৫৪ বছর ধরে একইস্থানে চলছে নামাজ ও পূজা
সুজন হাসান | প্রকাশিত: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১৬:৪৮
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে টাঙ্গাইলের নাগরপুরে। এই উপজেলার চৌধুরী বাড়ি এলাকায় ৫৪ বছর ধরে একই আঙিনায় পাশাপাশি মসজিদ-মন্দিরে দুই ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্মমতে নামাজ আদায় ও পূজা পালন করে আসছেন।
এ বছরও মসজিদের পাশেই মন্দিরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুর্গাপূজা। আজান ও নামাজের সময় বন্ধ থাকছে পূজার কার্যক্রম।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নাগরপুরের চৌধুরী বাড়িতে ৯২ বছর আগে ১৯৩২ সালের সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় উঝা ঠাকুর কেন্দ্রীয় দুর্গা মন্দির। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে এখানে চৌধুরী বাড়ি ক্লাব স্থাপিত হয়। ক্লাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিবছরই ধুমধামের সঙ্গে পালন করা হয় দুর্গাপূজা।
মন্দির প্রতিষ্ঠার প্রায় ৪০ বছর পর ১৯৭২ সালে একই আঙিনায় নির্মাণ করা হয় নাগরপুর চৌধুরী বাড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। একইস্থানে মসজিদ আর মন্দির নিয়ে কখনও দুই ধর্মের মানুষের মধ্যে আপত্তি ওঠেনি। এলাকার মানুষ মিলেমিশে নিজেদের ধর্ম পালন করছেন।
মন্দিরে চলছে পূজা-অর্চনা, উলুধ্বনি ও ঢাকের বাজনা। পূজারি ও দর্শনার্থীরা প্রতিমা দেখতে এবং পূজায় অংশ নিতে আসছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আজান শুরু হওয়ার আগেই ঢাকঢোল, মাইক ও বক্সের বাজনা বন্ধ করে দেয়া হয়। মসজিদ থেকে ভেসে আসে আজানের সুর। এরপর মুসুল্লিরা আসতে শুরু করেন মসজিদে। নামাজ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর আবার বেজে ওঠে মন্দিরের ঢাকঢোলের বাজনা।
লিপি চক্রবর্তী বলেন, আমরা ৫৪ বছর ধেরে এখানে পূজা করতেছি। পাশে মসজিদ ও মন্দির এতে আমাদের কোন সমস্যা হয় না। মুসলিম ধর্মের মানুষ আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে। আমরাও নামাজ ও আজানের সময় পূজা বন্ধ রাখি। যুগ যুগ এই সম্প্রীতি বজায় রয়েছে। হিন্দু-মুসলিম আমরা ভাই ভাই এক সাথে মিলেমিশে থাকি। কোনো দিন দুই ধর্মের মানুষদের মধ্যে কোনো বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি ভবিষ্যতেও আশা করি ঘটবে না।
স্থানীয় বাসিন্দা ও মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান সোহেল বলেন, আমি মসজিদ ও মন্দির জন্মের পর থেকেই দেখছি। সনাতন ধর্মের লোকজন এখানে পূজা করেন। এখানে কোন ভেদাভেদ নেই। আমরা তাদের সহযোগিতা করি। আমরা সব সময় লক্ষ্য রাখি যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়।
নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) দীপ ভৌমিক “একই আঙিনায় মসজিদ ও মন্দিরে নিজ-নিজ ধর্ম সামাজিক বজায় রেখে নামাজ ও পূজা পালন করে আসছে। এখানে সম্পীতির অন্যন্য উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে।” আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবসময়ই মনিটরিং করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম শানতু বলেন, “জেলায় প্রায় ১,১০০ মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিটি মণ্ডপে পুলিশ এবং আনসারের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি সেনাবাহিনীও দায়িত্ব পালন করছে। চৌধুরী বাড়ি এলাকায় মসজিদের পাশেই মন্দির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটিই হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির বাংলাদেশ।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।