বানিয়াচংয়ে ছেলে হত্যার অভিযোগ: লাশ গুমের চেষ্টা করেও ব্যর্থ পুলিশ
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:০১

বানিয়াচং (হবিগঞ্জ), ৫ আগস্ট — হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় ২২ বছর বয়সী তোফাজ্জুল হোসেনকে (পেশায় ফার্নিচার রঙ মিস্ত্রি) পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে এবং পরে লাশ গুম করার চেষ্টা করা হয় বলে এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবারের অভিযোগ। ছাত্র-জনতার তৎপরতায় পুলিশ লাশ গুম করতে ব্যর্থ হয়, বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
তোফাজ্জুল বানিয়াচং উপজেলা সদরের ৩ নম্বর দক্ষিণপূর্ব ইউনিয়নের জাতুকর্ণপাড়া গ্রামের সন্তান। তার বাবা আব্দুর রউফ একজন দরিদ্র কৃষক। চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে তোফাজ্জুল ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। সপ্তম শ্রেণি শেষ করার পর স্কুল ছেড়ে তিনি স্থানীয় বাজারে এক ফার্নিচার দোকানে কাজ শুরু করে হাতে-কলমে কাজ শিখে রঙ মিস্ত্রি হিসেবে দায়িত্বকালীন আয় করতেন — মাসে প্রায় ৩০–৪০ হাজার টাকা।
স্থানীয় সূত্র ও পরিবারবর্গের বর্ণনা অনুযায়ী, ৫ আগস্ট সকালে তিনি স্ত্রীকে লুঙ্গি কেনার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আন্দোলনে যোগ দেন। দুপুর ১২টার সময় বানিয়াচংয়ে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ শুরুর সময় থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হন তোফাজ্জুল। পরে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গুলি করার পর তাঁৎ-হিঁচড়ে থানার ভেতরে নিয়ে বুট দিয়ে আঘাত করে হত্যা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়; এরপর লাশ গোপনের পরিকল্পনা করা হলেও প্রতিবাদরত ছাত্র-জনতা ও গ্রামবাসীর তৎপরতায় তা সম্ভব হয়নি।
নিহতের মা হেনা বেগম জানান, “আমি তো আমার বুকের ধন হারিয়েছি। যত টাকা-ই দিক না কেন তোফাজ্জুলকে ফিরে পাব না। আমি আমার ছেলেকে নিয়ে গর্ব করি — আল্লাহ তাকে শহীদি মর্যাদা দান করুন।” নিহতের স্ত্রী শাহিনা আক্তার বলেন, স্বামীর সঙ্গে কাজ ফাঁকি দিয়ে তিনি আন্দোলনে যেতেন; তিনি বলেন, “দেশকে স্বৈরশাসনের কবল থেকে মুক্ত করতে মিছিল করা ছিল আমাদের লক্ষ্য। স্বামীর স্মৃতি রক্ষা করেই বাকি জীবন কাটাতে চাই। হাসিনার বিচার চাই।”
শাহিনা আক্তার বর্তমানে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন — তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চান বলে জানিয়েছেন। পরিবার জানায়, তোফাজ্জুল গ্রামে বিয়ে করেছিলেন; বিয়ের চল্লিশ দিনের মধ্যে তিনি নিহত হয়েছেন।
পুনরুদ্ধার ও আর্থিক সহায়তা সংক্রান্ত অভিযোগ অনুযায়ী, সরকারিভাবে ১০ লাখ টাকা এবং ‘জুলাই ফাউন্ডেশন’ এর পক্ষ থেকে ৫ লাখ টাকা পরিবারকে দেওয়া হয়েছে। পরিবার বলেছে, দেওয়া মোট টাকার ২৫% তোফাজ্জুলের স্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে এবং বাকি টাকা পরিবারের হাতে এসেছে — তবে আর টাকা দিয়ে মরে যাওয়া ছেলেকে ফিরিয়ে আনা যাবে না।
স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও ছাত্র-জনতা দাবি করেছেন, ঘটনাটির স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত এবং অভিযুক্তদের দ্রুত আইনি কর্য়বিবরণীর আওতায় আনা হোক। তারা হত্যাকাণ্ড ও লাশ গুমের চেষ্টার সঙ্গে জড়িত প্রাসঙ্গিক কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
সংক্ষিপ্ত প্রেক্ষাপট: তোফাজ্জুল দেশ-সমাজের প্রতি একনিষ্ঠতা দেখাতেন; আন্দোলনে অংশগ্রহণ এবং স্বাধীনতার কথাই তিনি প্রাধান্য দিতেন। পরিবারের উপার্জনক্ষম হিসেবে তার মৃত্যু ঘর-সংসারে বড় ধাক্কা দিয়েছে।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।