মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১

সাগর-রুনি হত্যার ১৩ বছর পর রহস্য উন্মোচনের আশ্বাস পিবিআইয়ের

বার্তা বিভাগ | প্রকাশিত: ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১:৩৬

ফাইল ফটো

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। আলোচিত এই হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন পিছিয়েছে শতাধিকবার। বিচারের দাবিতে এখনও তার পরিবার ঘুরছে আদালতের বারান্দায়। কিন্তু ১৩ বছরেও এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটিত হয়নি। রহস্য রয়েছে একই তিমিরে। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নতুন নতুন তারিখ ধার্য হচ্ছে।

 

সাগর সরওয়ার মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক এবং তার স্ত্রী মেহেরুন রুনি ছিলেন এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। ২০১২ সালের এদিন রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন এই দম্পতি। এ পর্যন্ত এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়েছে ১১৫ বার। আগামী ২ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে।


সাগর-রুনি হত্যার পর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন দ্রুত রহস্য উদ্‌ঘাটনের এবং খুনিদের বিচারের মুখোমুখি করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ, পরে ডিবি দুই মাস এবং সর্বশেষ ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে র‍্যাব প্রায় সাড়ে ১২ বছর তদন্ত করেও রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি। এখনো অজানাই থেকে গেছে, তাদের খুনি কে বা কারা, কেন খুন হয়েছেন।

অবশ্য গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়। হাইকোর্টের নির্দেশে ২৩ অক্টোবর পিবিআইপ্রধানকে নিয়ে চার সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। ছয় মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করারও নির্দেশ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।


তদন্তভার পাওয়ার পর পিবিআই এরই মধ্যে বিশিষ্ট সাংবাদিক, একটি টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৬২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এই মামলায় কারাগারে থাকা পাঁচজনকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

পিবিআইপ্রধান মোস্তফা কামাল জানান, খুব দ্রুত এই হত্যা মামলার তদন্ত শেষ করার চেষ্টা চলছে। তার আশা, দ্রুতই রহস্য উদ্‌ঘাটিত হবে।

র‍্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা ২০২২ সালের ৫ অক্টোবর মামলার তদন্তের সর্বশেষ একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পর সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়, তাদের পাঁচজন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

মামলার নথিতে দেখা যায়, ২০১২ সালের ১০ অক্টোবর এই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের রিমান্ডে নেওয়া হলেও কোনো তথ্য উদ্ধার হয়নি। এ মামলায় কয়েক বছর কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন তানভীর রহমান, পলাশ রুদ্র পাল ও মিন্টু ওরফে বারোগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু।

আগের তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুই ব্যক্তি। মার্কিন একটি ল্যাবকে তাদের ছবি আঁকার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরেও ওই ছবি পাওয়া যায়নি।

সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে সাংবাদিক সমাজ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। কিন্তু রহস্য একই তিমিরে রয়ে গেছে। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজিজুল হক।

মামলার বাদী ও নিহত মেহেরুন রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, ‘এত বছরে কিছু হয়নি। বর্তমানে শক্তিশালী তদন্ত সংস্থা পিবিআই তদন্ত করছে। নতুন তদন্ত কর্মকর্তা অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন বলে জেনেছি। আমরা কিছুটা আশাবাদী। তবে রহস্য উদ্‌ঘাটিত না হওয়া পর্যন্ত পুরোপুরি আশাবাদী হতে পারছি না।’

নওশের আলম রোমান আরও বলেন, ‘আমরা চাই, যেন সুষ্ঠু তদন্ত হয়। প্রকৃত খুনি যারা, তাদের যেন চিহ্নিত করা হয়।’

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সাগর ও রুনির হত্যাকাণ্ডের সময় বাসায় ছিল তাদের একমাত্র সন্তান সাড়ে চার বছর বয়সী মিহির সরওয়ার মেঘ। এখন সে এ লেভেল পাস করেছে। হত্যার ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা করেন। প্রথমে এ মামলা তদন্ত করছিল শেরেবাংলা নগর থানা–পুলিশ। চার দিন পর মামলার তদন্তভার ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ৬২ দিনের মাথায় ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। এরপর আদালত র‍্যাবকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে গত ৪ নভেম্বর র‍্যাবের কাছ থেকে মামলার নথিপত্র বুঝে নেয় পিবিআই। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজিজুল হক।

এর আগে গত বছরের ২৩ অক্টোবর এ মামলার তদন্তে চার সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। টাস্কফোর্সকে মামলার তদন্ত ছয় মাসের মধ্যে শেষ করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

টাস্কফোর্সের প্রধান ও পিবিআইয়ের প্রধান মো. মোস্তফা কামাল বলেন, খুনের রহস্য উদ্‌ঘাটন হওয়ার মতো এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দিতে টাস্কফোর্স আদালতের নির্দেশ মতো কাজ করছে।

পিবিআই আমার সঙ্গে কয়েকবার কথা বলেছে। সবকিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছে, সরকার ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে পারবে। তবে তদন্তের ফল না পাওয়া পর্যন্ত আশাবাদী হতে পারছি না।

সূত্র জানায়, তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর পিবিআই নথিপত্র নিয়ে বিশ্লেষণ ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তারা তদন্ত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগার থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুনিকে পেছন থেকে ডান হাত দিয়ে পেটের ডান পাশে কোপ দেওয়া হয়েছে। তার পরনের টি–শার্টে ওই ব্যক্তির ডিএনএ পাওয়া গেছে। সবুজ রঙের ওড়না দিয়ে সাগরের হাত–পা বাঁধা ছিল। সেখানে আরেকজনের ডিএনএ পাওয়া গেছে। পিবিআই এখন অজ্ঞাতপরিচয় ওই দুই ব্যক্তির ডিএনএ মেলাতে সন্দেহভাজনদের খুঁজছে।

পিবিআই জানায়, সাগর-রুনির সঙ্গে কারও ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সম্পত্তিগত, পেশাগত শত্রুতার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাদের সঙ্গে কারও বিরোধ ছিল না। তারা কর্মজীবনে কখনো হুমকি পাননি। গ্রেপ্তার তানভীর সাংবাদিক রুনির পূর্বপরিচিত হলেও তিনি খুনের সঙ্গে জড়িত নন।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top