বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১

ছেলের জন্মদিনে মায়ের চিঠি শেয়ার মুশফিকুল ফজলের

‘আমাদের পাওয়া না পাওয়ার হিসেব যেন হায়নাদের সুযোগ না করে দেয়’

Nasir Uddin | প্রকাশিত: ২৪ মার্চ ২০২৫, ১৫:৪৯

ফাইল ছবি

হাজারো ছাত্র-জনতার তাজা রক্তের বিনিময়ের অর্জিত বিপ্লব এখন বেহাত হওয়ার পায়তারা চলছে। পতিত আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। রাজনৈতিক দলগুলোর অন্ত:কোন্দলে সুযোগ নিচ্ছে পতিত সরকার। এই অবস্থায় জুলাই আন্দোলনে শহিদ ফাইয়াজের মায়ের একটি চিঠি শেয়ার করে সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন মেক্সিকোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী।

সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন এই রাষ্ট্রদূত রিখেছেন, আমাদের অসতর্কতা, অবহেলা, কিংবা পাওয়া-না পাওয়ার হিসাব যেন হায়নাদের সুযোগ না করে দেয়। বিদ্বেষ আর জিঘাংসার বিষ যেন আমাদের বাতাসকে ভারি না করে তোলে। সেই সঙ্গে কত ত্যাগ ও আত্মদানের বিনিময়ে এই নতুন বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি, যে মায়েরা তার সন্তানদের হারিয়েছেন প্রতিমুহূর্তে তাদের সময়টা কীভাবে কাটছে তা প্রকাশ পেয়েছে তার পোস্টে।

ছেলের ১৮তম জন্মদিনে শহিদ ফাইয়াজের মায়ের লেখা সেই চিঠিটি শেয়ার দিয়ে রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী লিখেছেন, ‘ফেসবুক থেকে তুলে শেয়ার করলাম, সেই চিঠিটি! নাড়ি ছেঁড়া বুকের মানিক হারা মায়েদের আর্তনাদ বৃথা যেতে পারে না। আমাদের অসতর্কতা, অবহেলা, কিংবা পাওয়া-না পাওয়ার হিসাব যেন হায়নাদের সুযোগ না করে দেয়। বিদ্বেষ আর জিঘাংসার বিষ যেন আমাদের বাতাসকে ভারি না করে তোলে। গুজবের ডালপালাকে বিদীর্ণ করে আসুন পথ চলি নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে— বিশ্বসভায় নতুন পরিচয়ে, বিজয়ীর বেশে, আত্মমর্যাদায় উদ্ভাসিত হয়ে।’

এরপর সেই চিঠিটি তুলে ধরেন তিনি। ছেলের ১৮তম জন্মদিনের দিন গত ১২ সেপ্টেম্বর যা লিখেছিলেন ফাইয়াজের মা। যুগান্তর পাঠকদের জন্য যা হুবহু তুলে ধরা হলো-

প্রিয় ফাইয়াজ,

আব্বা আমার- আমার কলিজা বাচ্চা, আমার চাঁদের টুকরা। কেমন আছো আব্বা? পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকলে আজকে তোমার জন্য একটি বিশেষ দিন ছিল। কত কত স্মৃতি আমাদের। আব্বা আমি জানি তুমি খুব ভালো আছো। আমি তোমার জন্য কান্না করলেই মাহা আমাকে বলে ‘মা, ভাইয়া তো শহীদ, ভাইয়া কত ভালো আছে! তুমি কাঁদো কেন?’

জানো বাবা, সেদিন বাজার করতে গিয়ে যেই চকোলেট এর শেলফের সামনে দিয়ে যাচ্ছি- আমি দেখতে পেলাম ঠিক তুমি দাঁড়িয়ে, আর ক্যাডবেরির একটা বড় সিল্ক এর প্যাকেট আমাকে দেখিয়ে বলেছ মুনাম্মা নেই এটা?’ বাবা আমি আর চকোলেট কিনি না, মাহা মাইরীন ও আর আবদার করে না।

সেইদিন মাইরীন মাহাকে বলছে ‘জানো মাহা-মা আর কখনও বিরিয়ানি রাঁধবে না। ভাইয়া যে নাই, তাই।’ সত্যিই তো বাবা, আমি কী করে রান্না করবো বলো? তোমাকেই তো খাওয়াতে পারবো না!

আব্বা, আমি কেমন আছি জিজ্ঞেস করবে না? আমি যে কেমন আছি জানি না বাবা- শুধু আমার কিছু ভালো লাগে না। শুধু মনে হয় অনেক দূরে হাঁটতে হাঁটতে কোথাও চলে যেতে পারতাম-। যেখানে কেউ নাই! চুপচাপ।

আমি যখন স্কুলে যাই বা অন্য কাজে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর ক্রস করতে হয়, জানো বাবা আমি পুরোটা রাস্তা চোখ বন্ধ করে থাকি। সিটি হসপিটালের সামনে দিয়ে গেলেও চোখ বন্ধ করে রাখি। মনে হয় কেন আমাকে এসব পথে চলতে হচ্ছে। ধানমন্ডি ২৭টা এখন সবচেয়ে বিভীষিকাময় আমার জন্যে।

আচ্ছা বাবা এই যে তোমার জন্মদিন, রোজার ঈদ, কুরবানির ঈদ, পহেলা বৈশাখ আসবে..- আমি কী করবো বলো তো? আমাদের না একসাথে শপিং এ যাওয়ার কথা! তারপর শপিং শেষে পিৎজ্জ্বা আর কফি খেয়ে রিকশা চড়ে গল্প করতে করতে বাসায় ফেরার কথা!

আমি সারাটা দিন মনে মনে তোমার সাথে কথা বলি, তুমি যে কত কত উপদেশ দাও আমাকে! কত বড় হয়ে গেছো তুমি আব্বা!

জানো বাবা তোমার জন্য যখন দোয়া করি, তখন আমি একটু স্বার্থপর হয়ে যাই। আমি আল্লাহকে বলি, আল্লাহ ফাইয়াজ কি বুঝতে পারছে, ওর জন্য আমি কত কষ্টে আছি? ওকে প্লিজ একটু বলে দিয়েন যে তোমার মুনাম্মা ভালো নাই। তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকা তোমার মুনাম্মার জন্য কঠিন শাস্তি হয়ে যাচ্ছে। আবার মনে হয়, এটা শুনলে হয়তো তোমার মন খারাপ হবে! তখন আবার কথা বদলে ফেলি। শুধু চাই তুমি ভালো থাকো।

তুমি ইনশাল্লাহ অনেক অনেক ভালো আছো। কারণ, যত মানুষ তোমার জন্য কেঁদেছে আর যত লোক তোমার জন্য দোয়া করছে- তুমি নিশ্চয়ই জানতে পারছ। মাতৃভূমির ক্রান্তিলগ্নে যেই ছেলে বীরের মত প্রাণ দেয়, তাকে কেউ ভালো না বেসে পারেবাবা? সমস্ত পৃথিবী তোমাকে এখন চেনে, আব্বা।

অনেক ভালোবাসি বাবা, অনেক দোয়া রইল। শুভ জন্মদিন বাবা।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top