কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন মার্ক কার্নি। তিনি বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্থলাভিষিক্ত হলেন। মার্ক কার্নি ব্যাংক অব কানাডার গভর্নর ছিলেন। তিনি ব্যাংক অব ইংল্যান্ডেরও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ট্রুডো তার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
রবিবার (৯ মার্চ) রাতে কানাডার ক্ষমতাসীন দল লিবারেল পার্টি মার্ক কার্নিকে নতুন দলীয় নেতা হিসেবে নির্বাচিত করে। আর নিয়ম অনুযায়ী এখন তিনি নতুন প্রধানমন্ত্রীও হবেন। দলীয় প্রধান হতে মোট চারজন প্রার্থী লড়েছিলেন। সেখান থেকে মার্ক কার্নি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্থলাভিষিক্ত হলেন।
স্থানীয় সময় রবিবার প্রধামন্ত্রী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করেন লিবারেল পার্টির প্রেসিডেন্ট সচিত মেহরা। মার্ক কার্নি ব্যাংক অব কানাডার গভর্নর ছিলেন। তিনি ব্যাংক অব ইংল্যান্ডেরও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। রবিবার সদস্যদের ভোটে মার্ক কার্নি ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৭৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিনা ফ্রিল্যান্ড পেয়েছেন ১১ হাজার ১৩৪ ভোট।
টানা ৯ বছর ক্ষমতায় থাকার পর গত জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন ট্রুডো। এরপর তার উত্তরাধিকার বাছাইয়ের জন্য ৯ মার্চ দিন ধার্য করা হয়েছিল।
কানাডার রাজনৈতিক ব্যবস্থায় হাউস অব কমন্সের সবচেয়ে বড় দল হিসেবে যিনি লিবারেল পার্টির প্রধান হবেন, দেশটির প্রধানমন্ত্রীও হন তিনি। এ হিসেবে মার্ক কার্নি নির্বাচনের আগপর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কে এই মার্ক কার্নি?
উত্তর-পশ্চিম টেরিটরিজে জন্ম নেওয়া এবং আলবার্টা প্রদেশে বেড়ে ওঠা কার্নি নিজেকে রাজনীতির বাইরের একজন হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, যিনি অর্থনৈতিক অস্থিরতার সময় কানাডাকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারেন।
কার্নি হার্ভার্ড ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়েছেন এবং বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকসে এক দশকেরও বেশি সময় কাজ করেছেন। তিনি ব্রুকফিল্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন, যেখানে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিনিয়োগের প্রচারণা চালিয়েছেন।
২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার সময় তিনি ব্যাংক অব কানাডার গভর্নর ছিলেন এবং তাৎক্ষণিক ও কার্যকর সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কানাডাকে বড় ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেন। ২০১৩ সালে তিনি ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন এবং ২০২০ সালে যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইউ) থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন।
সে সময় ব্রেক্সিটের ফলে ব্রিটিশ অর্থনীতির ওপর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন কার্নি, যা ব্রেক্সিটপন্থীদের ক্ষুব্ধ করেছিল। তবে, অনেক বিশেষজ্ঞ তাকে এমন একজন দক্ষ নীতি নির্ধারক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন, যিনি সংকট মোকাবিলায় দক্ষতা দেখিয়েছেন।
অর্থনৈতিক বিষয়ে তার দক্ষতা অস্বীকার করার মতো নয়, তবে নির্বাচনের রাজনীতিতে তার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই, যা অনেকের উদ্বেগের কারণ। ৫৯ বছর বয়সি কার্নি ‘রাজনৈতিক বহিরাগত’ হিসেবেই বেশি পরিচিত।
তিনি এর আগে জাস্টিন ট্রুডোর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। তবে, সরাসরি কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। ফলে, নেতৃত্বের দৌড়ে সাধারণ জনগণের কাছে নিজের পরিচিতি বাড়ানোর জন্য তাকে অনেক বেশি প্রচারণা চালাতে হয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।