শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২

গণমাধ্যমে আগুনের লেলিহান শিখা: কার স্বার্থে এই ধ্বংসযজ্ঞ?

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:০৭

সংগৃহীত

একটা পোড়া ল্যাপটপ বা ছাই হয়ে যাওয়া হার্ডড্রাইভের কি কোনো আদর্শ থাকে? গত বৃহস্পতিবার মাঝরাতে যখন কারওয়ান বাজারে আগুনের লেলিহান শিখা আকাশে উঠছিল, তখন কি শুধু নিউজপ্রিন্ট কাগজ পুড়ছিল? নাকি পুড়ছিল আমাদের গত চব্বিশের লড়াই থেকে পাওয়া সেই 'কথা বলার অধিকার'? যখন কলমকে আগুনের ভয় দেখানো হয়, তখন বুঝে নিতে হবে গণতন্ত্রের পালসটা বড্ড দুর্বল হয়ে পড়েছে।

ঘটনাটা শুরু হয়েছিল ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবরকে কেন্দ্র করে। শাহবাগ থেকে আসা একটি মিছিল রাত ১২টার দিকে প্রথম আলো কার্যালয়ে হামলা চালায়। পুলিশের সামনেই গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে একদল মানুষ। টেবিল-চেয়ার, কম্পিউটার আর গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র রাস্তায় বের করে এনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

কিন্তু তাণ্ডব সেখানেই থামেনি। মিছিলটি এরপর যায় ডেইলি স্টার কার্যালয়ে। সেখানে নিচতলায় আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় ভবনের ভেতরে আটকা পড়েন অন্তত ২০ জন সংবাদকর্মী। জীবন বাঁচাতে তারা যখন ছাদে আশ্রয় নিয়ে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছিলেন ফেসবুকে, তখন নিচে চলছিল লুটপাট আর ভাঙচুর। একজন সাংবাদিকের জীবনের সঞ্চয় ১০ লাখ টাকা পুড়ল, কারো বা কয়েক দশকের তোলা ছবির হার্ডড্রাইভ লুট হলো।

এখন প্রশ্ন হলো—প্রতিবাদ কি এভাবে করা যায়? ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড নিঃসন্দেহে একটি জঘন্য অপরাধ, পুরো দেশ তার বিচার চায়। কিন্তু সেই শোককে পুঁজি করে গণমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়া কি কোনোভাবেই যৌক্তিক? এই যে প্রবীণ সাংবাদিক নূরুল কবীরকে হেনস্তা করা হলো, এটা কি আমাদের সেই 'নতুন বাংলাদেশ' যা আমরা চেয়েছিলাম? নাকি এর আড়ালে কোনো সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী জল ঘোলা করার চেষ্টা করছে?

১০টি দেশ এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে, সিপিজেসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। প্রথম আলো আর ডেইলি স্টারের প্রকাশনা এখন বন্ধ। যে সংবাদপত্রের কাজ ছিল সরকারের ভুলগুলো তুলে ধরা, আজ তারাই যখন ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছে, তখন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমাদের ভাবার সময় এসেছে।

বিচার হোক দোষীদের, কিন্তু ভিন্নমতের কণ্ঠরোধ করতে এই আগুন কি কোনো সমাধান? আমরা কি একটি সহনশীল সমাজের দিকে এগুচ্ছি, নাকি আবারও সেই পুরনো ভয়ের সংস্কৃতিতে ফিরে যাচ্ছি? আপনার মতামত কী? কমেন্টে আমাদের জানান।

 



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top