শান্তি ও কল্যাণ কামনায় শেষ হল বিশ্ব ইজতেমা
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১৮:২০
গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে লাখো মানুষের অংশগ্রহণে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বিশ্ব ইজতেমা। মোনাজাতে বিশ্বের মুসলিমদের মধ্যে ঐক্য, কল্যাণ কামনা করা হয়েছে। রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টা ১৭ মিনিটে আখেরি মোনাজাত শুরু হয় এবং ১১টা ৪৩ মিনিটে শেষ হয়।
মোনাজাত শেষ আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে টঙ্গীর তুরাগ তীর ও ইজতেমা ময়দানের আশপাশ। মোনাজাতে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর হেদায়েত, সমৃদ্ধি, ইহকাল ও পরকালের নাজাত এবং দ্বীনের দাওয়াত সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার জন্য দোয়া করা হয়। এছাড়া আখেরি মোনাজাতে নিজের আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়।
রোববার ফজরের পরে হিন্দিতে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা মুফতি মাকসুদ। বাংলা তরজমা করেন মাওলানা আব্দুল্লাহ। বয়ানের পরেই হেদায়াতের কথা ও দোয়া পরিচালনা করেন ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলবীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ।
দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় ৫৬ দেশের ৬ হাজার ২৪৯ জন বিদেশি মেহমান অংশ নেন। এর মধ্যে আরবি ভাষাভাষীর ৪২৫ জন, ইংরেজি ভাষাভাষীর ২ হাজার ১২৪ জন, উর্দু ভাষাভাষীর ১ হাজার ৬৩০ জন এবং অন্যান্য ভাষাভাষীর ২ হাজার ৭০ জন।
এর আগে, শনিবার রাত থেকেই আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে টঙ্গীর তুরাগতীরে জড়ো হতে থাকেন মুসল্লিরা। অনেকেই মধ্যরাতে রওনা হয়ে ফজরের নামাজে অংশ নিয়েছেন। লাখ লাখ মুসল্লির মধ্যে ময়দানের আশপাশে অবস্থান নিয়েছেন নারীরাও।
আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে বিশেষ বাস ও ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া মোনাজাতে মুসল্লিদের বাড়তি চাপ সামাল দিতে বিশেষ ট্রাফিক পরিকল্পনা নেয় পুলিশ।
এদিকে, আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে রোববার ভোর থেকেই টঙ্গীর ইজতেমা অভিমুখে শুরু হয় মানুষের ঢল। শনিবার ১২টার পর থেকে ইজতেমা ময়দানগামী সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। ফলে মোনাজাতে অংশ নিতে ঢাকা, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলার লাখ লাখ মুসল্লি হেঁটে ইজতেমা স্থলে পৌঁছান।
অনেকে ইজতেমা ময়দানে গিয়ে আবার অনেকে ময়দানের আশে-পাশের রাস্তা, অলি-গলিতে পুরনো খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন সিট বিছিয়ে অবস্থান নেন। এছাড়াও পাশ্ববর্তী বাসা-বাড়ি-কলকারখানা-অফিস-দোকানের ছাদে, যানবাহনের ছাদে ও তুরাগ নদীতে নৌকায় মুসল্লিরা অবস্থান নেন। ইজতেমা ময়দান ও আশপাশ এলাকার যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই ছিল শুধু টুপি-পাঞ্জাবি পড়া মানুষ আর মানুষ।
মোনাজাতের সুবিধার জন্য গাড়ি প্রবেশ করতে না দেওয়ায় এতে ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থায় আশপাশ সড়কে অবস্থান নিয়েছেন অপেক্ষমাণ যাত্রীরা। তবে অনেকেই গাড়ির অপেক্ষা না করে পায়ে হেটে রওনা দিয়েছেন।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, মোনাজাত শেষে মুসল্লিদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের কারণে এবারও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলাদাভাবে। প্রথম পর্বে সাধারণভাবে মাওলানা জুবায়েরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের ‘শুরায়ে নিজাম’ পক্ষের ইজতেমা শেষ হয়েছে ৪ ফেব্রুয়ারি।
দ্বিতীয় পর্বে ভারতের সা’দ কান্ধলভীর অনুসারীদের ইজতেমা শুক্রবার শুরু হয়ে। রোববার তা আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।