কেন খুন হলেন পারভেজ, কান্না থামছে না পরিবারের, সুষ্ঠু বিচার চায় সহপাঠীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:১৭

প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীতে আলামিনের দোকান। সেই দোকানের সামনে পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছিলেন ও হাসছিলেন। তাদের পেছনে দাঁড়িয়েছিলেন ইউনিভার্সিটি অব স্কলারসের দুই ছাত্রী। ওই দুই ছাত্রীর মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি আবুজর গিফারি ওরফে পিয়াসের প্রেমিকা। সে বিষয়টি মোবাইল ফোনে পিয়াসকে জানায়।
পরে পিয়াস ও তার লোকজন আলামিনের দোকানের সামনে ছুটে আসে। একপর্যায়ে শুরু হয় বাকবিতণ্ডা। পিয়াস জুনিয়র হওয়ার পরও পারভেজদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করছিলেন। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সমাধান করে দেওয়ার পরও সন্তুষ্ট হতে পারেননি পিয়াস। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ও এর বাইরের সহপাঠীদের নিয়ে পারভেজ ও তার বন্ধুদের ওপর হামলা করেন। এ সময় ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে মারা যান পারভেজ। আর হামলাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
এদিকে, জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে হত্যার ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে, এমনকি রাজনৈতিক অঙ্গনেও প্রতিক্রিয়া হয়েছে। নিহত শিক্ষার্থীর পরিবার শোকেবিহ্বল হয়ে পড়েছে। বাড়িটিতে দুইদিন ধরে কান্না আর আহাজারি চলছে।
সামান্য একটি অভিযোগের ভিত্তিতে একজন শিক্ষার্থীকে এভাবে হত্যার ঘটনা সারা দেশজুড়ে নাড়া দিয়েছে। যদিও পুলিশ তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার আদালত তাদের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। নিহত শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা প্রতিবাদের পাশাপাশি দাবি করেছে, এই ঘটনাকে নিয়ে রাজনীতিকরণ নয়, বরং সুষ্ঠু বিচার চায়।
মানবাধিকার সংগঠক, সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং পুলিশের একজন সাবেক প্রধান বলছেন, পুরো ঘটনায় সামাজিক ও মানসিক অস্থিরতার পাশাপাশি ক্ষমতা প্রদর্শন, নিজের হাতে শাস্তি দেয়ার প্রবণতা এবং বিচারহীনতার প্রতিফলন ঘটেছে।
মামলার বিবরণ ও পারভেজের সহপাঠীদের কাছ থেকে ঘটনার যে বর্ণনা পাওয়া গেছে তা হলো পারভেজ বন্ধুদের সাথে একটি দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলো। তাদের কাছেই ইংরেজি ও ইন্টারন্যাশনাল হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সাথে অন্য একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন ছাত্রীও ছিলো। তারা পারভেজের বিরুদ্ধে উত্যক্ত করার অভিযোগ করেন। পরে প্রাইমএশিয়ার প্রক্টরের কাছেও যান তারা।
প্রক্টর এ ঘটনায় পারভেজকে ডেকে নিলে পারভেজ অভিযোগ অস্বীকার করে জানান যে, তারা বন্ধুরা নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করছিলেন। এক পর্যায়ে প্রক্টর তাকে দুই ছাত্রীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিলে তিনি তাদের কাছে ক্ষমা চান।
কিন্তু সেখানেই ইংরেজি বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী পারভেজকে হুমকি দিচ্ছিলেন। এরপর প্রক্টর অফিস থেকে বের হওয়ার পর একদল বহিরাগত এসে তাকে ছুরিকাঘাত করে। পরে এক ভিডিওতে দেখা যায় রক্তাক্ত পারভেজ পেটে হাত দিয়ে একটি চেয়ারে বসে আছেন আর কাছে থাকা কয়েকজন তারা সাড়া পাওয়ার চেষ্টা করছেন। রক্তাক্ত অবস্থাতেই তার সহপাঠীরা তাকে হাসপাতালে নিলেও চিকিৎসকরা জানান আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
Private University Students Alliance of Bangladesh - PUSAB পোস্ট থেকে অভিযুক্তদের বিবরন জানা গেছে।
পারভেজ হত্যাকাণ্ড ইনভেস্টিগেশন এক্সক্লুসিভ - জড়িত রয়েছে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ। অভিযুক্ত আসামীদের তথ্য ও রাজনৈতিক পরিচয় এবং হত্যাকাণ্ডে মূল অভিযুক্তদের বিবরনঃ
১। নাম : মাহাথির হাসান
ডিপার্টমেন্ট : ইংরেজি
প্রতিষ্ঠান : প্রাইম এশিয়া
রাজনৈতিক পরিচয় : সাংগঠনিক সম্পাদক কাপাসিয়া সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগ।
বাড়ি: গ্রাম : জুরিয়া, থানা কাপাসিয়া, জেলা : গাজীপুর।
অভিযোগ : মূল তিন জন অভিযুক্তের একজন, যে বহিরাগত এনে সন্ত্রাসী পারভেজকে হামলা করেছে।
২। নাম: মেহরাজ ইসলাম
ডিপার্টমেন্ট : বিবিএ
প্রতিষ্ঠান : প্রাইম এশিয়া
ঠিকানা : হাজারী বাড়ি, মহাখালী
অভিযোগ : মূল তিন জন অভিযুক্তের একজন, যে বহিরাগত সন্ত্রাসী এনে পারভেজকে হামলা করেছে। এবং তার বিরুদ্ধে পূর্বেও হত্যা মামলার অভিযোগ এসেছে।
৩। নাম: আবু জোহর পিয়াস
ডিপার্টমেন্ট : এলএলবি
প্রতিষ্ঠান : প্রাইম এশিয়া
ঠিকানা: মহাখালী আমতলী/কাঁচাবাজার।
অভিযোগ : মূল তিন জন অভিযুক্তের একজন, যে বহিরাগত সন্ত্রাসী এনে পারভেজকে হামলা করেছে।
৪। নাম: নাসিম হোসাইন
প্রতিষ্ঠান : বনানী মডেল স্কুল এন্ড কলেজ
নাসিম গ্যাং এর লিডার এবং
বনানী থানা ১১ নং ওয়ার্ড অন্তর্গত টিএনটি ইউনিট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
বাড়ি: কালিবাড়ি, চাদপুর
৫। নাম: ফাতেমা তাহসিন ঐশি
ডিপার্টমেন্ট : বিবিএ
ব্যাচ: ১৫
প্রতিষ্ঠান : ইউনিভার্সিটি অফ স্কলারস
অভিযোগ : জানা গেছে শুরুটা ঐশিকে দিয়েই হয়েছে। সে ভুল বোঝাবুঝির এক পর্যায়ে তার ছেলে বন্ধু পিয়াসকে ফোন দিয়ে নিয়ে আসে। এবং প্রাইম এশিয়ার প্রক্টর মিটমাটের পরও সে পারভেজকে থ্রেট দেয়।
ঠিকানা : ব্লক-অ, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা।
৬। নাম: টিনা
প্রতিষ্ঠান : ইউনিভার্সিটি অফ স্কলার্স
ঠিকানা ও বিস্তারিত জানা যায়নি, যতদূর জানা যায় ঐশির ফ্রেন্ড হিসাবে সে ঘটনাস্থলে ছিলো। এবং নাসিমের সহযোগী অজ্ঞাত নামা ১০-১৫ জন যুবককে হামলায় অংশ নিতে দেখা গেছে।
এছাড়া বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের বনানী থানা কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক, সোবহান নিয়াজ তুষারকে ঘটনার সময়ে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে। তার অবস্থান ও উদ্দেশ্য কী ছিলো তদন্তে এটি বের হয়ে আসবে।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।