রোজিনাকে আটকের কারণ জানালেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৮ মে ২০২১, ২২:০৯

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক

দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম করোনাভাইরাসের টিকা চুক্তি নথির ছবি তুলেছিলেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। মঙ্গলবার (১৮ মে) দুপুরে রাজধানীর শেরে বাংলানগরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এই কথা বলেন।

তিনি জানান, করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে কয়েকটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তির প্রক্রিয়া চলছে। সেই নথিপত্রের ছবি তুলেছিলেন সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম।

সেই নথি প্রকাশ হলে টিকা পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়তো এবং কয়েকটি দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট হতো বলে দাবি করেন তিনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেড় বছর ধরে করোনা নিয়ে কাজ করছি। টিকার সংকট দেখা দিয়েছে। সেই টিকা নিয়ে আমরা দিন-রাত পরিশ্রম করছি। চায়নার সঙ্গে, রাশিয়ার সঙ্গে, আমেরিকার সঙ্গে... চুক্তির পর্যায়ে চলে গেছি। নন ডিসক্লোজার সই করছি। সেই জিনিসগুলো যদি কেউ নিতে চায়, ডিসক্লোজ করতে চায়, তাহলে রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের ক্ষতি হয়ে যাবে। ওই রাষ্ট্র হয়ত আমাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কই রাখবে না। আমাদের টিকা পাওয়া তো দূরের কথা, আমাদের সম্পর্কই নষ্ট হয়ে যাবে।’

যে কক্ষে ওই ফাইলের কথা বলা হচ্ছে, সে কক্ষে কোনো সিসি টিভি ক্যামেরা ছিল না। সাংবাদিক রোজিনা বারবার বলছিলেন, তিনি ফাইল নেননি। তাহলে মন্ত্রণালয়ের কাছে রোজিনা ফাইল নিয়েছেন এমন কী প্রমাণ আছে, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘ওনার ফোনে ছবি আছে, এটাই প্রমাণ।‘

রোজিনা ওই কক্ষে কেন গিয়েছিলেন এমন প্রশ্ন ছুড়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যেখানে কনফিডেন্সিয়াল ফাইল আছে, সেখানে কেউ কাউকে জোর করে নিতে পারে? যদি না হয়ে থাকে তাহলে তা আইনগতভাবে প্রমাণ হয়ে যাবে।’

ঘটনার সময় রোজিনা ইসলাম নিজে জানিয়েছিলেন, তাকে ওই কক্ষে যেতে বলা হয়েছিল। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জাহিদ মালেক বলেন, ‘যেখানে রাষ্ট্রীয় ফাইল রাখা আছে, যতদূর আমি জানি সেখানে কেউ ছিল না। খালি রুম ছিল। খালি রুমের মধ্যে লোক ঢুকেছে। সেটা যদি কোনো ট্র্যাপে ফেলা হয়, কেউ যদি অন্যায় করে, সেটা তো সামনে বেরিয়ে আসবে। কেউ যদি অন্যায় করে থাকে তার যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে যদি কেউ কোনো রকমের অন্যায় করে থাকে, সেই অন্যায়ের ব্যবস্থা আমরা নেব।’

রোজিনাকে অতিরিক্ত সচিব গলা চেপে ধরেছিলেন, যার ভিডিও চিত্র ঘটনার সময়ই প্রকাশ পায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছিল কি না, উনি একজন সিনিয়র অফিসার, বলছেন, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত তো আমি করিনি। বরং আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে। আমি যখন তাকে আটকাতে চেষ্টা করেছি, আমার গায়ে খামচি দিয়েছে, আমাকে থাপ্পড় দিয়েছে। তার আধা ঘণ্টা পর পুলিশ চলে আসে। পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এই কথাটা ওনারা আমাকে বলছেন। এ বিষয় নিয়ে যখন আরও আলোচনা হবে, তখন সত্য বের হয়ে আসবে। কোনো নির্দোষ লোক সাজা পাক, সেটা আমরা চাই না।’

জামিন দিলে রোজিনা পালিয়ে যাবেন। আপনিও কি এমনটাই মনে করেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি আইনের বিষয়ে কিছু বলতে পারি না। আজ যে কোর্টে নিয়েছিল, সেখানে ঘটনাটা কী ঘটেছে, সেটাও আমি জানি না।’

উল্লেখ্য, সোমবার পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। সেখানে সরকারি নথি চুরির অভিযোগ এনে তাকে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রাখা হয়। রাত ৮টার দিকে লিখিত অভিযোগসহ শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে এই সাংবাদিককে তুলে দেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। পরে রাত ৯টার দিকে তাকে সচিবালয় থেকে শাহবাগ থানায় আনা হয়।

রাতেই স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব ডা. শিব্বির আহমেদ উসমানী বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। সাংবাদিক রোজিনার বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়া মোবাইল ফোনে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ নথির ছবি তোলা এবং আরও কিছু নথি লুকিয়ে রাখার অভিযোগ এনেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এনএফ৭১/২০২১




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top