে রয়েছেন। অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। কিন্তু ওবায়দুল কাদের গ্রেপ্তার এড়াতে পেরেছেন। তাঁর অবস্থান কোথায়, সেটি এখনও অস্পষ্ট। তবে ভারতে অবস্থানকারী অনেকেই বলছেন, কাদের সে দেশে যাননি।
কেউ কেউ বলছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। কারও দাবি, সিঙ্গাপুর কিংবা থাইল্যান্ডে। আবার কারও ধারণা, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী দেশ ছাড়ার সুযোগ পাননি। তিনি দেশেই আছেন। সীমান্তবর্তী একটি জেলায় অবস্থান করছেন। সুযোগ পেলেই যে কোনো মুহূর্তে ভারতে যাবেন। সব মিলিয়ে ওবায়দুল কাদেরের সর্বশেষ অবস্থান নিয়ে বড় ধরনের ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে। নেতাকর্মী দলের সাধারণ সম্পাদকের অবস্থান জানার চেষ্টা করছেন।
ভারত, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা, বেলজিয়ামসহ বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে থাকা নেতারাও ওবায়দুল কাদেরের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। গণঅভ্যুত্থান পরিস্থিতি কেন তৈরি হলো-আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকেই নানা ভুল সিদ্ধান্তকে দায়ী করে ব্যক্তি ওবায়দুল কাদেরের দিকে আঙুল তোলেন। তাদের দাবি, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বড় দায় তাঁর ঘাড়ে চাপে। সংগঠনে তিনি নিজেকে 'একক কর্তৃত্বের' জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ওবায়দুল কাদের আর কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না।
ভারতে আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীর সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের দেখা হলে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানা গেছে। কয়েকজন নেতা সমকালকে বলেছেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর রোষানলের শিকার হয়ে ইতোমধ্যে ভারতে নাজেহাল হয়েছেন প্রভাবশালী একজন সাবেক মন্ত্রী। ওবায়দুল কাদেরের বেলায় এমন অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
কাদেরকে ঘিরে থাকা অন্তত সাতজন প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতার পাশাপাশি কমপক্ষে তিনজন সাবেক মন্ত্রী ও একজন সাবেক উপদেষ্টার কারণে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে নেতাকর্মীর দূরত্ব বেড়েছিল। তাদের কারণে কেন্দ্রীয় নেতা অনেকেই ইচ্ছা থাকার পরও শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে ওই সময়কার বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের মতামত দিতে পারতেন না।
ইত্তেফাক
‘টাস্কফোর্স গঠনের পরও কমানো যাচ্ছে না নিত্যপণ্যের দাম’-এটি দৈনিক ইত্তেফাকের প্রধান খবর। প্রতিবেদন বলা হয়, বাজার তদারকিতে সারাদেশে টাস্কফোর্স গঠন করেও কমানো যাচ্ছে না নিত্যপণ্যের দাম। গত সোমবার দেশের প্রতিটি জেলা পর্যায়ে এই টাস্কফোর্স গঠন করার পর ডিম ও ব্রয়লার মুরগীর দাম আরো বেড়েছে। এছাড়া নতুন করে দাম বাড়ার তালিকায় যুক্ত হয়েছে ময়দা, পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল, পামঅয়েল ও গরুর মাংস। আর সবজির বাজারেতো রীতিমতো আগুন। সবমিলিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে ভোক্তারা। সবচেয়ে বেশী বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পণ্যের দাম কমাতে ইতিমধ্যে কোন কোন পণ্যের শুল্ককর কমিয়েছে সরকার। আবার কোনটির শুল্ককর কমানোর উদ্যেগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া, প্রায় প্রতিদিনই বাজারে অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু এর সুফল পাচ্ছে না ভোক্তারা। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বাজারে এখনো সিন্ডিকেট কাজ করছে। এই সিন্ডিকেটের কারণেই বাজারব্যবস্থা রীতিমতো অসহায়।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার, শান্তিনগর ও তুরাগ এলাকার নতুন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, গত পাঁচ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি প্যাকেট ময়দায় ৫ টাকা বেড়ে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা, দেশী পেঁয়াজে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ১১০ থেকে ১২০ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজে ১০ টাকা বেড়ে ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলে ২০ টাকা বেড়ে ৮০০ থেকে ৮১০ টাকা ও খোলা পামঅয়েলে ৩ থেকে ৭ টাকা বেড়ে ১৪৪ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংসের কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর আগে থেকে বাড়তে থাকা ডিম ও ব্রয়লার মুরগীর দাম আরো বেড়েছে। এরমধ্যে ফার্মের বাদামি রংয়ের ডিমের হালিতে ২ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা ও ব্রয়লার মুরগীর কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে তা ১৯০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকারের বিপনন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকালের বাজারদরের প্রতিবেদনেও এই পণ্যগুলোর দাম বাড়ার তথ্য জানিয়েছে। অথচ অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজারে টাকার সরবরাহ কমিয়ে আনার নীতি গ্রহণ করেছে।
এছাড়া, গত মাসে অপরিশোধিত ও পরিশোধিত চিনির ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। এতে আমদানি পর্যায়ে প্রতি কেজি অপরিশোধিত চিনির শুল্ককর ১১ দশমিক ১৮ টাকা এবং পরিশোধিত চিনির শুল্ককর ১৪ দশমিক ২৬ টাকা কমবে। কমানো হয়েছে পেঁয়াজের শুল্ককরও।
যুগান্তর
দৈনিক যুগান্তরের প্রধান শিরোনাম ‘সম্পদ সন্ধানে ৫ কৌশল’। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশ থেকে পাচারের টাকা সন্ধানে পাঁচ কৌশলে এগোতে চায় টাস্কফোর্স। এগুলো হচ্ছে আমদানি পণ্য এবং রপ্তানির মূল্য দেশে না আনা, আমদানি বা রপ্তানির ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য, হুন্ডি ব্যবসার মাধ্যমে এবং অন্যান্য পন্থায় টাকা পাচার। উপকরণগুলোর তথ্য সংগ্রহের পর বিশ্লেষণের মাধ্যমে শনাক্ত করা হবে দেশ থেকে কারা, কিভাবে টাকা পাচার করেছে।
দ্বিতীয়ত, কোন কোন দেশে পাচার করেছে এবং পাচার করা সম্পদ কি অবস্থায় আছে। পাচারের টাকা শনাক্ত ও দেশে ফেরাতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষেত্রভেদে এর আলোকে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সাবেক ১৪ মন্ত্রী, ১৬ এমপি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের তথ্য জানতে বিএফআইইউ থেকে এগমন্ট গ্রুপের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সম্পর্কেও তথ্য চাওয়া হয়েছে।
তথ্য সংগ্রহের পর পাচারকারীর বিরুদ্ধে আরও বহুমুখী তদন্ত শেষে বিশদ প্রতিবেদন তৈরি হবে। এর ভিত্তিতে হবে মামলা। মামলা পরিচালনায় দক্ষ আইনজীবী নিয়োগের পাশাপাশি সরকারি অন্যান্য সংস্থা থেকেও সহায়তা নিশ্চিত করা হবে। আদালতে পাচারের ঘটনা প্রমাণ করা গেলেই সেগুলো ফিরিয়ে আনার জন্য জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ প্রক্রিয়ায় সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে কাজে লাগানো হবে।
পাচার করা সম্পদ দেশে ফেরত আনা এবং ওইসব সম্পদের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সম্প্রতি পুনর্গঠিত টাস্কফোর্স এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এগোতে চায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে প্রধান করে সম্প্রতি এই টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করা হয়। বুধবার টাস্কফোর্সের প্রথম বৈঠক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এতে টাস্কফোর্সের সদস্যসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে দেশ থেকে কারা কিভাবে টাকা পাচার করেছেন, কোথায় করেছেন, সেগুলো কিভাবে শনাক্ত এবং ফিরিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
প্রথম আলো
দৈনিক প্রথম আলোর প্রধান শিরোনাম ‘বিপুল ব্যয়ে স্টেশনবিলাস’। খবরে বলা হয়, প্রায় ৫৮ কোটি টাকা ব্যয় করে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি রেলস্টেশন নির্মাণ করেছে রেলওয়ে। প্রতিদিন গাজীপুর শিল্পাঞ্চল, ঢাকা ও উত্তরবঙ্গের মধ্যে ১০ হাজারের বেশি যাত্রী যাতায়াত করবে—এমনটা ধরে নিয়ে স্টেশনটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু গত তিন বছরে স্টেশনটি থেকে দিনে গড়ে যাত্রী যাতায়াত করেছে মাত্র ৪৭ জন। কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বেতন–ভাতা, রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন খরচের হিসাবে বছরে এই স্টেশনে ব্যয় ৩০ লাখ টাকার বেশি। অথচ বছরে গড় আয় সোয়া ৯ লাখ টাকা। রেলওয়ে সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কের পাশে আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন বিশাল পরিসরে এই স্টেশন ২০১৮ সালে উদ্বোধন করা হয়। চালুর ছয় বছর পর দেখা যাচ্ছে, এই স্টেশনে মাত্র দুটি ট্রেন থামে। এগুলো হচ্ছে টাঙ্গাইল কমিউটার ও সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস। অথচ এই স্টেশন হয়ে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল ও উত্তরবঙ্গের পথে ৪০টি ট্রেন চলাচল করে। মূলত যাত্রী না পাওয়ায় এসব ট্রেন এই স্টেশনে থামানো হয় না।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের গত সাড়ে ১৫ বছরে রেলের যাত্রীসেবা উন্নত করা হয়নি। কেনা হয়নি রেলের প্রয়োজনীয় ইঞ্জিন ও কোচ। জনবলেরও ঘাটতি রয়েছে। অথচ এই সময়ে বিপুল ব্যয়ে নতুন রেললাইনের পাশাপাশি স্টেশন ভবন নির্মাণ ও মেরামত করা হয়েছে। যদিও এসব স্টেশন দিয়ে ট্রেন চলে না কিংবা চললেও থামে না। ফলে সাধারণ মানুষের তা কোনো কাজে লাগছে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের রেল মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত সাড়ে ১৫ বছরে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো আগ–পাছ বিবেচনা করা হয়নি। খেয়ালখুশিমতো অবকাঠামো বানানো হয়েছে। এখন যেখানেই হাত দিই, সেখানেই অনিয়ম পাওয়া যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার এভাবে অপরিকল্পিতভাবে কোনো প্রকল্প নেবে না। অতীতের অনিয়মগুলো খতিয়ে দেখা হবে।
বণিক বার্তা
দৈনিক বণিক বার্তার প্রধান শিরোনাম নিত্যপণ্যের বাজারে ‘এক-এগারো সিনড্রোম’। প্রতিবেদনে বলা হয়, বহুল আলোচিত এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে। দায়িত্ব গ্রহণের পরই সারা দেশে জোরদার করা হয় দুর্নীতিবিরোধী অভিযান। অভিযান থেকে রক্ষা পেতে গা ঢাকা দেন অনেক বড় ব্যবসায়ী। ব্যাহত হয় পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা। ওই বছর দেশে ঘটে যায় দুই দফা বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় সিডর। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষি খাত। এসবের প্রভাবে অস্থির হয়ে ওঠে বাজার পরিস্থিতি।
খাদ্য আমদানির উদ্যোগ নিয়েও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায়নি। ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে যায় মূল্যস্ফীতি। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি ওঠে প্রায় ১৭ শতাংশে। নিত্যপণ্যের দামের এমন উত্থানে সে সময় জনরোষ বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে নির্বাচন দিয়ে সরে যেতে বাধ্য হয় ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
দেড় দশকের মাথায় নিত্যপণ্যের বাজারে সে সময়কার পরিস্থিতিরই পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে। আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের দায়িত্ব নিয়েছে অধ্যাপক ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের ১২ দিনের মাথায় দেশের মধ্য-পূর্বাঞ্চলীয় ১১ জেলায় দেখা দেয় স্মরণকালের ভয়াবহ এক বন্যা। এতে শুধু কৃষি খাতেই ক্ষয়ক্ষতি হয় অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা, যা মোট ক্ষয়ক্ষতির প্রায় ৩৬ শতাংশ। এ বন্যার প্রভাব কাটিয়ে না উঠতেই চলতি মাসের শুরুতে আবার বন্যাক্রান্ত হয় শেরপুর, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ ও জামালপুর। প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, এ বন্যায় শুধু কৃষি খাতেই ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার।
কালের কণ্ঠ
সাবেক এমপির দুর্নীতি নিয়ে দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রধান খবর ‘হারুন ব্রাদার্সের দাপট-দৌরাত্ম্য’। প্রতিবেদনে বলা হয়, সব রাজনৈতিক দলের সুবিধাভোগী সাবেক এমপি বজলুল হক হারুন। ঝালকাঠি-১ আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্য ‘বি এইচ হারুন’ নামেই এলাকায় পরিচিতি পেলেও সুনামের চেয়ে তাঁর দুর্নামই বেশি। এমপি ছিলেন ঠিকই; তবে এলাকায় যাতায়াত ছিল কম। তবে নিজে না থাকলেও এলাকা দাপিয়ে বেড়াতেন তাঁর ছোট ভাই মুজিবুল হক কামাল।
বলা যায়, তিনিই ছিলেন এলাকার অলিখিত এমপি, যাঁকে সবাই ‘বিকল্প এমপি’ বলেই জানত। সব চলত তাঁরই নিয়ন্ত্রণে। ছোট ভাই কামালকে এক পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও বানিয়েছিলেন বি এইচ হারুন। এমপি হারুন আর তাঁর ভাই মিলে ত্রাণের অনুদান থেকে শুরু করে গত ১৫ বছরে কাবিটা-কাবিখার বেশির ভাগই আত্মসাৎ করেছেন।
ক্ষমতায় থেকে এই পরিবার এখন অন্তত ৬০০ কোটি টাকার মালিক বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। গত কয়েক দিন রাজাপুর ও কাঁঠালিয়ার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে, স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছোট প্রকল্পে ৫০ হাজার বরাদ্দ হলে সেখানে খরচ করা হতো মাত্র ১০ হাজার টাকা। বাকি ৪০ হাজার টাকাই আত্মসাৎ করতেন। আবার অপ্রয়োজনীয় কাজও করেছেন।
দেশ রূপান্তর
দৈনিক দেশ রূপান্তরের প্রধান শিরোনাম ‘খেলাপি ঋণেই শ্বাসরুদ্ধ’। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতিহাসের সর্বোচ্চ পরিমাণ খেলাপি ঋণ রেখে গেছে আওয়ামী লীগ সরকার। বারবার পুনঃতফসিল করে, আদালতের স্থগিতাদেশ ও অবলোপনের পরও ঋণখেলাপের সমস্যার সমাধান হয়নি। খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ছয়টি ব্যাংকেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ বিতরণ করা মোট ঋণের ৫০ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
ঋণখেলাপের তালিকায় দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকও রয়েছে। ৩০ শতাংশের ওপর খেলাপি ঋণ রয়েছে আরও চার ব্যাংকের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৫-১৬ সালের পর নিয়মনীতি উপেক্ষা করে কিছু গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানকে নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে এসব ব্যাংক।
যারা ঋণখেলাপ করেছে তাদের অনেক সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তাদের অনুকূলে বিভিন্ন সময়ে ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ, অবলোপন ও পুনর্গঠন করা হয়েছে। ফলে অস্তিত্বের সংকটে রয়েছে বেশ কিছু ব্যাংক। এসব ব্যাংকের বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলে সংকট আরও গভীর হবে।
আজকের পত্রিকা
‘শেখ পরিবারের সদস্যরা এখন কে কোথায়’-এটি দৈনিক আজকের পত্রিকার প্রথম পাতার খবর। প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। দলের সভাপতি ও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ওই দিনই ভারতে চলে যান। এরপর দ্রুত আত্মগোপনে চলে যান দেশে থাকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও চার মেয়াদের বিভিন্ন সময় দায়িত্বে থাকা সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা।
তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সাবেক সরকারের অনেক এমপি-মন্ত্রীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী অনেক নেতাই এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত ধরাছোঁয়ার বাইরে গত সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা বৃহত্তর শেখ পরিবারের সদস্যরা।
শেখ হাসিনার স্বজনেরা গত সাড়ে ১৫ বছরে সরকারের মন্ত্রী, এমপি, মেয়রসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে
দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত আটজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় ছিলেন। এমপি হয়েছিলেন প্রায় ১৫ জন। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের মেয়র তিনজন, সহযোগী সংগঠনের চেয়ারম্যান ও সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করেন তিনজন। আওয়ামী লীগের পুরো মেয়াদে সরকার থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তাঁরা। তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হলেও এখনো তাঁরা ধরাছোঁয়ার বাইরে।
শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। ৫ আগস্টের পরে একাধিকবার ফেসবুকে লাইভে এসে বিভিন্ন কথা বলেছেন। শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক মহাপরিচালক। তিনি ভারতেই অবস্থান করছেন।
পুতুলের শ্বশুর খন্দকার মোশাররফ হোসেন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ছিলেন। তিনি দুই মেয়াদে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে তৎকালীন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে সরিয়ে খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত হন তিনি। আলোচনায় আছে, সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় ছিটকে গেছেন খন্দকার মোশাররফ। তিনি বর্তমানে সুইজারল্যান্ডে আছেন বলে জানা গেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানা বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে ৫ আগস্টই ভারতে চলে যান। তিনি ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী। তাঁর ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) পরিচালিত হয়। শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ সংসদ সদস্য। আরেক মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী। তাঁরা সবাই ব্রিটেনে আছেন বলে জানা গেছে।
ডেইলি স্টার
দ্য ডেইলি স্টারের প্রধান শিরোনাম ‘Price hike of essentials: Poor, middle class in a tight corner’ অর্থাৎ ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি: দরিদ্র, মধ্যবিত্তরা কোণঠাসা’।
ঢাকার বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে বাজার পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, ভোক্তারা অভিযোগ করেছেন এক মাস আগে ঢেড়শের কেজি ছিল ৪০ থেকে ৬০ টাকা। সেটার দাম বর্তমানে ১১০ টাকা কেজি। কুমড়ার দাম গত মাসে কেজি ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, করলার দামও মাসের ব্যবধানে ৫০-৬০ টাকা থেকে বেড়ে কেজি প্রতি ১০০-১২০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। টমেটো প্রতিকেজি ১৬০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৬০ টাকা। এক মাস আগের তুলনায় বেগুন প্রতিকেজি ১০০-১৪০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে কেজি ১৮০-২০০ টাকা। শিম প্রতি কেজি ৬০-৮০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১২০-১৬০ টাকা।
নতুন সরকার সবজির দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে উদাসীন বলে অভিযোগ ভোক্তাদের। এ কারণে নিম্ন ও স্থির আয়ের পরিবারগুলো ব্যাপক সংকটের মুখে পড়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়।
বাংলাদেশ প্রতিদিন
‘সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছেই’-এটি দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, সরকার পতনের পর হঠাৎ করেই যেন বেড়ে চলছে সামাজিক অস্থিরতা। রাজনৈতিক সহিংসতার পাশাপাশি দিনদুপুরে ঘটছে ছিনতাই ও নারী হেনস্তার ঘটনা। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে নীরব চাঁদাবাজি, দখল।
নানা অজুহাতে তৈরি হচ্ছে শ্রমিক অসন্তোষ। অশান্ত হয়ে উঠছে পাহাড়। মাঝে মাঝেই দেশের বিভিন্ন স্থানে গণপিটুনিতে নির্মম মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি মহল বিরামহীনভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে পরিস্থিতি অশান্ত করতে। পার্শ্ববর্তী একটি দেশ সেটাকে উসকানি দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিমত তাদের।
মানবাধিকারকর্মী ও অপরাধ বিশ্লেষক নূর খান বলেন, সাবেক স্বৈরাচার সরকার সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়ে পালিয়েছে। তবে তার অনুচরেরা রয়ে গেছে। তারা এখনো সক্রিয়। সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে। তবে সরকারের উচিত হবে কঠোর হস্তে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা। সূত্রঃ মানবজমিন
বিষয়: ওবায়দুল কাদের সেতুমন্ত্রী
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।