এলাকায় সহজ-সরল হান্নান, ছিলেন না কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬:০৬
রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় প্রকাশ্যে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন মো. আব্দুল হান্নান (৪৩)। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায়। তবে ঢাকায় তার গ্রেপ্তারের খবরে হতবাক হয়েছেন এলাকাবাসী।
র্যাব জানায়, ঘটনার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ, সিসিটিভি ফুটেজ এবং অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর (ঢাকা মেট্রো-ল-৫৪-৬৩৭৫) শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে বিআরটিএর মাধ্যমে যাচাই করে মোটরসাইকেলটির মালিক হিসেবে মো. আব্দুল হান্নানের নাম পাওয়া যায়।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, রোববার (৪ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে আব্দুল হান্নানকে আটক করে র্যাব-২। আটক করার পর আজ সকালেই তাকে পল্টন থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
হান্নানের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, প্রায় ৪০ বছর আগে তার পিতার সঙ্গে মায়ের তালাক হয়। এরপর সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা এলাকার মধ্যপাড়ায় নানার বাড়িতে ছোট ভাই সোহেলকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন তার মা মোসা. ফুরকান বেগম। এলাকায় কাজ করে দুই ছেলেকে বড় করেন তিনি।
হান্নান ও তার ভাই প্রথমে এলাকায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। পরে ঢাকায় গিয়ে কন্ডাক্টরের কাজ শুরু করেন হান্নান এবং পরিবার নিয়ে সেখানেই বসবাস করেন। মাঝে মধ্যে কিংবা দুই ঈদে তিনি বাড়িতে আসতেন। সম্প্রতি মায়ের চোখের অপারেশনের জন্য তাকে ঢাকায় নিয়ে যান, এরপর থেকে তার মা-ও ঢাকায় বসবাস করছেন।
হান্নানের মামি শওকত আরা বলেন, “হান্নানের বাবা অনেক আগেই তার মাকে তালাক দিয়েছিল। পরে ছোট ছোট ছেলে নিয়ে এসে আমরা এখানেই মানুষ করেছি। গ্রামে কাজ করে তার মা সংসার চালিয়েছে। ঢাকায় থাকতে থাকতে হান্নান কন্ডাক্টরের কাজ শিখেছে। সে একটি হোন্ডা মোটরসাইকেল কিনেছিল এবং পরে তা বিক্রি করে দেয়। কিন্তু হোন্ডার নাম কাটানো হয়নি। এ কারণেই তাকে আটক করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত চাই।”
স্থানীয় বাসিন্দা তাজেমুল বলেন, “ছোটবেলায় হান্নানের বাবা-মা আলাদা হয়ে যায়। তার মা খুব কষ্ট করে তাকে বড় করেছে। এলাকায় হান্নান খুব ভালো ছেলে। কোনো ঝগড়া-বিবাদ বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সে জড়িত নয়।”
আরেক বাসিন্দা মোস্তফা বলেন, “হান্নান প্রায় ২০ বছর ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের লোকজন ঢাকায় নিয়ে গিয়ে কন্ডাক্টরের কাজ করত। তার বা তার নানার বংশের সঙ্গে কোনো ভিলেজ পলিটিক্স কিংবা রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা নেই।”
বাগডাঙ্গা সুন্দরপুর ইসলামিয়া হাফেজিয়া ও নূরানী মাদ্রাসার শিক্ষক গোলাম আরিফ বলেন, “আব্দুল হান্নান নিরীহ ছেলে। সে কোনো প্রকার অপরাধের সঙ্গে জড়িত নয়। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।”
সুন্দরপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. নুরুল ইসলাম বলেন, “হান্নান ঢাকায় কন্ডাক্টরের কাজ করে। ১০-১৫ বছর আগে সে ঢাকায় চলে যায়। সে ও তার পরিবার কোনো দল-পার্টির সঙ্গে যুক্ত নয়। বিষয়টি শুনে আমরা বিস্মিত।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. একরামুল হক বলেন, “আমরা বিষয়টি শুনেছি। তার বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।”
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।