দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি
মহান বিজয় দিবস আজ
নিউজফ্ল্যাশ ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:০৩
মহান বিজয় দিবস আজ। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য ও বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন। ১৯৭১ সালে ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর কবল থেকে দেশ মুক্ত হয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দেশজুড়ে বিজয় দিবস উদ্যাপন করা হবে।
৩১ বার তোপধ্বনি, স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা
পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ঐতিহাসিক মুহূর্ত স্মরণে ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং এরপর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
এ ছাড়াও, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
পতাকা উত্তোলন ও আলোকসজ্জা
বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হয়েছে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন ও রঙিন পতাকায় সজ্জিত।
ফ্লাই-পাস্ট, ব্যান্ড শো ও গিনেস রেকর্ড
দেশব্যাপী জাঁকজমকপূর্ণ উদ্যাপনের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর পৃথক ফ্লাই-পাস্ট প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। একই স্থানে বিশেষ বিজয় দিবস ব্যান্ড শো আয়োজন করা হবে।
এদিন সকাল ১১টা ৪০ মিনিট থেকে ‘টিম বাংলাদেশ’-এর ৫৪ জন প্যারাট্রুপার স্বাধীনতার ৫৪ বছর উপলক্ষ্যে পতাকাবাহী স্কাইডাইভ প্রদর্শন করবেন। এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ পতাকা-প্যারাশুটিং প্রদর্শনী হিসেবে নতুন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড স্থাপনের লক্ষ্য রয়েছে। দেশের অন্যান্য শহরেও অনুরূপ ফ্লাই-পাস্ট ও পুলিশ, বিজিবি এবং আনসার বাহিনীর ব্যান্ড শো অনুষ্ঠিত হবে। সব আয়োজন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত।
জেলা-উপজেলায় মেলা ও শিক্ষা কার্যক্রম
বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় দেশের সকল জেলা ও উপজেলায় তিন দিনব্যাপী বিজয় মেলার আয়োজন করেছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আবৃত্তি, প্রবন্ধ রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।
সকাল ৯টায় বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল ৩টা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয় দিবসের গান পরিবেশন করা হবে। একই সময়ে দেশের ৬৪টি জেলায় নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা একযোগে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান পরিবেশন করবেন।
সাংস্কৃতিক আয়োজন ও প্রদর্শনী
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক তথ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করেছে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোও অনুরূপ কর্মসূচি গ্রহণ করবে।
ক্রীড়া আয়োজন ও সংবর্ধনা
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সুবিধাজনক সময়ে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ক্রীড়া অনুষ্ঠান, ফুটবল ম্যাচ, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, কাবাডি ও হাডুডু খেলা অনুষ্ঠিত হবে। বিকেলে রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেবেন। মহানগর, জেলা ও উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের জন্যও সংবর্ধনার আয়োজন থাকবে।
গণমাধ্যমে বিশেষ সম্প্রচার ও উন্মুক্ত আয়োজন
বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার এবং বেসরকারি টিভি ও রেডিও চ্যানেলগুলো মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসভিত্তিক বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। দেশের সিনেমাহলগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন এবং বিভিন্ন অডিটোরিয়াম ও উন্মুক্ত স্থানে তথ্যচিত্র দেখানো হবে।
সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত জাদুঘরগুলো সারাদিন বিনা টিকিটে উন্মুক্ত থাকবে। দেশের বিনোদন কেন্দ্রে শিশুদের জন্য বিনামূল্যে প্রবেশের ব্যবস্থা থাকবে। চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা ও পায়রা বন্দর, ঢাকা সদরঘাট, পাগলা ও বরিশালসহ বিআইডব্লিউটিসি জেটিতে সকাল ৯টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
বিশেষ প্রার্থনা ও মানবিক উদ্যোগ
শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত, আহত প্রবীণদের সুস্থতা এবং দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনায় মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হবে। দেশের হাসপাতাল, কারাগার, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, পথশিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র, প্রতিবন্ধী কল্যাণ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সুবিধাবঞ্চিতদের উন্নত খাবার পরিবেশন করা হবে।
সূত্র: বাসস
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।